পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীরদবাবার বাড়ির বটতলায় পাথরের ঠেস দিয়ে বসে কেবল সংপ্ৰভা, সপ্রভা-ও, কি ভাবেই ওর কথা! মনে হয়েছিল সেদিন। সেই দাপরের রোদে কালাজোর পাহাড়ের দিকে চেয়ে সম্প্রভা-খাঁরকু—এদের কথাই ভেবেচি। বনগাঁয়ে এসে খাব আমোদ করা গেল। আর বছরের মত এবারও প্রফােল্লদের বাড়িতে সাব্বজনীন পীজো দেখলাম। একদিন বারাকপরে গেলাম কল্যাণী ও নব্য -ওদের নিয়ে। বনসিমতলার ঘাটে ওরা সবাই বন সিমের ফল তুললে-গান করলে আমার বাড়ি বসে নদিদি, মেজখড়ীমার সামনে। তারপর ওরা হরিপদদার বাড়ি গেল। ফিরে এসেই সেদিন আবার বিজয়া সম্মেলন গেল প্ৰফল্লির বাড়ি। আজ বনগাঁ থেকে এলাম-রাত্রে চাটগাঁ যাবো ময়মনসিং হয়ে। কতকাল ধরে পশ্চিম যাই নিবারো-তেরো বছর আগে। কেবলই যাচ্চি, অথচ পর্ব দিকে। খৰকু আসে নি, যদিও আসবার কথা ছিল। এইমাত্র সকালের ট্রেনে চাটগাঁ থেকে এলাম। ১৯৩৭ সালের পরে আর যাই নি। রত্না দেবীর সবামী সমরবাব ওখানে মন্সেফ। রেণরা হয়তো শহরের বাড়িতে নেই ভেবে ওঁর ওখানে গিয়ে উঠলাম। প্রকান্ড সাততলা বাড়ি—অনেক দীর পয্যন্ত দেখা যায় সাততলার ওপর থেকে-কণফলির দশ্য অতি সন্দর দেখায়। পরদিন সকালে রেণদের বাড়ি গিয়ে দেখা করলাম। রেণ বল্লে—এইমাত্র আপনার কথা হচ্চিল। আমার হাতের নখ কেটে দিলে বসে বসে। কতক্ষণ ধরে কত গলপ হল। সপ্রভার কথা উঠল। ——খকুর কথা উঠল। আসবার দিন ভৈরববাজারে মেঘনা নদী পার হবার সময়ে ট্ৰেনে সপ্রভার কথা আমার কি ভীষণ ভাবেই মনে এসেছিল। যাবার দিন সব গ্রামের ছায়ায় সাপরি বনের ছায়ায় কল্যাণীকে কতবার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। পািব্ববঙ্গের মেয়েদের সঙ্গে আমার আলাপ কতকাল থেকে--সপ্রভা, সেবা, রেণ, কল্যাণী, মায়াসবাই পািব্ববঙ্গের মেয়ে। ওদের টানেই কতবার এখানে এলাম। সারাদিন কল্যাণী আর কল্যাণী. কত গ্রামে ওকে কলপনা করলাম--বিদ্যাময়ী কলেজের হোসেন্টল দেখে মনে হল এখানে ওরা ছিল। রত্না দেবীর সাততলায় একদিন গানের আসর হলকোজাগরী পণিমা সেদিন। গোপালবাবা গান গাইলে—কবীরের ও মীরা'র ভজন।। আমার মনে হল তাদের কথা, যারা আনন্দ চেয়েও পায় নি।--কিবা ক্ষদ্র ক্ষদ্র আনন্দ পেয়ে তাতেই খাঁশি হয়ে জীবন কাটিয়ে গেল। জাহ্নবী নাবন্দ্বীপে গিয়েছিল গঙ্গাসন্নান করতে, সেকথা-খাঁরকু ডাকবাংলোর ধারে বেড়াতে গিয়েছিল—কল্যাণীরা সেদিন ঘোড়ার গাড়ি করে বারাকপার বেড়াতে গিয়েছিল-সে সব কথা। চোখে যেন জল এসে পড়ে। আমি ছোটবেলা থেকে কত আনন্দই পেলাম--কিন্তু আমার পরিবারের আর কেউ অত আনন্দ কোনদিন কলপনাও করলে না। কক্সবাজারের তরণী বধ গাড়িতে যেচে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। আমি তাঁকে “মা” বলে ডাকলাম! পৰিব বঙ্গের মেয়ে ভিন্ন। এখানে কেউ আলাপ করত না। রেণ, কল্যাণী ও খকুর সঙ্গে একদিন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম। ওদের সীতাকুণড গ্রামে যে বাড়ি আছে, সেখানে গিয়ে উঠলাম। মধর মা বলে একজন ব্ৰাহ্মণ বিধবা আমাদের আদর-যত্ন করলেন। সপরির গাড়ির সাঁকো দিয়ে পার হয়ে রেণ ও আমি অতি কন্টে মধর মার বাড়ি গিয়ে পৌছই। আমি তামাক খাচ্চি হাকোয় (মধর মা সেজে দিল) দেখে রেণ।তো হেসেই অস্থির। বন্ধ তার ক্যামেরাতে সেই অবস্থায় আমার ফটো নিলে। আরও অনেক ফটো নেওয়া হল পাহাড়ে উঠবার পথে। রেণ কেবল বলে-আপনার জন্যে আমার ভয়। আমি বলি-আর কোন ভয় SOC দিনলিপি-৬/উৎকণা-৮