পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বক্তৃতা আছে—তাহলেই হয়ে গেল। পজোর পরে ছেড়েই দেব স্কুল। অবকাশ ও অবসরে ভাল ভাবে লেখা যাবে। জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। ঘড়ি-ধরা সময় অনন্তকে কি করেই আটকেচেt বিশেবর ভান্ডারে লক্ষ লক্ষ বৎসরের সময় অতি তুচ্ছ-কিছই না-আমার মেসের ছোট্ট ঘরটিতে সাড়ে নটা যেই বাজল আমার হাতঘড়িতে-অমনি সময় গেল ফরিয়ে। আমি জীবনে অবকাশ ভোগ করতে চাই এবার—আর চাই বারাকপরে ছেলেবেলার মত বাস করতে দদিন। দেখি এসব সম্পভব হয়ে উঠবে কিনা! বনগাঁ যাই নি অনেকদিন। ও শক্রবারে যশোরে পণিমা-সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথের শোকসভা ছিল। মনোজ, মহীতোষদা, আমি ও নীরদবাব গিয়েছিলাম। আমি ও সরেন ডাক্তার উঠেছিলাম অবিশ্যি বনগাঁ থেকে। সভাতে কল্যাণীর যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার জবর হয়েছিল বলে নিয়ে যেতে পারি নি। সভার পরে মণি মজমিদারের বাড়ি আমরা আহারাদি করলাম ও গিরীনদার সঙ্গে দেখা করে রাত্রের মেলে কলকাতা ফিরি—তারপর আর বনগাঁ যাওয়া ঘটে নি। পজো এসে গিয়েচে। কলকাতা থেকে শক্রবার বনগাঁ থাকি মহালয়ার ছটিতে —পরের সোমবারে স্কুল হয়ে পড়জোর ছটি হয়ে যাবে। কল্যাণীকে নিয়ে ঘাটশিলা যাবার ইচ্ছে আছে। মনে আজ কেমন আনন্দ, এমন ধরণের অপব্ব আনন্দের দিন জীবনে কটাই বা আসে ? আজ পড়জোর আগে মহালয়ার ছটি। সোমবার একেবারে ছটি হচ্চে পজোর। অনেকদিন বনগাঁ যাই নি—আজ ও-বেলা যেতে পারব ভেবে অত্যন্ত আনন্দ হচে। গতকাল সকালে যশোর থেকে এসোচি সাহিত্য-সম্মেলন করে—বনগাঁ যখনই ট্ৰেনখানা গেল। তখনই যেন মনে হল নেমে পড়ি। অনেকদিন পরে ইছামতী দেখলাম সেদিন। এমন আনন্দের দিনে পেছনে যদি বহা নিরানন্দপণ দিন না থাকে, তবে এমন দিন কখনই হতে পারে না। নিরানন্দের কঠিন, ধসের মরভূমি পার না হয়ে এলে আনন্দের মবদ্বীপে পৌছনো যায় না—দস্যুবত্তি করে যে আনন্দ লািটতে আসবে—রোজ যারা আনন্দ খাঁজে বেড়ায়...আনন্দ খাঁজে বেড়ানোই যাদের পেশাতারা সত্যকার আনন্দ কি বস্তু-তার সন্ধান রাখে না। আনন্দের পেছনে আছে সংযম, ভোগের অভাব, আনন্দের দৈন্য-এসব অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলে এসে তবে প্রকৃত আনন্দ রসের সন্ধান মেলে। আমি জীবনে অনেকবার এ ধরনের আনন্দভরা দিনের আসবাদন করেচি— যেমন একদিন জাণ্ডিগপাড়ায়-যখন বিজয় জ্যোৎস্নারাত্রে একটা হেনাফলের ডাল হাতে নিয়ে দেখা করলে—তারপর ইসমাইল।পরে সেই অপব্ব আনন্দের দিন-অনেককাল পরে যখন কলকাতায় আসব সদরের হকুম পেলাম—সেই বাঁকে সিং, সেই দিগন্ত বিস্তীর্ণ কাশীবনের প্রান্তে আমাদের খড়ের কাছারী ঘর - এখনও চোখের সামনে দেখচি। অবকাশ পেলে ইসমাইলপির অঞ্চলে একবার যেতে হবে-এ বছরই যাব ভেবেচি৷ “পজার ছটি হল আজ-আজই বনগাঁ থেকে এসেচি-কল্যাণীর মনে দঃখ হয়েচে হয় তো। কাল সে বলেছিল, যাবেন না খয়রামারি বেড়াতে বিকেলে, কিছতে যাবেন না। যেতে নাহি দিব”—কিন্তু ও বলে ছোট মেয়ের মত জোর করে, আমি ওর কোন কথাই রাখি নে, ওর কথা ঠেলে জোর করে চলে যাই। ও আবার বলে তবও, বোঝে না যে ওর কথা রাখচি নে—অন্য মেয়ে হলে অভিমান করে আর বলে না। কিন্তু Na NaV