পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ৰমে একটা প্রস্তরময় সস্থানে এলাম। একটি পাহাড়ী ঝর্ণা পাথরের ওপর দিয়ে চলেচে। আমি ভাবলাম, এই বঝি সে জায়গা! কিন্তু ফরেস্ট গার্ড থামে না। চলেচে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, শােধ তার পািঠদেশ দেখতে পাচ্চি। এই সর, বনপথ নাকি বোনাই স্টেট থেকে আসবার শর্টকাট-তাই ওদিকের বালাজোড় প্রভৃতি স্থান থেকে এ পথে পথিক লোক আসে। কিন্তু কেমন সে পথিক যে এই বন্যগজ ও ব্যাক্স-অধ্যুষিত নিবিড় ও দাভেদ্য বনপথ দিয়ে শর্টকাট করে সোজা সড়ক ছেড়ে, কত বড় তার বকের পাটা তা বঝতে পারলাম না। আবার কিছদার গিয়ে আর একটি প্রস্তরময় স্থানেও পাহাড়ী নদী। এখানে ক্ষদ্র একটি cascade-এর সন্টি করে ঝর্ণাটি চলেচে বয়ে। বেশ জায়গাটি, ভাবলাম, পৌছে গিয়েছি বঝি—এই সেই টােয়েব ঝর্ণা। দ-চারটি বন্যঘাসে ছাওয়া কুটির এখানে রয়েচে বনস্পতিদের ছায়ায়, বনবিভাগের কুলীরা গত বিষাকালে লতা কাটতে এসে এখানে ছিল ; তারাই তৈরি করে রেখেচে—এখন কে আর থাকবে এখানে ? শানেছিলাম মাত্র দ’ মাইল, অথচ তিন মাইল এসে গিয়েচি, আন্দাজে মনে হচ্চে, এক ঘণটা ধরে অনবরত হাঁটাচি, অথচ টোয়েব, জলপ্রপাতের শব্দও তো শানচিনে কোথাও। আবার পাহাড়ের মত উচপথে পাথর ডিঙিয়ে চড়াইয়ের পথে উঠি, উৎরাইয়ের পথে নামি-একস্থানে ফণি-মনসার গাছ অনেক, কালো পাথরের রক্ষ জমিতে যথেষ্ট জন্মেচে। এবার বাঁদিকে জলের শব্দ পেলাম—আমাদের হাতপাঁচেক নীচে অনেকখানি সস্থানে পাথর বেরিয়ে আছে, তার ওপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়চে । এ ছাড়িয়েও ফরেস্ট গােড চলে যাচ্ছে। আমরা বলি—আর কতদার ? --এই হাজার, তবে নামতে হবে নীচে। আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ওপরের পথটা ছেড়ে মালভূমির নীচের দিকে নামতে লাগলম উপত্যকায় সমতলে। কাঁটায় ও কণ্টকময় বনফলে এই চার মাইল আসতে পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে রি রি করে জবলচে। কিন্তু নেমে গিয়ে হঠাৎ যে অপবর্ণ সৌন্দৰ্য্যভরা দশ্য ক্লান্ত চক্ষর সামনে খালে গেল, তার বর্ণনা দেওয়া বড় কঠিন। সেই ছায়ানিবিড় অপরাহে, সেই বাঘের পায়ের থাবা-অবিকা ঘোর জঙ্গলের পথে না। হোটে এলে, সেই জনমানবের চিহ্নহীন বনানীর গোপন অন্তরালে ল্যুকানো গম্পভীর দশন জলপ্রপাতের কথা কি করে বোঝাবো ? অনেক বড় বড় চৌরস পাথরের বড় বড় boulder ঝর্ণার মাখে পড়ে আছে, তারই একটার ওপরে গিয়ে বসলাম। বেলা তিনটা বাজে, এখনি সেখানে প্রায় সন্ধা হয়ে গিয়েছে। আমার সামনে একটা জলাশয়, ঘন কালো ঈষৎ সব জাভা তার জল। এই জলাশয় নাকি অত্যন্ত গভীর, জলের চেহারা দেখলে তা বোঝা যায় বটে—“টোয়েব মানে মোচড়ানো ঘাড়'। এক হো জাতীয় লোক ওখানে মাছ ধরতে এসেছিল সত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। মাছ ধরে ধরে সে সত্ৰীকে ভাঙার দিকে ছাড়ে দিচ্ছিল, সত্ৰী লফে লফে নিচ্চে -একবার হঠাৎ বিস্মিতা সন্ত্রীর হাতে এল তার স্বামীর সদ্য-মোচড়ানো ঘাড়টা। সেই থেকে বন্য অপদেবতার ভয়ে এখানে কেউ মাছ ধরতে আসে না। অথচ মাছ নাকি খব আছে । আমাদের সামনে জলাশয়ের ওপারে প্রায় সত্তর-আশি ফািট লৌহ-প্রস্তরের (Heamatite quartzite) অনাবত দেয়াল খাড়া উঠেচে, তার শীর্ষে অপরান্থের হলদে। রোদ, তার গায়ে গাছের মোটা শেকড় ঝলচে। বড় বড় ঝলন্ত পাথরের চাই জায়গায় জায়গায় যেন মোটা শেকড়ের বাঁধনে আটকে আছে ফাটলের গায়ে। এই পাহাড়ের দেয়ালের বাঁদিকে প্রায় সাত-আট ফন্ট চওড়া জলধারা দটি ধারায় বিভক্ত হয়ে সশব্দে 8O