পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল বারাকপরে ফিরে এসেচি সাদীঘ নমাস পরে। আগের ডায়েরী লেখার পর দশ-এগারো মাস কেটে গিয়েচে। গত আষাঢ় মাসেই কল্যাণী অসখে পড়ে, ভাদ্র মাসে একটি কন্যাসন্তান হয়ে মারা যায়--তারপর কল্যাণী একটি সেরে উঠলে গত ১৫ই ভাদ্র ওকে নিয়ে যাই কোলাঘাটে শবশঙ্কুরবাড়ীতে। শবশীর মশায় তখন ছিলেন কোলাঘাটে, গত “পজার সময় যে ভীষণ ঝড় হয় সে সময় আমি তখন ওখানেই। তারপর ওঁরা চলে গেলেন ঝাড়গ্রামে, কল্যাণীও সঙ্গে গেল, সেখান থেকে - আমরা গেলাম ঘাটশিলা গত কাৰ্ত্তিক মাসে। এতদিন ওই অঞ্চলেই ছিলাম, কাল এসেচি এখানে। মঙ্গলবার দিন যখন গাড়ী এসেচে। খড়গপাের, তখন বাংলা দেশের ঘাসভরা মাঠ, টলটলে জলে ভিত্তি মেদিনীপর জেলার খাল বিল দেখে আমাদের ইছামতীর কথা মনে পড়লো। খড়গপর থেকে তখন সবে নাগপাের প্যাসেঞ্জার ছেড়েচে, কল্যাণী বলে উঠলো—“আজই চলো বারাকপাের। যাই, ইছামতী টানচে।” আমারও মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে তখন যশোর জেলার এই ক্ষদ্র পল্লী-গ্রামটির জন্যে। যত দেশ-বিদেশেই বেড়াই, যত পাহাড়-জঙ্গলের অপব্ব দশ্যই দেখি না। কেন, বাল্যের লীলাভূমি সেই ইছামতীর তীর যেমন মনকে দোলা দেয়-এমন কোথাও পেলাম না। আর। কিন্তু সেদিন আসা হোলো না, এই কদিন কাটলো কলকাতা ও ভাটপাড়ায়। তারপর কাল বনগাঁ হয়ে বাড়ী এসোঁচি কতকাল পরে। চোখ জড়িয়ে গেল বাংলার এই বন-ঝোপের কোমল শ্যামলতায়, তৃণভূমির সবজিত্বে, পাখীর অজস্র কলরোলে। সিং ভূমের রক্ষ, অনব্বর বক্ষ-বিরল মরদেশে এতকাল কাটিয়ে, যেখানে একটা সবজি গাছের জন্যে মনটা খাঁ খাঁ করে উঠতো, মনে আছে কাশিদার সেই বাঁধের ধারে খানিকটা সবাজ ঘাস দেখে ও সেদিন রাজবাড়ী যাবার পথে একজনদের বাড়ী একটা ঝাঁকড়া পত্রবহল বক্ষ দেখে অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম।-- সেই সব প্রস্তরময় ধসের অঞ্চল থেকে এসে এই পাখীর ডাক, এই গাছপালার প্রাচুর্য্য কি সন্দির লাগছে! যেন নতুন কোন দেশে এসে পড়েচি হঠাৎ, বাল্যের সেই মায়াময় বনভূমি আমার চোখের সামনে আবার নতুন হয়ে ফিরে এসেচে, সব হয়ে উঠেচে আজ আনন্দ-তীর্থের পণ্য বাতাস-সপশোঁ আনন্দময়, নতুন চোখে সব আবার দেখাচি নতুন করে। আজ ওবেলা ইছামতীতে নাইতে নেমে সে কি আনন্দ ! ও পারের সেই সাঁইবাবলা গাছটা, আর বছর আমি আর কল্যাণী নাইতে নেমে যে গাছটার ডালপালার মধ্যে আটকে-পড়া অস্ত-সায্যের রাঙা রোদের অপব্ব শ্ৰী মাধচোখে চেয়ে দেখতামসে গাছটা তেমনি আছে। তারপর বিকেলে নগেন খড়োর ছেলে ফচার সঙ্গে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে সেই নাবাল জমিটার ধারে নরম সবজি ঘাসের উপর বসে ভাবছিলাম গত মাৰ্চ মাসে দেখা মানভূমের সেই নাকটি-টাঁড় বনের কথা, মানভূমের বক্ষলতাহীন পথের কাঁকর ছড়ানো টাঁড়ের কথা, বামিয়াবার ফরেসেন্ট উনিশ শো। ফন্ট উচ পাহাড়ে সেই রাত্রিযাপনের কথা, চাইবাসাতে ভবানী সিং ফরেসটি অফিসারের বাড়ীয় বিস্তৃত কম্পাউন্ডে বসে। গত চৈত্র সংক্রান্তির অপরাহুে চা খেতে খেতে দরবত্তীর্ণ বরকেলা শৈলমালার আড়ালে সায্য অসন্ত যাওয়ার সে দশ্যের কথা-- মাঠাবর পাহাড়ে শালবনের মধ্যের উপেচ পথ দিয়ে কাঠ-কয়লা মাথায় করে বয়ে নামাচ্চে যে হো মেয়েরা, যাদের মজরী চারবার দােগ ম পথে ওঠানামা করলে মাত্ৰ সতেরো পয়সা, তাদের কথা —গত পণিমার আগের পণিমায় বহরাগড়া থেকে কেশর-দা রিজাভা (বাঁশের) ফরেস্ট দেখতে যাওয়া ও বগরাচোড়া গ্রামের সেই উড়িয়া ব্ৰাহ্মণ ও গ্রাম্য সবণ বাউড়ি দেবীর মন্দিরের পাশে সত্যুপীকৃত প্রাচীন পাথরের দেব-দেবীর হাত-পা ভাঙা মাত্তিগলির কথা। বাঘমান্ডী পাহাড়ের মাথায় সেদিন দাপরে আমি, সবোধ ও সিনহা। S)