পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোট পাতাওয়ালা ভ্যাদলা-ঘাস হয়েচে, যেন সবজি মখমলের আসন বিছানো, মাথার ওপর নত হয়ে আছে, পেয়ারা ডালটি। সরেনদের বাড়ীর পেছনে আর একটা ঝোপে। বনকািলমী ফটেচে দেখে সেদিন আমি আর চোখ ফেরাতে পারিনে। বিশবশিলপীর এই অপব্ব সন্টির ও সৌন্দয্যের প্রকাশ মনের গভীর অন্তস্তলে সচেতন ভাবে গ্রহণ যে করতে পারে, এ পথিবী, ফলাফল, নীল আকাশ, উদার ভূমিশ্ৰী তার কাছে আপনরাপে ধরা দেয়। কাল কলকাতা গিয়েছিলাম—সকালে গিয়ে রাত নটায় ফিরি। আজ ক'দিন থেকেই আমাদের ঘাটে নাইতে গিয়ে সাঁতার দিয়ে চলে যাই, কুলে কুলে ভরা নদীর ধারে বনঝোপ, সাঁইবাবলা গাছ, নীল আকাশ, শরতের রোদ, ঘাঘর ডাক-সত্যিই যেন বহকাল পকেবােরই বিস্মত বাল্যদিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সাঁতার দিয়ে বাঁশতলায় উঠি, তারপর নিভৃত বনচ্ছায়ায় একস্থানে একটি বনকলমী ফলের ঝোপের কাছে বসে রইলাম, ওদিকে কি একটা গাছের মাথায় মাকালি লতা উঠে কেমন একটা চমৎকার ঝোপের সন্টি করেচে। রোদ না থাকলে, নীল আকাশ না থাকলে কি শরৎ মানায় ? এতদিন শােধ বলিট আর বান্টি ! গরম রোদ হবে, লতাপাতার কাটতিক্ত গন্ধ বার হবে, তবে শরতের সর্বপ্নলোক নামবে নীল আকাশের অনন্ত মন্তির চন্দ্ৰাতপতলে। আজ কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে সেই পেয়ারা গাছটার তলায় চপ করে বসিগাছে উঠিও । গাছে উঠলে যেন অন্য মানষ হয়ে যেতে হয়---বন্য-প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ যেন আরও নিবিড় আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিবারণের ভূই থেকে জলে নামলম ও সাঁতার দিতে দিতে কত নল-খাগড়ার বন, ভাসমান কচারিপানার দাম, কলমীলতার পাশ কাটিয়ে দোদ ল্যমান কত বােবই পাখীর বাসা, নীল আকাশের তলায় শরৎ। মধ্যাহ্নের শত্ৰ মেঘস্তাপের দিকে চেয়ে চেয়ে এসে পৌঁছলাম বন সিমতলার ঘাটে। অভিলাষ জেলে ওপারে দোয়াড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বলছে-বাবা ঘোলার গাঙে এমন ভেসে বেড়াচেন কেন ? ক’ত আপদ বালাই থাকে, বিপদের কথা কি বলা যায় বাবা ? অমন বেড়াবেন না। f অপব্ব শান্তি ও আনন্দ পাই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মভাবে এমনি ধারা মিশিয়ে Iš বিকেলে আজ বাঁওড়ের ধারে বেড়াতে গিয়ে সেই অশবথ গাছটার ওপর উঠে বসলাম খানিকক্ষণ।। দরে বাঁওড়ের নিম্পৰ্মল জল, আমার চারিপাশে নিস্তব্ধ বনানী। এক জায়গায় কি অজস্র বনকলমী ফােলই ফটেচে! জেলেপাড়ার ঠিক পেছনের মাঠটাতে। সাঁকারীপকুরের রাস্তা দিয়ে ঘন বনের মধ্যে দিয়ে চলে এলাম। আজ দােপরে দলা সাঁওতালের সঙ্গে হোটে এলম বরােজড়ি। শরতের নীল আকাশ, দরে দরে নীল শৈলশ্রেণী, বাটাইজোড় পার হয়ে ঢাংজড়ি সারাডোবা প্রভৃতি সাঁওতালী গ্রাম পার হয়ে গেলাম। অবশেষে বরাজড়ি বলে গ্রামে, খোলার অডার দিতে। খোলা অর্থাৎ চাল ছাইবার খাপরা। কি সন্দের গ্রামটি, ঢাকেই আমার ভাল লাগলো, ছায়া নেমে এসেচে। শরৎ অপরাহের মৌলবনে ও শালবনে, দীঘিতে রক্তমণাল ফটোেচ, শ্যামা ধানের ক্ষেত ঠেকাচে সদরের নীল শৈলমালায়। কাত্তিক গোরাই বলে একজন দোকানদার আমাকে খাতির করে চা খাওয়ালে-বল্লেী, ধানের জমি বড় সস্তা। দোকানে লোকে এ বিশবব্যাপী দন্দশার দিনে ঘটি বাটি বাঁধা রেখে ছোলা, কলাই (এ দেশে বলে বিরি) নিয়ে যাচ্চে। সন্ধ্যার আগে চলে এলাম! তখন বেশ ছায়া নেমেচে, গটকে SA" দিনলিপি-৭/হে অরণ্য কথা কও-২