পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

--না। বাবা। বনের মধ্যে রওনা হবে শেষরাত্রে উঠে। এই ভীষণ শীতে শালগাছের তলায় মন্ত হওয়ায় শয়ে রাত কাটাবে। বিছানা নেই-একখানা বন্য খোঁজরের ছোড়া চোটাই ও আধিছোঁড়া পাতলা মলিন কাঁথা সম্পবেল। শািনলাম পথে বাঘের উপদ্রব আছে। গত বৎসর চলন্ত গাড়ী থেকে বাঘে। অনেক বলদ নিয়ে পালিয়েছিল। রাসবিহারীবাব, এ উক্তির সত্যতা সম্পবন্ধে সন্দেহ প্ৰকাশ করলেন, কিন্তু মিঃ সিনহা বল্লেন—সম্পবিলপরের অরণ্যে সকাল আটটার সময় গরর গাড়ী থেকে বলদ নিয়ে গিয়েচে বাঘে —তিনি জানেন, दb८ ८८.२८ ।। ভাবলাম—এই দরিদ্র সরল লোকগালিই ভারতবর্ষের প্রাণবস্তু। অথচ কি দঃখপািণ জীবন এদের! নিরাবরণ আকাশতলে হিমবষী রাত্রে কাঁথা গায়ে শোবে, বাঘের মখে রাত্রে গাড়ী চালাবে—মজরি কত, না। দৈনিক এক টাকা! অনেক রাত্রে বাংলোর বাইরে চেয়ার পেতে বসলাম। অন্দরে গম্ভীর শৈলারণ্যের জ্যোৎস্নাসনাত রােপ কি বৰ্ণনা করা যায় ? ভগবানকে যদি ঠিকমত উপলব্ধি করতে চাও, তবে এইখানে এই পটভূমিতে সেই বিরাটের রােপ ধ্যান কর-লোকালয়ের কলকোলাহল থেকে বহন্দরে ময়র-নিনাদিত অরণ্যভূমির প্রান্তে। এই হিমবষী আকাশতলে ঐ দরিদ্র গাড়োয়ানদের ছেড়া চেটাইতে শয়ে রাত কাটাও । একটা প্ৰবন্ধ লিখব, প্ৰবন্ধটার নাম দেবো।--‘বন্যান্তে সন্ধ্যা’। ভগবানের সৌন্দৰ্য্য সে সব্বত্র প্রত্যক্ষ করচি– যেদিকে চাই, সেদিকেই বিরাটের আসন পাতা, সেই মহাশিলপীর হাতের কাজ চারিদিকে ছড়িয়ে। জয় হোক তাঁর। এক জায়গায় পাতার কুড়ে বোধে জনকতক লোক রোধে খাচ্চে সন্ধ্যাবেলা। ওদের হো ভাষায় কি জিজ্ঞেস করলে রাসবিহারীবাব। ওরা হো ভাষাতেই জবাব দিলে। শনলাম। ওদের বলে “আরাকাশি, বোনাই ও গাংপাের সেন্টটা থেকে আসে আমের কাঠ, চেরাই করতে। ওদের পাতার কুড়ের কাছে একটা বিরাট আট ফন্ট পরিধি-বিশিষ্ট শালগাছ, উচ্চতায়ও প্রায় ৫o ॥৬ o ফােট। বনস্পতি একেই বলে- বক্ষ আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা হয় দেখলে। গভীর রাত্রি। আমরা বাংলোর বাইরে ত্রিশ গজ আন্দাজ গেলাম। রাসপর্ণিমার পৰ্ণচন্দ্র মাথার ওপর উঠেচে। একটা উচ, টিলা—অথবা সেটা এই পাহাড়ের সব্বোচ্চ চড়া-সেখানে ঘাস নেই, শকিনো খটখাটে জায়গা-মাঝখান দিয়ে পথ, দ, ধারে শাল ও আমলকী বন। আজ বৈকালে যেখানে গিয়ে বসেছিলাম। সেখানটাতে গিয়ে দাঁড়াই। জ্যোৎস্নার বর্ণনা নেই-এ জ্যোৎস্না-সনাত বনভূমি ও অদরবত্তীৰ্ণ শৈলমালার বর্ণনা নেই। কে দিতে পারে। এর বর্ণনা ? গভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে একমাত্র শব্দঘন বনের কোথায় অবিশ্রান্ত জলপতনধবনি। এ ধৰনি বনের মধ্যে চাডডা ঝর্ণায় শানেছি শশাংদাবার আরোহণের সময়, এ শব্দ শানেছি কাল ও পরশ রাত্রে কোইন নদীতে ঘন বনে-কুমডি বাংলোতে-আবার থলিকোবাদ বাংলোতেও শানচি। কোথায় একটা সম্পবের হরিণ পািব্বদিকের পাহাড়ে গম্ভীর আওয়াজ করলে। মাথার ওপরে দ-চারটা নক্ষত্র, সপ্তর্ষিমন্ডল দেখা যাচে। টিলার দক্ষিণে যে শালবন, তার শিশিরসিক্ত পত্ৰিপঞ্জ জ্যোৎস্নায় চকচক করচেb ডাইনে একটা গাছের গায়ে বন্যহস্তী তাড়ানোর উচ, মাচা। এই গভীর রাত্রে অরণ্যনিঃশব্দতার মধ্যে-দরবত্তীর্ণ অপরিচিত পাহাড়ী ঝর্ণার জলপতনধবনি ও দ-একটা নৈশপাখীর কজন দাবার। দ্বিখন্ডিত যে গভীর নৈঃশবদ্য, এর মধ্যে কান পেতে থাকলে যেন কার বাণী শনতে পাওয়া যায়। শািনলামও তাঁর বাণী, শানে সারা হৃদয়মনঃ S