পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দলেগেচে সেই বন্য যােবকের আনন্দ-চঞ্চল গতি, হাসিমাখা মাখ, সরল চোখের চাহনি । নিকটেই কুম্ভী বলে একটা গ্রাম আছে বোনাই সেন্টটের। পথে টেতী নায়েক বল্লেগাঁয়ের লোককে বাঘে মেরেচে, পাঁচ বছর আগে সে নাকি দেখেচে । এক বন্ধ লোককে আমরা মোটরে উঠিয়ে নিলাম, তার নাম শামো, তার ভাইয়ের নাম কামো। উড়িয়া ९छायश दकथा द6त्र । তারপর রাত্রে ও-বেলার সেই কেইনা নদীর সন্দর জায়গাটাতে এসেচি। ঘন বনের মধ্যে চাঁদ উঠেচে, আমরা মোটরে এসে পৌঁছলাম। শামো (কামোর ভাই-সে নিজের পরিচয় দিতে গেলে সব্বদাই ভাইয়ের উল্লেখ করে।) এবং কয়েকটি লোক এই বনের মধ্যে আগন করে বসে আছে। আমাদের জন্যে তাদের এখানে থাকতে বলা হয়েছিল। জ্যোৎস্না-প্লাবিত বনভূমি। রাত্রি দেড়টা। বিশাল সারেন্ডা অরণ্যের মধ্যে পাব্বত্য কোইনা নদীর কলতানের মধ্যে বসে আছি, কৃষ্ণা দিবতীয়ার চাঁদ মাথার ওপর এসেচে। মহামৌন অরণ্যানী যেন এই জলাকলতানের মধ্যে দিয়ে কথা বলচে। কি সে অদভূত, রহস্যময় সৌন্দৰ্য্য-এর বর্ণনার কি ভাষা আছে ? যে কখনো এমন হাজার বিগ মাইল নিবিড় অরণ্যানীর মধ্যে বন্য-নদীর পাষাণতটে। জ্যোৎস্নালোকিত গভীর "নিশীথে না বসে থেকেচে, তাকে এ গম্পভীর সৌন্দয্য বোঝাবার উপায় নেই। এই বন্যহস্তী-ব্যাঘ্র-অধ্যুষিত অরণ্যের মধ্যে এই কোইনা নদী হাজার হাজার বছর এমনি বয়ে চলেচে, হাজার হাজার বছর ধরে প্রতি পণিমায়, প্রতি শক্লিপক্ষে, চাঁদ এমনি উঠে বনভূমি পরিপ্লাবিত করেচে, এই কোইনা নদীর এই সন্দর স্থানটিতে আলো-ছায়ার “জাল বনোচে, এমনি সৌন্দয্যের সন্টি করেচে-কিন্তু কেউ দেখতে আসেনি এর অদভুত রােপ। নদীর মধ্যে ক্ষদ্র যে একটি জলপ্রপাতের সন্টি হয়েচে, সেই জলটি অনবরত পড়ে পড়ে এক ক্ষদ্র সরোবরের মত হয়েচে.ওপারের বিরাট বনস্পতিশ্রেণীর ছায়া এখনও তার ওপর থেকে অপসারিত হয়নি—যদিও চাঁদ মাথার ওপরে, জলপ্রপাতের জলধারা চাঁদের আলোয় চক চক করাচে, শিকাররাশি গভীর শীতের রাত্রের ঠান্ডায় জমে ধোঁয়ার মত উড়চে-ওর পাষাণময় তটে বসে মনে হোল, বনের মাথায় ওই যে দিচারটি নক্ষত্র দেখা যায়, ওই নক্ষত্ৰলোক থেকে অপরিচিত রােপসী দেববালাগণ আদশ্য চরণে নেমে আসেন এমনি জ্যোৎস্যনাশত্ৰ নিশীথ রাত্রে এই গভীর অরণ্যানীমধ্যপথ সরোবরে জলকেলি করতে ইতর চক্ষর অন্তরালে। মহাকাল এখানে অচাঞ্চল, সস্তবধ, মৌন বনস্পতিশ্রেণীর মত ধ্যান-সমাহিত। এই আকাশ, এই নিজজন জ্যোৎস্না, এই নিশীথ রাত্ৰি, এই গভীর অরণ্য যেন কি কথা বলচে-সে। শব্দহীন বাণী ওই বন্য নদীর চঞ্চল। কলগীতিতে মািখর হয়ে উঠচে প্রতি ক্ষণে-কিংবা গভীর অরণ্য নিঃশব্দতার সরে সর মিলিয়ে অন্তরাত্মার কানে তার সগোপন বাণীটি পৌঁছে দিচ্চে। চাপ করে বসে জলের ধারে আকাশের দিকে চেয়ে, চাঁদের দিকে চেয়ে, বনস্পতিশ্রেণীর মধ্যে জ্যোৎস্নালোকিত শীর্ষদেশের দিকে চেয়ে সে বাণীর জন্য চোখ বজে অপেক্ষা করো-শনতে পাবে। সে বাণী নৈঃশব্দের বটে, কিন্তু অমরতার বাৰ্ত্তা বহন করে আনচে। এই অরণ্যই ভারতের আসল রােপ, সভ্যতার জন্ম হয়েচে এই অরণ্য-শান্তির মধ্যে, বেদ, আরণ্যক, উপনিষদ জন্ম নিয়েচে এখানে—এই সমাহিত সন্তব্ধতায়—নগরীর কলকোলাহলের মধ্যে নয়। আজ এখানে এসে মনে হচ্চে, অশোকের সময়েও এই কোইনা নদী ঠিক এমনি বয়ে চলতো এই গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে—এই অরণ্য আরও গভীরতর ছিল—তারও পর্ক্সেব আযদের ভারতবর্ষ প্রবেশের দিনেও এই নদী এখানে এমনি চলাচল কলোচ্ছবাসে নিত্যশীলা বালিকার নােপািরবাজানো পা-দটির মত নিত্য OO