পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি ছাড়া যেন আর দ্বিতীয় মানষে নেই, সমস্ত পথিবী আমার, গোটা তারাভৱা আকাশটা আমার। অলস স্বপনাতুর মনের অবকাশ-ভরা এক-একটি দিন, এক-একটি জ্যোৎস্নালোকিত সন্ধ্যা, যেন সহস্ৰ সহস্ৰ বৰ্ষজীবী কোনো দেবতার জীবনে একএকটি পল বিপল। অন্য সময়ে সেখানে কখনো যাইনি, যে তুম শােধ সন্ধ্যাবেলা—যখন সে পথে লোক চলাফেরা করতো না, মানষিজনের কন্ঠস্বর কোনোদিকে শোনা যেতো না। একদিন সেখানে বসে আছি, এমন সময়ে পথের দিকে কাদের কথাবাত্তা শোনা গেল। চেয়ে দেখি কয়েকজন লোক লগঠন জেবলে এইদিকেই আসচে। তাদের হাতে বড় বড় লাঠি। আমাকে দেখে বিস্ময়ের সরে বললে-এখানে কি করেন। বাব এত রাত্রে ? আমি বললাম—এই বসে আছি। তারা দস্তুরমত অবাক হয়ে গেল। বললে—এখানে একা বসে আছেন। বাড়ি কোথায় বাবর ? -3GKNO—আমরাও তাই ভেবেচি বিদেশী লোক । -दिका दक् िऊ ? --বাবা, এখানকার কোনো লোক এখানে এই সময় একা বসে থাকবে ? বিদেশী লোক আপনি, কিছই জানেন না, তাই দিব্যি বসে আছেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বড় বাঘের ভয়। বিশেষ করে এই যে ঝরনার ধারে আপনি বসে আছেন, সন্ধ্যার পরে বাঘে এখানে জল খেতে নামে। প্রতি বছর দ-তিনটি মানষেকে বাঘে নিয়ে থাকে চন্দ্রনাথে। আপনি এখন আমাদের সঙ্গে চলন —কোথায় যাবেন আপনারা ? —আমরা চন্দ্রনাথের মন্দিরে আরতি করতে যাচ্ছি, এই দেখােন আমরা চারজন লোকে আলো নিয়ে লাঠি নিয়ে যাচ্চি-রাত্রে ফিরবো না। সকালে পাহাড় থেকে নেমে আসবো-আপনিও চলন, একা গাঁয়ে যাবেন না। এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। বন পাহাড়ের নৈশ সৌন্দয্য উপভোগ করবার। এ সংযোগ কি ছাড়া যায়! তবে আমি ওদের বললাম, যাঁর বাড়ি উঠোঁচ, সন্ধ্যার পরে না ফিরলে তিনি খব ভাববেন। তারা বললে—আপনার কোনো "বিপদ ঘটলে তাঁকে আরও বেশি ভাবতে হবে, আপনি চলন। ওদের সঙ্গে উঠতে উঠতে একবার পিছনে ফিরে চেয়ে দেখলাম-দরের জ্যোৎস্নালোকে অতি অস্পষ্ট দেখা যায়, সমদ্র বলে মনে হয় না, সমদ্র হতে পারে, মাঠও হতে পারে। সেই বিশাল বনস্পতিদের তলা দিয়ে পথ, জ্যোৎস্নার আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি, রীতিমত অন্ধকার। আর, কি জোনাকির মেলা ! অন্ধকারে বনের মধ্যে জোনাকির এমন ঘোরাফেরা এমন ওঠানামা, এমন মেলা আর কখনও দেখোঁচি বলে মনে হয় না। লক্ষ লক্ষ জোনাকির সে কি বিচিত্র সমারোহ! আরণ্য প্রকৃতিকে যিনি ভালোবাসেন, তিনি এই ধরনের অন্ধকার রাত্রে গভীর বনের মধ্যে গিয়ে যদি অরণ্যের নৈশরাপ না দেখে থাকেন, তবে তিনি একটি অদ্ভুত সৌন্দৰ্য্যময় অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত আছেন জীবনে। বড় বড় গাছের গাড়ি অন্ধকারে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে, মাথার ওপর শাখাপ্রশাখার অন্ধকার চন্দ্রতাপ, মাঝে মাঝে এক-আধটা ফাঁক দিয়ে আকাশ চোখে পড়ে। সে আকাশকে ঠিক তারা-ভরা বলা চলে না, কারণ, জ্যোৎস্নালোকে নক্ষত্রের ভিড় অনেক পাতলা হয়ে

  • 8やり