পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাদেব রায়কে নিয়ে গেলাম শ্ৰীমতী বাণী রায়ের বাড়ী। চা খেয়ে কত গল্প। বেশ ভাল বেলফল ফটেছিল, তুলে দিলেন ওঁরা। ওঁর মা সলেখিকা গিরিবালা দেখানা বই উপহার দিলেন। মহাদেববাবার সঙ্গে পরী যাওয়ার সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। ৬ই মে রওনা হবো &gt (QG3s রোজ নদীর কালো জলে গিয়ে সন্ধ্যায় নামি। কালও কুঠীর মাঠ বেড়িয়ে এসে সন্ধ্যায় সন্নান করতে নামালাম আমরা দশজনে। রাঙা মেঘ করেচে। সারা আকাশময়, ওপারের সাইবাবলা গাছটার ফাঁকে ফাঁকে রাঙা আলো যেন আটকে আছে। কি কালো জল। ভগবান যেন অত্যন্ত শান্ত রূপ ধরে আছেন-যেমন তাঁর অত্যন্ত অপরাপ মাত্তি দেখেছিলাম সেদিন নীতিডাঙার মর্যাগাঙের ধারে বসে। পাশে নতিডাওগার প্রকান্ড বটগাছটা, ওপারে আরামডাঙ্গার মাঠে আউশ ধানের কচি সবজি জাওলা ও খেজর গাছের সারি। সাদা সাদা বক চরচে ঘন সবজ কচারিপানার দামে। এ জগতে যেন যন্ধে নেই, অশান্তি নেই, চালের দোকানের দীঘ শ্রেণী নেই, উড়ন্ত এরোপ্লেন থেকে বোমাবর্ষণ নেই। আমি কুড়োনো এ সময় একটা আনন্দের ব্যাপার। আজ সকালে নদীর ধারে যাচ্চি, * তেতুিলতলী আম গাছটার তলায় দেখি হাজারী জেলেনী আম কুড়চ্চে। আমি যেতে না যেতে খপ করে একটা আমি তুলে নিলে তলা থেকে। তখনও ভাল করে ভোর হয়নি। পাগলা জেলের মা আর হাজারী জেলেনী এই দজন আম কুড়বার উদ্বেগে বোধ হয় রাত্রে ঘামোয় নয়—নইলে অত সকালে ওঠে কি করে ? সেদিন পাগলা জেলের মা ওর বাড়ি থেকে একটা পাকা আম আমায় দিয়ে গিয়েছিল। এইমাত্র একটা মশা মারলাম। আজ কল্যাণীকে নিয়ে ফীচ, হর, বধো প্রভৃতি ছোট ছোট ছেলেরা নৌকো নিয়ে বেড়াতে গেল বিকেলে, আমিও সঙ্গে গেলাম। অনেক দিন ওপারে। যাইনি--মাঠ ছাড়িয়ে যে একটা পথ আছে, সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। সেই পথ পয্যন্ত গিয়ে একটা নিমগাছ থেকে ডাল ভেঙে নেওয়া হোল দাঁতনের জন্যে। আমি নিজে নৌকো বেয়ে *ঘাটে ভিড়িয়ে দিলাম—যেমন "ও-বেলা তেতুলতলা থেকে সাঁতার দিয়ে এসেছিলাম আমাদের ঘাটে। জলে নামলিম দরজনে, জল খাব বেড়েচে। আর বর্ষার আকাশে মেঘের দশা অদভুত। সেই সাঁইবাবলা গাছটার ডালে ডালে রাঙা আলো। দেখে একটা অনাপ্রেরণা মনে জাগলো-বিশেবর মহাশিলপীর পরিকলপনার মহনীয়তা আমার চোখের সামনে সপরিস্ফাট। নীল আকাশের দেবতার উদ্দেশে প্রার্থনা করি—এই পটভূমি নিয়ে এদেশের একখানা Epic উপন্যাস লিখবো। আমি। নীল কুঠীর পল থেকে শর করবো। গত ৫ ৬ দিন ভীষণ বর্ষার পর আজ প্রথম রোদ উঠেচে। এখনও অনেক আমতেতুলতলীতে আমি কুড়াই রোজ। গাছতলায় পাকা আম কুড়ই। আজ ভোরে মািখ ধয়ে ফিরচি নদীর ঘাট থেকে, বাঁশতলীর একটি টকটকে আমি টপ করে পড়লো আমার সামনে-কুড়িয়ে নিয়ে এলাম। কল্যাণী সেটি লক্ষীকে দিলে। বিকেলে শ্যামাচরণ দা’র ছেলে হার বল্লে, নৌকোয় বেড়াতে যাবেন না ? আমি তখন bবেরিয়ে গিয়েছি। বাঁশ-বাগানের পথে গাব গাছটার কাছে। অনেকদিন যাইনি নৌকোতে