পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“আমোদ পেয়েছিলাম নোয়ামণিড লাইনে বেড়াতে যাবার দিন। গালাডিতে কোজাগরী ‘শেষরক্ষা” অভিনয় হল। তারপর ঘাটশিলার ভাটী চাজী সাহেবের বাড়িতে একদিন পার্টি উপলক্ষে আমরা নিমন্ত্রিত ছিলাম—সেদিনও খাব আনন্দ করা গেল। নোয়ামন্ডি যাবার দিন ভোররাত্রে নাগপাের প্যাসেঞ্জার ধরে মিতে ও আমি “ঘাটশিলা থেকে প্রথমে যাই টাটা। সেখান থেকে একখানা Special Train ধরে চাইবাসা। চাইবাসা বেশ সন্দর জায়গা-অনেক এ্যাকোসিয়া গাছ রাস্তার দাধারে। বাজারে বড় বড় আতা বিক্রি হচ্চে, আমরা দাতিন পয়সার আতা কিনে রাস্তার সাঁকোতে বসে পেট ভরে খেলাম--তারপর রেল লাইন ধরে স্টেশনে হাজির। ঝিনকিপানি সেন্টশনে থৈ থৈ করচে। মক্ত দিগন্ত—অমন মক্তরােপা ভুমিশ্ৰী আমি বড় ভালবাসি—বেশী দেখি নি। অমন দশ্য—এটা নিশ্চয়ই। কেন্দপোসি ছাড়িয়ে দাঁধারে বিজন অরণ্যভূমি, বনে সহস্র টগর (micallia champak) ফলের গাছ---আর শেফালী—কি একটা ফলের ঘন সগিন্ধে "ত্ৰিশ মাইল দীঘ রাস্তার প্রতি মহত্তটি রেলের কামরা আমোদ করে রেখেচে । নোয়ামন্ডি ছাড়িয়ে বন আরও বেশী—সত্যিই সে বনের শোভা ও গাম্পভীয্য মনে অন্য ভাব জাগায়--তা শােধ কমনীয় সৌন্দয্যের ভাব নয়—যা জাগায় বাংলাদেশের বনঝোপ, সে যেন চৌতালের ধ্রুপদ—মনে গম্ভীর ভাব জাগায়। ফিলোিমর অভিনেত্রীর হালকা প্রেমের মিনিট সদরের গান নয়-ফৈয়াজ খাঁর মালকোষ কিংবা পরিয়া। গাম্পভীয্য আছে, উদাত্ত ভাব জাগায়—অথচ মিন্টত্ব বলতে সাধারণতঃ লোকে যা বোঝে তা কম। যখন ফিরি। তখন চারিধারে লৌহ-প্রস্তরের ছড়াছড়ি দেখে ভগবান সম্পবন্ধে বড় একটা অদভুত ভােব মনে এসেছিল--পদার্থ, নক্ষত্র জগৎ, বিশোবর বিরাটত্ব প্রভৃতি নিয়ে। জগুগলের মাথায় পশ্চিম আকাশে শকতারা, মাঝ-আকাশে বহিস্পতি। রাত ১২টার ট্রেনে ঘাটশিলা এসে নােমলাম। তারপর আর একদিন গালডি যেতে হল নীরদবাবার গহপ্রবেশ উপলক্ষে। সেদিন মিতে, মিতের সত্ৰী, বৌমা, কল্যাণী সবাই গিয়েছিল। পাশপাতিবাবার স্ত্রীকে সেখানে দেখলাম। খাব খাওয়া-দাওয়া হল। আসবার আগের দিন সৌরীন মািখয্যের ভাইপো এসে বল্লে—ধারাগিরি আমরা যাব কি না। আমি ফলডংরি পাহাড়ের কোলে গালডি রোডের ধারে যে আম গাছ, ওখানে বসে রইলাম-- ছেলেটি এসে আমায় খবর দিলে। গাড়ি ঠিক হয়ে গেল । পরদিন সকালে আমরা তিনখানা গাড়ি করে সবাই মিলে (বোমা ও নট। তখন ওখানে নেই) রওনা হই। ধারাগিরির পথের শোভা, বিশেষতঃ পাশটার শোভা দেখে আমার দাডিজলিং অকল্যান্ড রোড়ের কথা মনে পড়ল। তবে অকল্যান্ড রোড শহরের মধ্যেআর এর চারিধারে শবাপদ অধ্যুষিত বিজন অরণ্যভূমি—এই যা পার্থক্য। সেখানে ঝণার ধারে বসে কল্যাণী যখন রান্না করচে-তখন আমি পথের দাবী” পডচি। ভাবতে আশচয্য লাগল যে গত ১৯২৬ সালে ভাগলপরে থাকতে সরেন গাঙ্গালীর পল্লী-ভবনে বসে আমি প্রথম ‘পথের দাবী’ পড়ি। সেও বিহারে, এবারও পড়লাম। বিহারে। তখন এও জানতুম না। আমায় আবার বিয়ে করতে হবে। জীবনের জটিল রহস্যের সন্ধান কে কবে দিতে পেরেচে ? খাওয়া-দাওয়ার পরে কল্যাণী, উমা, আমি ও সৌরীনবাবর ভাইপো পাহাড়ে উঠে ধারাগিরি ঝর্ণার ওপরের অংশে গিয়ে কতক্ষণ বসলাম। ফিরবার পথে শালবনে কি সন্দর জ্যোৎসনা উঠল! গত সোমবারে ওখান থেকে দাপরের ট্রেনে রওনা হয়ে মেসে এলম সন্ধ্যার সময় ॥ NSYNSW