পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভক্তিগতে ছটে চলতো, উদাসীন প্রকৃতি এমনি সাজিয়েছিল। এ বনভূমিকে কিন্তু কেউ কখনো দেখােক না দেখাক-প্রশনও করেনি। আজ আমরা এসেচি, কারণাময় বিশবশিলপী যেন প্রসন্ননেত্ৰে হাসিমখে নীরবতার মধ্যে দিয়ে ওই জলাকলতানের মধ্যে দিয়ে *বলচেন—কেউ দেখে না, কত যাগ-যােগান্তর থেকে এমনি সাজিয়ে দিই— প্রতি দিনে, প্রতি সন্ধ্যায়, প্রতি রজনীতে-আজ এলে তোমরা এতদিনে ? বড় আনন্দ হচ্চে আমার । দেখ, ভাল করে দেখা । জয় হোক তাঁর, জয় হোক সে মহাদেবতার ! তারপর শামোর সঙ্গে কথাবাত্তা বলি। ওর ভাই কামো কেমন আছে ? সত্তর বছরের বন্ধ, এই করমপদা নামক বন্য গ্রামেই তার জন্ম, আর কোথাও যায়নি-যাবেও না। পঞ্চাশ বছর আগে একবার চাইবাসা গিয়েছিল - রেলগাড়ী জীবনে কখনো চড়েনি। তাকে আমরা মোটরে জাতিসিয়াং পৰ্যন্ত নিয়ে এলাম। তারপর সেই নিবিড় অরণ্যের শিশিরসিস্তু গাছপালায় গভীর রাত্রের জ্যোৎস্নালোক পড়েচে—সে কি চমৎকার রােপ ! মোটরে ফিরবার সময় চেয়ে দেখি কত গাছ, কত পাথর, কত নিবিড় বনঝোপ-আমার ঠাকুরদা সেদিন ছেলেমানষে ছিলেন—এসব বনে তখনও ঠিক এমনি জ্যোৎসনা পড়তো- হে প্রাচীন অরণ্যানী, এই অঞ্চলের যে ইতিহাস তুমি জানো, কেউ তা জানে না। পরদিন সকালে চা পান করে মোটরে বেরলাম। আমি ও মিঃ সিনহা। সন্দর পাহাড় ও বনের পথে খািব উচ্চ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। এক জায়গায় বনের মধ্যে SO, T., T. কোম্পানী রেলওয়ে স্লিপার চেরাই করচে। আজই সকালে একদল ময়র দেখেছিলাম থলকোবাদ বাংলো থেকে। লৌহপ্রস্তর ছড়িয়ে পড়ে আছে বনের মধ্যে, কোনো-কোনোটি বেশ ভারী, প্রায় ৫০ ভাগ লোহা আছে শতকরা। ওখান থেকে আর এক জায়গায় এসে শৈলচড়ার ওপারের রাস্তা দিয়ে যাচ্চি--দরে দরে আরও পাহাড় দেখতে পেলাম। কিন্তু নেমে দর পাহাড়ের দশ্য দেখতে গিয়ে আর কিছই দেখতে পাইনে, বড় বড় গাছে চোখের দটি আটকেচে। কমলালেব খেলাম বসে। একটা পাইথনের খোলস পড়ে আছে পথে, মড়ে দিলেন। কাগজে মিঃ গগুপ্ত। তারপর দীর দর পাহাড়ের দশ্য দেখতে দেখতে, পাশের চওড়া বনাবত উপত্যকাভূমির দিকে চোখ রেখে নামচি—ওপর থেকে দেখতে পাচ্চি পথ নেমে নেমে চলেচে একেবেকে পব্বতের গা দিয়ে। হঠাৎ একটি সন্দের সস্থানে এলাম, বাংকিগাড়া বা ওরোপরা বলে একটি নদী বয়ে চলেচে সংকীর্ণ উপত্যকা-পথে। ওপরের টিলার বড় বড় শালগাছের মধ্যে ক্ষদ একটি কুটির। পথে একটা শালগাছ দেখেছিলাম। একশ। পয়ত্ৰিশ বছরের পরোনো, দশ ফন্ট বেড় গাড়ির। আমার ঠাকুরদাদা যখন জন্মাননি, প্রপিতামহ ঠাকুর যখন যািবক, তখন এই শাল ছিল ক্ষদ্র চারা, কি শক্তি ছিল ওর মধ্যে যে এই ক্ষদ্র দ্য ইণ্ডিচ চারা এই বিশাল বনস্পতিতে পরিণত হয়েচে, এখনও নাকি বাড়চে । ব্ৰহ্মশান্তি রয়েচে বিশেবর সব তাতে। এই সব না দেখলে শািন্ধ যো ওযধিষা যে! বনস্পতিষ' আওড়ালে কি হবে। উপলব্ধি করা চাই। ব্ৰহ্মশক্তিকে উপলব্ধি করা চাই। বাবডেরাতে চা পান করে আমরা রওনা হলাম—বেলা সাড়ে তিনটা। তারপরেই ঘন বনের পথ, নিবিড় ট্রপিক্যাল অরণ্যানী যেন, ডিকেন ড্রাম ফলে ফটে আছে-ফল নয়, কচি পাতা, দেখতে ফলের মত। একদিকে ওরেবােরা বয়ে চলেচে সংকীর্ণ উপত্যকা-পথে নিবিড় বনের মধ্যে দিয়ে। আসাম অঞ্চলের মত অরণ্য। ধনেশ পাখী ডাকচে বনে। একস্থানে মোটরের পথে আবার এই সন্দরী পৰ্ব্ববতদহিতা আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ালা । কুলকুল-তানে ওর সান নয়। অন্যুরোধ, আমাকে ভাল করে দেখা।। চলে যেও না। এই ᏬᏚ