পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেলাম মন্দির দেখতে। গজেনবাবর মা সেখানে উপস্থিত, তিনি বল্লেন, রত্নবেদী দেখবার দেরি আছে একট, বৌমাকে নিয়ে একটা বোসো। একটি সাধ, ভাগবত পাঠ করচেন, সেখানে খানিকটা বসি। তারপর মন্দিরের সব দিক ঘরে ঘরে দেখলাম বেলা বারোটা পৰ্যন্ত। মন্দির তো নয়, পাহাড়। ঐ আবার সেই কথা মনে পড়েপ্রাচীন দিনের ভারতবষী সেখানে যেন অচল হয়ে বাঁধা পড়েছে পাথরের বাঁধনে । গগনচম্পবী গম্ভীরা কি অসাধারণ শক্তি ও বিরাটত্বের পরিচয় দিচ্ছে! জগমোহনের কি গঠনভঙ্গি! নাটমন্দিরের সরল ও সহজ সাথাপত্যের মধ্যে একটি সখ্য ভাব জড়ানো। ভোগগাহের সামনে সেই সপ্তম্ভ বৰ্ত্তমান আজও, যে সন্তাভটিতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্ৰীচৈতন্য প্রতিদিন জগন্নাথ দৰ্শন করতেন। পাণডারা এক জায়গায় তাঁর হাতের আঙলের ছাপ দেখায়—আমার বিশ্ববাস হোল না যে সে তাঁর আঙলের ছাপ-আর দেখালেই বা কি। শ্ৰীচৈতন্য এসেছিলেন অধ্যাত্ম বিষয়ে পথ দেখাতে, ধৰ্ম্ম-উপদেশ দিতে। তাঁর প্রচারিত নামধন্মের মাহাত্ম্য যদি কেউ ভাল না বোঝে, তবে তাঁর হাতের আঙলের ছাপ দেখে সে কোন সবগে যাবে ? মন্দির দেখতে বেজে গেল সাড়ে বারোটা। কিছ কিছ মিন্টান্ন ভোগ কিনে উমার জন্যে বাড়ী আনা গেল। ভোগ আসতে দেরি হয়, আজও হোল-বেলা সাড়ে চারটার '233 (टा? ५eीक । আজ সমদ্রের উত্তাল রােপ। ঝড়বভিট কেটে গিয়ে আকাশ পরিস্কার হয়েচে, সনীল সমদ্ৰ যেন নিজের আনন্দে নিজে মত্ত হয়ে বড় বড় ঢেউ তুলে কলে আছড়ে আছড়ে পড়চে। দীঘ টানা ঢেউয়ের রাশি মাথায় সাদা ফেনার পাঞ্জ নিয়ে বহন্দরেব্যাপী একটি রেখার সন্টি করেচে। দােপরেবেলায় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সমদ্রের সে রােপ দর্শন করলাম। সমথবাব এসে বল্লেী, চলন চা খেয়ে আসি আর সস্তায় জাতো নিয়ে আসি মচিপাড়া থেকে। ওর সঙ্গে বেরিয়ে হঠাৎ আবার সমদ্রের সঙ্গে দেখা। আর আমি যেতে পারলাম না কোথাও। অবাক হয়ে চেয়ে বসে পড়লাম। কি বিরাটত্বের আভাস ওই দীরবিসপী নীল রাপের মধ্যে, উৰ্ম্মিমালার সফেন আকুলতায়, তটরেখার বিলীয়মান শ্যামলিমায়। স্থলভূমির শেষ হয়ে গেল এখানে, দক্ষিণ মেরা পৰ্যন্ত বিস্তৃত এই নীলাম্ববােরাশির ওপার নেই, আবার এপারে এই এসিয়া মহাদেশের উত্তর প্রান্ত, ইনিসে ও লেনা নদীর মােখ। অবিশ্যি দক্ষিণ মের, মহাদেশের তুষারাবাত নিজজন ভূভাগের কথা তুলচি নৈ এখানে। নলিয়ারা সেই বিক্ষব্ধ বীচিমালা পার হয়ে ডিঙিতে মাছ ধরে আনাচে-একটা Sword fish দেখলাম আনচে-প্ৰকাশড করাতখানা কাক কথক করাচে ৷ মচিপাড়ার জাতো দেখতে গিয়ে একটা দোকানে বসে সবাই গলপ করাচি। একটি পথচলতি লোক এসে হাঁ করে মাখের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ দেখি সে গালাডির সেই হরিপদ ডাক্তার। অনেকদিন পরে দেখে খাব খাশি হই। বল্লে-বেড়িয়ে বেড়িয়েই জীবনটাকে নষ্ট করলাম বিভূতিবাব। সন্ধ্যাবেলা আমার এখানে আডা বসলো—অনেকগালি ভদ্রলোক এলেন আন্ডা ‘দিতে-যদ মল্লিকের পৌত্র বন্দোবন মল্লিক প্রভৃতি। জ্যোৎস্নারাত্রে আবার সমদ্রের ধারে গিয়ে কতক্ষণ গলপগজব করি। সন্ধ্যায় আজ বীরেন রায়, বন্দোবন মল্লিক, গজেনবাব, সমথ ঘোষ প্রভৃতির সঙ্গে চক্ৰতীৰ্থে সমদ্রতীরে বালির ওপর গিয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম। দাবাদশীর জ্যোৎস্না ‘সমদ্রের উপর পড়ে তার তরঙ্গরাজির রােপ বদলে দিয়েচে, ধম ধম নিজজন বালচরের “গায়ে আছড়ে এসে পড়চে উলিমমালা-চৈতন্যদেব চক্ৰতীর্থে সমদ্রের এই রােপ দেখেই nNq