পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবাই। বাস্তবিক মেয়েরা কি ভালো তাই ভাবি! ওদের মধ্যে খারাপও আছে জানি, নিজেই তার অনেক পরিচয় অনেক জায়গায় পাইনি কি আর ? কিন্তু ভালো যখন হয় ওরা তখন তার তুলনা পরিষদের মধ্যে খাঁজে পাওয়া যায় না। গৌরী, সপ্রভা, খাঁকু, কল্যাণী, অন্নপাণ—এদের প্রত্যেককে আমি জেনেচি-এরা দেবীর মত। কি যত্ন-আদর করত। সপ্রভা! তার কথা আজকাল সব্বদা মনে আসে। ভোলা কি যায় ? না তা সম্পভব ? এই তো জীবন! কল্যাণী ছোট মেয়ে অবিশ্যি। কিন্তু সে এরই মধ্যে মেয়েদের স্বাভাবিক সেবাপ্রবত্তি আয়ত্ত করে নিয়েছে। কদিন বড় যত্ন করলে। বাইরের ঘরটাতে টেবিল-ঢাকা পেতে পরিপাটি করে পান। সেজে, বিছানা করে কেমন করে রাখত! কাছে বসে গলাপ শনিতে চাইত। একদিন হঠাৎ 'চম্পক জাগো জাগো' গানটার এক কলি গাইতেই আমার শিলং-এর কথা মনে পড়ল। সেই ঈস্টারের ছটি, শিলং, কলেজের হোসেন্টলে আমায় নিমন্ত্রণ করেচে-সপ্রভার অসখি, তবও সে উঠে এল, আমি আমার রেডিওর নাটকটা পড়ব-জাজিজ না ঘন ঘন ঘরে ঢািকচে, বার হচ্চে—এমন সময় ওরা গ্রামোফোনে রেকড চাপালে, আমার মনের মধ্যে সত্যি কি যেন হয়ে গিয়েছিল। গানের প্রথম কলিটা, শনেই—“চম্পক জাগো জাগো'। কল্যাণীকে বল্লাম-গানটা শোনাও না। গানটা সে গাইল। আমি বসে বহন্দরের কোন পাইনবনের সর্বপ্ন দেখতে লাগলাম। সপ্রভা— পাইনবন, লিম শিলং-এর মেঘাবত শিখরদেশ। কল্যাণী ছেলেমানষে কিনা, বলচে-আপনি চলে গেলে আমি বিছানা বাইরের ঘর থেকে উঠিয়ে ফেলব। মন কেমন করে, আপনার জায়গায় সেবার ছোট মামাকেও শতে দিইনি—বলি, ছোট মামা ওঠ, অন্য জায়গায় গিয়ে শোও—এসব আমি তুলব। এই সময় গৌরীকে এনেছিলাম বারাকপরে ১৯১৮ সালে। কতকাল আগে। সেই বাঁশ-বাগানে নিভৃত সন্ধ্যা নামত, বর্ষার দিনে টিপ, টিপ বান্টি পড়ত, বেশ মনে আছে। ‘বানের জলে দেশ ভেসেছে, রাখাল ছেলে তুই কোথা” গানটা করতুম ইছামতী থেকে সন্নান করে উঠে সকালে । সময়ের দীঘ বীথিপথ বেয়ে কত এল কত গেল! গৌরী..১৯১৮ সালের আষাঢ় মাসের শেষে তাকে নিয়ে এলাম বারাকপাের। রজনী মামার সঙ্গে বসে তাসখেলা হরিপদ দাসের চন্ডীমণডপে। “বানের জলে দেশ ভেসেচে রাখাল ছেলে, তুই কোথা, রাঘব বোয়াল মাছের সাথে সখ-দঃখের কই কথা”—এই গানটা ছিল দিনরাত আমার মাখে। আমাদের পাড়ার ঘাট থেকে সকাল বেলা বর্ষা-সনাত ঝোপঝাপের পাশ দিয়ে আসতে (যে ঝোপ থেকে এ বছর সপ্রভার চিঠির জন্যে কত বনমল্লিকা তুলেছি এবং যে ঘাটটার নাম অনেক দিন পরে হয়েছিল বনসিমতলার ঘাট) ওই গানটা গাইতুম। তারপর সে সব দিন চলে গেল্প। অনেক মাস কেটে গেল। তারপর আবার বহর লোকের ভিড় গেল লেগে । কত লোক এল। তাদের কথা মনে হয়। আজ। এসেচে, কিন্তু ওদের মধ্যে চলে যায় নি। কেউ—আছে সবাই। অন্নপােণা আছে, সপ্ৰভা আছে, খকু আছে। অদ্ভুতভাবে এরা সব এসেছিল। যায়নি। কেউই। মন থেকে নয়, বার থেকেও নয়। ১৯৪o সালে তাই আজ ১৯১৮ সালের কথা ভাবচি। আজি সপ্রভার পত্ৰ কত ভালো মেয়ে সে, আজও মনে রেখেচে । আর বছরে এ সময়ে মনে বড় छूक। জীবনের মাঝে মাঝে এমন কতকগালি হষোক্তজবল, হাসি-অশ্র-ছলছল দিন Soo