পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জয়ধৰনি করে উঠলো। সেই বিরাট সুন্টা, সেই সৌন্দৰ্য্যশিল্পী, সেই রহস্যময় অনন্তের উদ্দেশে। মাখে। কিছ বলা যায় না। পনেরো মিনিট বাইরে ছিলাম। এই পৌর্ণমাসী রজনীর মায়াময় জ্যোৎস্নালোকে বাংলো থেকে কিছদরে বনের মধ্যে টিলার ওপরে দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে বাংলোর সাদা বাড়ীটা বা কোনো লোকালয়ের চিহ্ন চোখে পড়ে না, শািন্ধ মনে হয় একা আমি এই জনহীন গভীর বনভূমিতে এই গভীর রাত্রে আকাশ ও বনের দিকে চেয়ে আছি—এই পনেরো মিনিটে পনেরো বছরের জ্ঞান সঞ্চয় হোল। চোখ যেন খালে গেল। তাঁর জয় হোক। সকালে উঠোঁচ-মিঃ সিনহা ডেকে বল্লেন—ময়র দেখান! পাশের উপত্যকায় “মাঠের মধ্যে ছ-সাতটি বড় বড় ময়র দেখে বড় খশি হই। বেলা দশটার সময় মোটরে বার হয়ে আমরা কোন্দলিবাদ। ১৫-এর ঘন জঙ্গলে গেলাম। কায়াউলি নামক একটি ক্ষদ্র নদী প্রথমে পেলাম। বড় বড় পাথর বাঁধানো জায়গা। পাথরের ওপর দিয়ে নদী বয়ে চলেচে। বনের পথে নামচি উঠাঁচ-দধারে শৈলশ্রেণী—আবার এক ঝর্ণা। তারপর কোইনা নদী ঘন বনের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। কোইনা নদীর পাষাণময় তীরের ঘন বনের ধারে বসে আমি ১৯৩১ সালের ব্ল্যাকউডস ম্যাগাজিনে "Cast adrift in the 'woods” বলে একটা ভ্ৰমণবাত্তান্ত পড়তে লাগলাম। মাঝে মাঝে মােখ তুলে চেয়ে দেখি ঝোপ ও লতা দিয়ে তৈরি নিবিড় বন যেন বাংলাদেশের বনের পদ্ধতি-বিশিষট—যেন কুঠীর মাঠের বন-শধ শাল আসান নয়। পথে তিন রকমের ফল অজস্র ফটেদেবকাণাগুন, বন্য পিটনিয়া ও ঈষৎ স্যগন্ধ-বিশিষ্ট এক রকমের হলদে ফল, বেশ দেখতে। কামিনী ফলের গাছ জঙ্গলের মধ্যে যথেষ্ট। সকালে চমৎকার আলোছায়ার খেলা জঙ্গলে- নিবিড় ছায়ার ফাঁকে ফাঁকে সয্যালোক এসে পড়েচে, বন্য-পক্ষীর কািজন, কোইনা নদীর মৰ্ম্মমরি কলতান, বামে নদীর ওপারে প্রায় দশো গজ দরে পাহাড়শ্রেণী কি সন্দির লাগছিল। ভগবানকে মন থেকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হয়। আরও কিছদরে গিয়ে কোইনা নদী আর একবার ঘরে আমাদের পথে এসে পড়লএখানে একদিকের পােড় উচ্চ ও প্রস্তরময়, নিবিড বনাবত। এখানে অনেকক্ষণ বসলাম। কমলালেব দিলেন মিঃ গগুপ্ত। কি পাখীর গান! কি বনানীশোভা ! ভূতধাত্রী ধরিত্রী অপব্বরপে সক্তিজতা এই ঘনবন। পৰ্ব্বতান্তরালে। আজ সকালে উঠে ঘন বনের পথে মিঃ সিনহা, মিঃ গগুপ্ত ও আমি রওনা হই বোনাই সেন্টটের সীমানা দেখতে। পথে গভীর অরণ্যের মধ্যে কোইনা নদী (যার সঙ্গে আমার একবার পরিচয় হয়েচে কুমডি বাংলোর পাশে) কুলকুল, তানে বয়ে চলেচে, হঠাৎ আমার নজর পড়লো প্রস্তরবহল একটি চমৎকার জায়গা কোইনা নদীর মধ্যে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, বনের মধ্যে যেখানেই এসব দেশে নদী বয়ে যায়, সেখানে গতিপথে নানা সন্দর দশ্যের সম্মিট করেই অগ্রসর হয় নদী, পদে পদে রমণীয় শোভা বিতরণ করতে করতে চলে। পাথরের বড় বড় চাই, গাছপালা, বিহঙ্গাকাকালী, সগন্ধি তরািচ্ছায়া, মৰ্ম্মমরি জল-কলতান-যাকে বলে বিউটি সাপট (beauty spot) তার আর বাকী রইল। কি ? কিন্তু এ জায়গার বিশেষত্ব এই, এখানে নদীর মধ্যে যে চড়া সম্পট হয়েচে, যেখানে বালি, বড় জোর পাথরের নড়ি কি দা-দশখানা পাথরের চাই থাকা উচিত ছিল, সেখানে বহন্দরে পয্যন্ত স্থান মাকড়া পাথর (Labrite) দিয়ে যেন বাঁধানো। কত হাজার বছর ধরে লোকচক্ষর অন্তরালে কোইনা নদী এমনি বয়ে চলে মাটি ক্ষইয়ে তুলে ফেলে তলাকার পাথর বার করে ফেলেচে, সে পাথরেরও নানাস্থানে SP