পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এনালা বলে একটি অতি চমৎকার কণা বা পাহাড়ী নদী থেকে খানা কেটে জল আনা হচ্ছে তিরিলপোসি গ্রামের শস্য-ক্ষেত্রে। সেটা দেখতে গেলাম আমরা। সিং ভূম বা সারেন্ডাতে যেখানে বনের মধ্যে পাহাড়ী ঝর্ণা সেখানেই সৌন্দয্য—এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্ৰম ঘটেনি। সন্দর পাথর বিছানো ঠান্ডা জায়গায় জলে পা ডবিয়ে নিবিড় বনছায়ায় বসে ঝণার মৰ্ম্মমরধবনি শািনতে লাগলম একা একা। চোখে পড়চে শােধ গভীর নিস্তব্ধ অরণ্য, যেদিকে চাই। বেলা বারোটায় ফিরে এলাম। বিকেলে বোনাই স্টেটের বালজড়ির দিকে যে রাস্তা গিয়েচে পৰ্ব্ববত ও অরণ্য ভেদ করে সেদিকে চললাম। সামনে ঘোর জঙ্গলের দিকে রাস্তা নেমে গিয়েচে দেখে মিঃ সিনহা বল্লেন—সন্ধ্যে হয়েচে, আর এখন জঙ্গলে যাওয়া ঠিক হবে না। এই তো জানোয়ারদের বেরবার সময়। যদি হাতী তাড়া করে, ওপরের দিকে উঠে পালাতে গেলেই হাতীতে ধরবে, বড় বিপজ্জাজনক। মাকড়সার জাল বনে সব্বত্র। সতরাং ফিরলাম। একটা বড় পাথর বিছানো স্থানে গাছের তলায় বসলাম । সন্ধ্যা হয়ে আসচে, সামনের জমি ঢালা হয়ে গিয়ে সিংলম নালার খাতের দিকে চলেচে। তার ওধারে ঘোর বনে সমাচ্ছন্ন শৈলমালা, অন্ধকার দেখাচ্ছে। একটা গাছের ডাল মাথার অনেক ওপরে নত হয়ে আছে। মন এ সব স্থানে সম্পৰ্ণে অন্যদিকে যায়। কত ধরনের চিন্তা মনে আসে। জীবনের রহস্যের গভীরতার দিকে আপনাআপনি ছাটে b6f কল্যাণীর কথা আজ সারাদিন মাঝে মাঝে মনে হচ্চে। হয়তো আমার চিঠি ও পাবে কাল । ঠিক সন্ধ্যায় হয়তো বনগাঁ লিচতলা ক্লাবে যতীনন্দা, মন্মথদা, সবোধদা সব বসে গলপ করচে, আজ বিশ বছর রোজ যে ভাবে গলপ করে, তার ব্যতিক্ৰম নেই। খব ভোরে উঠেছিলাম, বেশ জ্যোৎস্নায় নীরব সামনে পািব্বত ও অরণ্য। শকতারা জবল জবল করচে পর্বদিকের আকাশে। থলকোবাদ থেকে কাঠবোঝাই গরর গাড়ীর দল শেষরাত্রি আড়াইটায় উঠে চলেচে জেকুইকোলা। এখন পাঁচটা হবে। সকালে বনের মধ্যে বেড়াতে গিয়ে বসি, বড় বড় শালগাছ, ওদিকে বনাবতি পব্বত, চারিদিকেই পাহাড় ও বন মাঝে ফাঁকা ক্ৰমনিম্পন একটি মাঠমত- সেখানে মোটা মোটা শালগাছ ও শালচারা। ঘন বনে ঘেরা পৰ্ব্বতের পটভূমিতে শৈলচড়ার একটি বড় গাছ ছোট দেখাচ্ছে। বিশ্ববিদেবের উপাসনা। এখানেই সার্থক ও সম্পর্ণে। চা-পানান্তে অপব্ব বনপথে গাংপাের স্টেট ও সারেন্ডার সীমানায় অবস্থিত টিকালিমারা নামক গ্রামে চললাম। এ পথ তৈরী হয়ে পৰ্যন্ত বোধ হয়। কখনো মোটর আসেনি, গরর গাড়ীও চলে না, সবজি ঘাসবনে ঢাকা রাস্তা, কোনটা বন কোনটা রাসােতা চিনবার জো নেই। মনে হচ্চে যেন মাঠের মধ্যে দিয়ে গাড়ী চলেচে। দধারে নিবিড় বন, অনেক ভাল দশ্য থলকোবাদ থেকে জেরাইকেলা রাস্তার চেয়ে। গরীর গাড়ীর চাকার দাগ নেই পথে, জন নেই, প্রাণী নেই, সকালের আলো এসে পড়েছে সদীঘ ও প্রাচীন শাল, আমলকী, পাঠডমর, ধওড়া গাছের শীর্ষভাগে—কোথাও মোটা মোটা লতায় জড়ােজড়ি করে বোধেচে ডালে ডালে, গাড়িতে গাড়িতে, দেবকাঞ্চন ফল ফটেচে, সব্বত্র শিউলি গাছের তো জওগল, এত শিউলি গাছ এদিকের বনে যে এমন অন্য কোথাও দেখিনি, কোথাও ফলে ভরা আমলকীর ডাল পথিপাশেবর বিশাল গাছ থেকে রাস্তার ওপর নত হয়ে আছে। ছবির মত, কোথাও পাহাড়ী ঝর্ণা বড় বড় শিলাশ খন্ডের ওপর দিয়ে ছায়ানিবিড় সাঁড়ি-পথে কুলকুল, বয়ে চলেচে, কোথাও বা একটা Oe