পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন-মোরগ মোটরের শব্দে রাস্তার ওপর থেকে ওপাশের বনে উড়ে পালালো, কোথাও রাসােতা ক্ৰমে নামচে, নামচে, সামনে উচ্চ-বিনাবিতে শৈলমালা-আমরা ঠিক যেন চলেচি, পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা মারবার জন্যে বলে মনে হচ্চে, কোথাও রাস্তা ও মোটর একেবারেঃ ডবে যাচ্চে গভীর বনের মধ্যে সমতল উপত্যকায়, সেখানে চারিদিকে বন ও পাহাড়ের সবজি দেওয়াল কিছ দেখা যায় না-আবার কোথাও পাহাড়ের গায়ে উঠে চলেচি, কোথাও সন্দীঘ বনস্পতিশ্রেণী ছায়াভিরা বনবীথির সন্টি করেচে, গাছে গাছে চীহাড়ের লতা দলচে। অবশেষে আমরা বিটকেলসোয়া গ্রামে পৌছে গেলাম। চারিদিকে উচ্চ পাহাড়, ছোট ছোট ছেলে-পিলে মোটরের শব্দ শনে ছটে এল। প্ৰেমানন্দ নামে একজন মােন্ডা খ্রীস্টান আমাদের সব দেখিয়ে বেড়াতে লাগলো। একটা কাঠের ও খোলার ঘরে গ্রাম্য গীতজা। শািনলাম। এ গ্রামের বেশির ভাগ অধিবাসী মডো খ্রীস্টান। মনোহরপর থেকে জন নামে এক “প্রীসন্ট” (এখানে পাদ্রীকে এই বলে) এসে রবিবারে এদের উপাসনা কাবায়। প্ৰেমানন্দ এক সময়ে প্রচারকের কাজ করবার জন্যে এই গ্রামে এসে এখানেই রয়ে গিয়েচে। বেশ বড় খোলার বাড়ী করেচে, লাউ কুমড়া লতা উঠিয়েছে। একটি গহস্থের নাম ফিলিপ টোপনো। ঘনশা মচির মত চেহারা। এত খ্রীস্টান এখানে কেন ? এ কথার উত্তরে ফরেস্টার খণ্টিয়া বল্লে—পালকোটের রাজা এক সময়ে হো-দের ওপর বড় অত্যাচার করে। তখন এরা খ্রীস্টান হয় মিশনারীদের প্ররোচনায়। বাঘের বড় অত্যাচার এই সব বন্য গ্রামে। তিন মাস আগে একজনকে বাঘে ধরেছিল। ওরা গর, চরচ্ছিল বনের ধারে, বাঘে এসে ওকে ধরে। সঙ্গের লোকেরা টাঙি দিয়ে বাঘ তাড়িয়ে দেয়। বেলা বারোটার সময় ওকে বাঘে ধরে। লোকটার নাম সামায়েল মানকি। আমাদের বারাকপরের গ্রামের বাসানে পাড়ার যে কোনো মসলমান ছোকরার মত চেহারাটা। গাছের ছায়ায় বসে লোকটাকে ডেকে আমরা তাকে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলাম-কত বড় বাঘ রে ? --খব বড় বাঘ হাজার। —তোর কোনো হািশ ছিল ? --না, আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। একটা বাড়ীতে মস্ত বড় একটা শকিনো পাতার টোকা বলেছে। দেখতে চাইলাম, নিয়ে এসে দিলে। বোহিনিয়া ভ্যালাইয়ের বড় বড় পাতা দিয়ে করে। এক সন্ত্রীলোক পাতার কুড়েঘরে বসে কাঁদচে। তার স্বামী মারা গিয়েচে শনিলাম! তার কান্না দেখে বড় কন্ট হোল। মানষের দঃখের প্রকাশ যেমন বাংলাদেশে, এখানেও এই সদর বন্য গ্রামেও তেমনি। কোনো তফাৎ নেই। দক্ষিণ পশ্চিম দিকের পাহাড়ের ওপারে গাং পর সেন্টট। দক্ষিণ-পকোব বোনাই স্টেট। যে রাস্তায় আমরা এলাম। এই রাস্তা চলেচে বোনাই স্টেটের বালজাড়ি গ্রামে, এখান থেকে পাঁচ মাইল। নিভৃত বনের মধ্যে বালজড়ির পথে এক জায়গায় খ্রীস্টান মান্ডা, কুলীরা কাজ করচে। তাদের হাজিরা নেওয়া হোল ঘন বনের ছায়ায় বসে। এই পথে আজ মাস দই আগে প্রকাশড নরখাদক রয়েল বেঙ্গল ব্যাঘ্র একটি মানষি মেরেচে }, ev