পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মাষ্টমীর ছটিতে ঘাটশিলার বাড়িতে এসেচি। বাড়ি এসেই সাপ্রভার চিঠি পেলাম। কি ভাল মেয়ে ও, তাই ভাবি। Always a loyal friend-ভারি আনন্দ হয়েচে ওর চিঠি পেয়ে। পরদিন সকালে উঠে। কমলদের বাড়ি গেলাম-কমল মাছের সিঙাড়া * ও চা খাওয়ালে। বৈকালে বাঁধের পেছনে শালবনে দিব্যি সবজি ঘাসের ওপর গিয়ে বসলাম। ঘাসের ফল ফটেচে সাদা সাদা-রোদ রাঙা হয়ে আসচে, মিষ্টি শরতের রোদ-মনে পড়ল সপ্রভার কথা..ক’ত দরে আছে শিলং-এ, কি করচে এখন তাই ভাবি ৷ সবৰ্ণরেখার ওপরকার পাহাড়শ্রেণী বড় চমৎকার দেখাচ্চে। আর মনে হল খাকুর কথা, কল্যাণীর কথা। যাদের যাদের ভালবাসি, এ অপব্ব অপরাহে সকলের কথাই মনে �(v୭ । রাত্রে ভটচাজী সাহেবের বাড়ি সভা হল—বেীমা, উমা ওরাও গেল। অনেক রাত্রে আবার মোটরেই ফিরে এলাম। গত রবিবারে ঠিক এই বৈকালবেলা বারাকপরে—নদীর ধারে বনসিমলতার ঝোপের ছায়ায় বসে সপ্রভার চিঠি পড়চি, কালীও এসেচে। অনেকদিন পরে—ওর সঙ্গে গলপ করাচি-সে কথা মনে পড়ল। পরদিন সকালে উঠে আমি বাসাডেরা ম্যাঙগানিজ কোম্পানীর পথটা দিয়ে ফলডংরির পেছন দিয়ে দরের পাহাড়শ্রেণীর দিকে চললাম। মেঘান্ধকার সকাল, সজল হাওয়া বইচে, দ, ধারের বন সবজি হয়ে উঠেচে বর্ষায়, পাথরগলো কালো দেখাচ্চে গাছপালার তলায়। সেবার যেখানে ভিক্টোরিয়া দত্ত, আমি, নীরদবাব, সবৰ্ণা দেবী চা খেয়েছিলাম, সেই উচ্চ পাহাড়ের কাটিংটা দিয়ে বড় বড় গাছের তলা দিয়ে সোজা চললাম-দধারে কি নিবিড় বন, পাথরের সন্তাপ ছড়ানো, বড় একটা বটগাছ। এটা যেখানে নীচ হয়ে গেল, তার বাঁ দিকে একটা নিবিড় কুঞ্জবন ও লতাবিতান-বসবার ইচ্ছে থাকলেও বসতে পারলাম না, বেলা হয়ে গেল। একটা পাহাড়ী ঝর্ণা পার হয়ে (দধারে কি শোভা সেখানে !!) ওপারে গেলাম। বাঁ দিকে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা সড়িপথ ধরে কিছদরে গিয়েই দেখি সেই ঝর্ণাটা রাস্তা আটকেচে। আর না গিয়ে সেই ঝর্ণার ধারে যেখােন দিয়ে খাব তোড়ে জলটা বইচে কুলকুলা শব্দে-সেখানে জলে পা ডবিয়ে বসে রইলাম। সপ্রভার ও কল্যাণীর চিঠি দাখানা সেই ঘন বনের মধ্যে ঝর্ণার ধারে জনহীন অরণ্য প্রকৃতির নীরবতার মধ্যে বসে কতবার পড়ি। হাতীর ভয় করছিল বড়। এ সময় বনে হাতীর সময়। ব্যষ্টি এল-একটা পথিক লোক কাছে এসে বসল। ও বািল্ল-এখানে হাতীর ভয় নেই—তবে সকাল সকাল চলে যান বাবা। বরডির পথ দিয়ে ঘরে আবার সেই ঝর্ণাটা পার হয়ে চলে এলাম। একটা ছোট ফস মেয়ে কপালে সিদর দিয়েচে-আমি যেমন বললাম, “তোর নাম কি খাকি ?” অমনি ছটে পালাল। আমি কত কি গাছপালার মধ্যে দিয়ে গ্রাম পার হয়ে এসে ম্যাণ্ডগানিজ কোম্পানীর পথটা ধরলাম। বড় বন্টি পড়চে-ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ ঘরে ঘরে উড়চে পাহাড়ের চড়ায় নীল বনরেখাকে বেস্টন করে। বেলা দটাের সময় ঘাটশিলায় পৌঁছলামবৌমা ভাত নিয়ে বসে আছেন। আমি তাড়াতাড়ি বাঁধের জলে সন্নান সেরে এসে খেয়ে সকলকে উদ্ধার করলাম। দাপরে খাব ঘােমই। তুলসীবাব মোটর নিয়ে এসে ফিরে গেল। রাত্রে দ্বিজবাবর বাড়ি নিমন্ত্রণ। অমরবাব ও বাসার চাকর বিনোদ রাত ১২টায় নাগপাের প্যাসেঞ্জারে উঠিয়ে দিয়ে গেল। অনেককাল আগে এই সময় আমি আজমাবাদের কাছারীতে ছিলাম ভাগলপারে। SO6