পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-কুলকুল নদীজলের সঙ্গীত আমাদের কানে মধ্য বর্ষণ করলে। বন্য পিটালিরা, 'শিউলি-আরও কত কি বন্য ফল ফটেচে বনে। ধারাগিরি যাওয়ার পথে গ্রাম ঝর্ণার কাছে আমরা চা খাচ্চি বসে-এমন সময় নট আর সরেশ সাইকেলে করে এসে যোগ দিলে আমাদের সঙ্গে। তারপর ধারাগিরি পৌছে কল্যাণী, মিতের বৌ ওরা চড়ালে খিচড়ি—আমরা উঠলাম পাহাড়ে-মিতে ও আমি। ওপরের সেই দরোরোহ পথ ধরে আমরা গেলাম ধারাগিরির স্রোত ধরে আরও নিবিড় বনের মধ্যে। বড় বড় শাল, আম ও মোটা মোটা লতা—বন্য বিহঙ্গের কাকলি এখানে অপবর্ণ। মিতে একমনে শনতে লাগল। কত বন্য কুসমের সৌরভ—আর সব্বোপরি অসীম নিস্তব্ধতা। সোরঝর্ণার শিখা-নত্য-জ্যোৎস্নারাত্রে শিলাখন্ডে ময়র-ময়ারীর ন্যুত্যের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। বনদেবীরা বাস করেন এ বনে। এসে খিচড়ি খাওয়ার পকেবা ঝর্ণায় স্নান * সমাপন করি। তারপর খাওয়া সেরে গরর গাড়িতে রওনা। আবার সেই ঘাটটা সন্ধ্যার ছায়ায় অতিক্ৰম করি। ঘন বন নীচে, হাতী তাড়াবার জন্যে সস্থানে সস্থানে গাছের ওপরে মাচা। ভাত রোধে খাচ্চে বনের মধ্যে। আমরা আগে আগে-মিত্যেদের গাড়ি পেছনে। মিতে সকলের পেছনে হোটে আসচে। কল্যাণীর সঙেগ আমি আসচি। নট ও সরেশ সাইকেলে সবার পেছনে। দ্বিতীয় ঝর্ণা পার হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ক্ৰমে নক্ষত্র উঠল--ছায়াপথ জমা জমা করতে লাগল। এখানে ওখানে উলকা খসে পড়তে লাগল। রাত ন’টায় আমরা বাড়ি ফিরে ওবেলার রান্না খিচড়ি খাই । উমা ও শান্তি এবার যায় নি। মধ্যে আবার ঘাটশিলা গিয়েছিলাম। সাদা পাথরের সত্যািপটার ওপর বসে কল্যাণীকে নিয়ে গলপ করেছিলাম জ্যোৎসনারাত্রে। তবে এবার বিশেষ দীর কোথাও বেড়ানো হয় নি—মিতের সঙ্গে ফলডংরির নীচের বনটায় একদিন সন্ধ্যাবেলা গিয়ে বসেছিলাম। গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম বনগাঁ, বাড়ি বদল করে আমরা গিয়েচি বিনয়দার “বশ্যর নাট, মন্সেফ। যে বাসায় থাকত-সেই বাসাটায়। কাল রাত্রে শৈলজার “নন্দিনী’ বইখানা দেখে এলাম। বাঙালীর মনে যে কান্নার * ফোয়ারা যোগাতে পারবে, সেই হাততালি পাবে। এ ছবিখানাতেও অনেকদিন পরে পািনমিলনের প্যাঁচ কষে দশকের চোখে জল আনার যথেস্ট সাব্যবস্থা। তবে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েচে ছবিখানা, এটা বলতেই হবে। কথাবাতাও স্বাভাবিক। সরকৃতি ও আমি গিয়েছিলাম ‘রাপবাণীতে, শৈলজা আমাদের ফাস্ট ক্লাসে বসিয়ে দিলে, গলপ করলে অনেকক্ষণ কাছে বসে। ছবি ভাঙলে বাসে চলে এলাম। মিতে কাল বিকেলে এসেছিল, আজ ঘাটশিলা এতক্ষণ গিয়ে পৌছেচে। আজ কোন কাজ ছিল না, ওবেলা বসে বসে পরীক্ষার কাগজগলো দেখলাম স্কুলের (Class) ছেলেদের—তারপর রমাপ্রসনের বাড়ি বসে খাব আন্ডা দেওয়া গোল গৌর পালের সঙ্গে। স্কুল ও কলকাতা দিইই ছাড়ব শিগগির। যেখানে যা আগে আগে করতাম।--তা আর একবার ঝালিয়ে নিচ্চি। যেমন, আজ এবেলা গেলাম সাঁতরাগাছি ননীর বাড়ি, জন্তু নেই, তার মার সঙ্গে বার হয়ে গিয়েচে । ননীর কাছে বসে বসে ঘাটশিলা ও কল্যাণীর গলপ করলাম, ধারাগিরির বর্ণনা করলাম-মাস্টাের মশাইও ছিলেন। তিনি আবার কোথায় যাত্রা হচ্চে বলে উঠে চলে গেলেন—আমরা বসে অনেক রাত পৰ্যন্ত গলপ করি, কল্যাণীর চিঠি ওকে পড়িয়ে শোনাতে হল। ননী বড় প্রকৃতি--রাসিক, বল্লে-আমি ঘাটশিলা যাব বেড়াতে। আমি ওকে যেতে বলেচি। SRO