পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থানটিতে একটি ক্ষদ্র জলপ্রপাত, নদীর মধ্যেই। সনিবিড় বনস্পতিশ্রেণীর ছায়ায় ছায়ায় নদী বয়ে চলেচে, এক পাড়ে দটি তিনটি কুটির বনের মধ্যে। সাবাই ঘাস বিছানো। তার ওপর বসে ভগবানের সৌন্দৰ্য্যসন্টি মনে মনে উপভোগ করলাম। চমৎকার স্থান বটে। পেছনের বড় বড় গাছে অপরাহ্রের রাঙা রোদ। যেন মনিঋষিদের আশ্রম, মনে হয়। পরোকালে কোনো উপনিষদের কবি ও দার্শনিক ঋষি এমনই সন্দর, নিভৃত, শান্ত বনঝর্ণার তারের কুটিরে পাকস্বত্য অরণ্যের ঘন ছায়ায় বনকুসমের সগন্ধ, চণগুল উচ্ছবাস্যময়ী বন্য নদীর নিত্যছন্দের নােপার-ধবনি ও বিহঙ্গের কলতানের মধ্যে বসে সমাহিত মনে উপনিষদ রচনা করেছিলেন, বিশবদেবের উপাসনা আপনাআপনি সরল ও সহজ আনন্দের মধ্যে দিয়েই এখানে আপনাতে আপনি সম্পণে, তাঁর উদ্দেশ্যে মনের কৃতজ্ঞতাই তাঁর পিজার অঘ্য। এই স্থানটির নাম দিলাম বনশ্ৰী । কেলেজরাইকেল থেকে আট মাইল এ সােথান, সোজা রাস্তা, চলেচে জেরাইকেল আবার চলেচি, পথে জেরাইকেলা থেকে পাঁচ মাইলে পড়লো সামটা নালা। এমন চমৎকার নদীগলির নাম এদেশে মোটেই সন্দির নয়—বড় ককাশ নাম দেয় হো ভাষায়। আমাদের বাংলা দেশের অনেক বাজে নদীরও নাম এদের চেয়ে কত ভাল। এই সামটো নালা পার হয়েই এক রাস্তার মোড়—এক রাস্তা গিয়েচে থলকোবাদ তিরিলপোসি হয়ে। সামটাে নালা বেয়ে কিছদরে এসে গাছপালার প্রকৃতি যেন বাংলা দেশের মত । ঘন নিবিড় বনানী, বনকলা গাছ, ঝোপঝাপ লতাপাতা, ঠিক যেন বাংলা দেশ। আমার ভিটেতে বারাকপরে যে গাছ আছে, যার চটি জাতের মত ফল হয়, এখানে ছোটনাগপর ইনডাস্ট্রিস থেকে যেখানে গাছ কেটেচে। সেখানে অবিকল এমনি গাছপালা। শালগাছ নেই, বাংলার মত আরণ্য গাছ। দশ মাইল দরে একটি অতি সন্দর উচ্চ স্থান থেকে ঠিক যেন হিমালয়ের দশ্য-সামনে সংকীর্ণ উপত্যকায় সামটা সাপের মত দটি কুন্ডলী দিয়ে বোধে কুন্ডলীর বেষ্টনীর মধ্যে সবজি একটি দাবীপ সন্টি করেচে-সামনে স্তরে সত্তরে পাহাড় উঠেচে, তার ওপর দিয়ে রাস্তা একেবেকে চলেচে-দরে একটি কুটি দেখা যাচ্চে উপত্যকার ওপারে সবজি বনানীর মধ্যে ডাবে আছে। শািনলাম নিকটেই কোথায় বনের মধ্যে একটি জলপ্রপাত ও একটি গহা আছে। ‘In the mountain fastnesses of Hazaribag' ভাগলপরের সেই উকীল বাবর কথা মনে পড়লো। সে পাব্বিত্য দশ্য দেখবার বাসনা ১৯২৬ সাল থেকেই আছে, তহশিলদারের ভাইয়ের মখে সাতনামা পাহাড়ের বর্ণনা শনে যা দেখবার বাসনা জেগেছিল। ভগবানের সন্টি দেখে বেড়াবো, এই তো চাই। তারপর আমার মাক্তি হোক না হোক, আমি সবগে যাই না। যাই-এসব ভাবনা আমার নেই। আমি না থাকলেই বা কি ? সেই অপব্ব শিলপী যিনি এই দশ্য সন্টি করেচেন যাগে যাগে তিনি থাকুন, তাঁর সন্টি চলক এমনি সন্দর ভাবে কলপ থেকে কলপান্তরে, কত শত বিশেব, কত সহস্ৰ ব্ৰহ্মান্ডে, রিপে রাপে তিনি লোক-লোকান্তর পণ করে মহাকালের পথহীন পথে অনন্তকাল একা চলন, চঞ্চল বালকের মত সরল, চপল, আনন্দোক্তজবল নিত্যচ্ছন্দে হেসে গেয়ে। তিনি দীঘজীবনী হোন, চিরজীবী হোন। ফরেস্টার বাড়ীউলি হো আঙল দিয়ে দেখিয়ে বল্লে-ওই হেন্দেকুলি B., T., T. কোম্পানীর কুলীর তাঁব। আমরা চলে এলাম পাহাড়ের পথ ঘরে ঘরে শােধ বনফলের শোভা দেখতে দেখতে হেন্দেকুলী তাঁবতে। এখানে বনবিভাগের একটা ছোট্ট বাংলো আছে পথের পাশের উচ, টিলাতে। নিচেকার জমিতে সামটা নালার ধরে অনেক কুলি মেয়ে-পরিষ সন্ধ্যায় সারি সারি। আগােন জেবলে ভাত রাঁধচে। ওরা OR