পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববর্ষের আজ প্রথম দিন। গত বর্ষে অনেক নতুন ঘটনা ঘটে গেল। সপ্রভার বিবাহ ও আমার বিবাহ তাদের মধ্যে দটি প্রধান ঘটনা। পবেরি জীবন একেবারে বদলে গিয়েচে । আজ বনগাঁ থেকে এলাম রাত নটার ট্রেনে। কাল বারাকপরে চড়ক দেখতে গিয়েছিলাম অনেক দিন পরে। আমি, গটকে ও নদ-তিনজনে যাই। অনেকদিন আগের মত চড়কতলায় কাদামাটি দেখলাম। শিবের জন্যে ধান ছড়ানো। বাড়ির পেছনে বাঁশতলায় বেড়াতে গিয়ে তেমনি শকিনো ফলের বীজের গন্ধ, পাখীর ডাক । তেমনি কোকিল ডাকচে-যেন গোটা জীবনটা সামনে পড়ে আছে মনে হল। বাবা ও মাও যেন আছেন । বাণ পরে সাহিত্য-সম্মেলনে ও-সপ্তাহে কল্যাণীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে একদিন ওরা মোটর নিয়ে রতিবাটি কয়লার খাদ দেখাতে নিয়ে গেল আমাদের। জীবনে এই প্রথম কয়লার খাদ দেখা হল ; বিভূতি মািখয্যেও সঙ্গে ছিল। ১লা বৈশাখ খাব ঝড়-বান্টি হয়ে গেল। আজ বনগাঁয়ে। দটি লোক হাটে গাছচাপা পড়ে মারা গেল। কচা মারা গিয়েচে, বারাকপরে গিয়ে সকলের মখে সে বিবরণ শািনলাম। বড়ই শোচনীয় মাতৃত্যু। কতদিন পরে আবার দেখলাম চড়ক-সেই কথাই বার বার মনে হচ্চে--এমন ধরণের লাঠি খেলা সেই দেখতুম, বাল্যকালে, আবার কতকাল পরে যেন মনে হল দেশে আমাদের ঘরবাড়ি ঠিক তেমনি আছে, তেমনি পক্ষী-কাকলী-মােখরিত, শকানো ফলের বীজের গন্ধামোদিত আমার বাল্য-দিনগলি। বাবা যেন এখনও বসে গান গাইচেন্ন আমাদের ঘরের দাওয়ায়—আবার কবে যাত্রা বসবে—সেই আনন্দে দিনরাত চোখে নেই "ঘম । তার অনেকদিন পরে, মনে আছে যোবার আমি ম্যাট্রিক দিই,- সেই শেষবার কাদামাটির সময় চড়কতলার রৌদ্রে ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকি, পরের বছর আসি নিথাড। ইয়ারে এসেছিলাম, কিন্তু সে কথা মনে নেই। আজি কত বছর পরে আবার এলম সেই কাদামাটি দেখতে। গ্রীল্ডেমর ছটির পরে স্কুল খালেচে। অনেক কিছল ঘটে গেল গ্রীল্ডেমর ছটিতে। দাডিজলিং গিয়েছিলাম। কল্যাণীকে নিয়ে- সেখানে অবজারভেটরি হিল থেকে নামচি --সপ্রভা ও সেবার সঙ্গে দেখা। সপ্রভার বাবাও ছিলেন। একদিন ওদের হোটেলে গিয়ে চা খাওয়া গেল। তারপর সেদিনই ঘাম থেকে আমি হোটে আসচি জলপাহাড় রোড হয়ে-দেখি নীচে থেকে কে ডাকাডাকি করাচে। চেয়ে দেখি সেবা ও বিপােল 'দাঁড়িয়ে। নেমে এলাম। কালিম্পং রোডের মোড়ে গাড়ির মধ্যে সপ্রভা বসে আছে। পান দিলে খেতে। গলপ করে তখনি জলাপাহাড় রোড ধরে চলে এলাম দাডিজলিং-এ। পথের দশ্য অপব্ব । কি হিমারণ্যের শোভা ! কত কি ফল ফটে রয়েচে। অনেক ফল তুলে আনলাম। কল্যাণীর জন্যে। M. S. M. আপিসে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা করলাম, সেদিন ট্রেনে যে সন্দেশ দিয়েছিল কড়াপাকের। কল্যাণী ধৰ্ম্মশালায় শয়ে আছে—তাকে নিয়ে গিয়ে উঠলাম। অকল্যান্ড রোডে। সেখান থেকে দাডিজলিং-এর দশ্য কি সন্দির দেখা যায়—বিশেষ করে আলো জৰালবার দশ্য। নামবার দিন তরাই-এর ঘন অন্ধকার অরণ্য ও অসংখ্য জলপ্রপাত আমার মনে পািব্ব-দম্পটি ܬܬܠ