পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

--কেবল যা গিয়েছিলাম কাল না। পরশ। নলে জেলের নৌকো ছাড়া হোল। বেশ মেঘমাক্ত বিকেলটি, না। গরম, না ঠান্ডা। দধারে দীর্ঘ দীর্ঘ নলখাগড়ার শ্যামল সবজি ঝোপ, ছোয়ারা লতা, বনোেবড়ো গাছের সারি, জলজ ঘাসের ঝোপ-সবজি, সবজি, এত সবজও আছে। এদেশে ; সবীজ। সৌন্দয্যের ফলঝরি যেন চারিধারে। ক্ৰমে কুঠী ছাড়িয়ে গেল। নীলকুঠী এখন আর নেই, ভাঙা হাউজ ঘর আছে—এমন ঘন বন সেখানে যে দিনমানেই বাঘ লকিয়ে থাকে। ঐ সেই ঝিনকের সন্তাপ নদীর ধারটাতে, গত ফালগন মাসে ছেলেরা ঝিনােক তুলেচে-তারা পচা গন্ধ আকাশ বাতাস ভরিয়েছে, কাছে যাওয়া যায় না। কুঠী ছাড়ালম, আবার নদীর দােপারে ঘন সবজি উলবিন, জলের পাড়ে জলজ ঘাস ও বন্যেবড়োর গাছ, উচ্ছে পটলের ক্ষেত, কুমড়োর ক্ষেত-শালত সন্তব্ধ পল্লীশ্ৰী, এতদিন ছোটনাগপরের উষর কাঁকর ও পাথরের দেশে বাস করে এসে চোখ জড়িয়ে গেল, মন জড়িয়ে গেল। সবাইপরের কাছে এসে ইছামতীর তীরের সৌন্দৰ্য্য আরও রহস্যময় হয়ে উঠলো। যেন তীরভূমির এই প্রাচীন অশবখ গাছটা, ওই প্রাচীন ষাঁড়া গাছগালো আমায় চেনে আমার বাল্যকাল থেকে, যেন এখনি বলবে—এই দ্যাখো সেই খোকা কত বড় হয়েচে ! সবাইপরের বাঁক ছাড়িয়ে অদরে কাঁচিকাটার খেয়ায় কারা পার হচ্চে। একটি ছোকরা, সঙ্গে একটি প্রৌঢ়া, দটি ছেলেমেয়ে, একখানা সাইকেল। ছোকরা বল্লে, আশর হাটে তাদের বাড়ী। পাশেই মরগাঙের খাল, বহদিন পরে ঢািকলাম নৌকো করে এই খালের মধ্যে। ছোট একটা বাঁশের পলের তলা দিয়ে বা ধারে আরামডাঙার বাঁশবন খেজর বাগানের তলা দিয়ে ঐ গ্রামের একটা ঘাটে পৌছই। ছোট খালের এই ঘাটটি ঠিক যেন একটি ছবি। ছায়ানিবিড় সিনপদ্ধ অপরাহু, নীল-আকাশ, ঘন সবজি জলজ ঘাস ও দািব্বাস্তৃত তৃণ-ক্ষেত্ৰ-সামনে কতকগালি প্রাচীন গাছের আধা অন্ধকার তলায় একটা পরোনো ইটের দরগা। কত কাল এদিকে আসিনি, আমারই গ্রামের পেছনে আরামডাঙার এই ঘাট কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না-হয়তো কখনো আসিই নিঅথচ কোথায় লিপদারায় সেই বন্য সরোবর, ভালকীর সেই ঘন অরণ্য, মানভূমের মাঠাবার শৈলশ্রেণী, বামিয়াবার ও চিটিমিটি, রাঁচির পথে হিনি জলপ্রপাত ও পোড়াহাট রিজাভা ফরেস্ট। কোথায় দিল্লী, কোথায় আগ্রা, কোথায় চাটগাঁ, কোথায় শিলং, দাডিজলিং কোথায় না গিয়েচি! অথচ জীবনে কখনো আসিনি আমার গ্রাম থেকে মাত্ৰ দ মাইল দীর আরামডাঙার এই ছবিটির-মত সন্দর, তীরতর-শ্রেণীর নিবিড় ছায়াতলে অবস্থিত প্রাচীন পীরের দরগা ও ছোট ঘাটটিতে। একটা বড় শিউলি, গাছ, আমগাছ, বড় এক ঝাড় জাওয়া বাঁশ ওপারের, সামনে ছোট খালের ঘাটটি-হাত দশ-বারো চওড়া মরগাঙের খালের এপারেই বিষা-সতেজ উলবিন, দর বিস্তৃত মাঠ বেলেডাঙার সীমানায় মিশে গিয়েচে। সৰ্যস্তের রাঙা রঙ, আকাশে । পরদিন বিকেলে গেলাম আরামডাঙার এপারে ‘কলাতলার দোয়াতে। নতিডাঙার বড় বটগাছটা ছাড়িয়ে ওপথে কতদার গেলাম। এ পথে কত কাল আসিনি। ডাঁশাখেজর তলা বিছিয়ে পড়ে আছে পথের ধারে খেজর গাছের। মোল্লাহাটির পথে শধই ঝরি নামানো প্রাচীন বটের ছায়া, ঘন পত্রপল্লবের আড়ালে পড়ন্ত বেলায় व-कथा-क९3 ७ाकC5। আজ নৌকোয় বেড়াতে গিয়েছিলাম। একেবারে মাধবপর। অনেককাল আগে এই রকমই নৌকোয় বেড়াচ্ছিলাম। আমি আর ভরত। বহকাল আগে আমার বাল্যকালে,-