পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায় ২৫ ফন্ট ওপর থেকে নীচের বন্য অপদেবতার লীলাভূমি সেই সরোবরটাতে পড়চে । এই স্থানটি নিবিড় বনে ঘেরা, একটা সংকীর্ণ গহবরের বা বড় ইদারার মত— যেন ইদারার মধ্যে বসে মাথার দিকে চেয়ে আছি। বড় বড় আম, গাচাকেন্দ, বা গাবগাছ, বেত, ফান, লম্বা লম্বা তৃণ, লন্দাম, করন্ড আরও অসংখ্য বন্য গাছে ছায়ানিবিড় । জলপতনধৰনি দ্বারা দ্বিখন্ডিত সেই গভীর আরণ্যনিঃশব্দতা সদর অতীতের কথা, অন্তরের কথা, বিশবদেবের সন্টি-বৈচিত্রোর কথাই কানে কানে বলে, সমাহিত মনে শনিতে হয়। এই রকম জলাশয় সম্পবন্ধেই কৰ্ণেল ডেলটনের সেই উন্তিটি খাটে ৪ - — "Pools, shaded and rock-bound in which Diana and her nymphs might have deported themselves." অনন্তের মৌন ইতিহাস এখানে অাঁকা আছে পাথরের দেওয়ালের সন্তরে সত্তরে । বৈদিক আৰ্য্য ঋযিদের আমলেও এই ঝর্ণা ঠিক এমনি পড়তো ঘোর বনের মধ্যে, লোকচক্ষর অন্তরালে এখানে লক্ষ লক্ষ পণিমার চাঁদ উঠেচে, লক্ষ লক্ষ অমাবসার ঘোর অন্ধকার হয়েচে, বন-জন্তুর বংশের পর বংশ নিভয়ে জলপান করেচে- রেল হবার আগে, বনবিভাগের সন্টি হওয়ার আগে বন্য লোক ছাড়া অন্য কারো চোখেই পড়েনি এ সৌন্দয্যভূমি। কে আসবে মরতে পথহীন জঙগলে, জানেই বা কে, খোঁজই বা করত। কে ? এই বিংশ শতাব্দীতেও এ সােথান নিকটবৰ্ত্তীর্ণ রেলস্টেশন থেকে বনপথে একুশ মাইল। তার মধ্যে তেরো মাইল নিবিড় বনানী, শেষের চার মাইল নিবিড়তার বন, যার মধ্যে দিয়ে কোন সময়েই দলবদ্ধ না হয়ে বা উপযন্ত পথপ্ৰদশক না নিয়ে আসা উচিত নয়। পথ হারিয়ে যাবার খবই সম্পভাবনা, একবার পথ হারিয়ে গেলে জনমানবের চিহ্নহীন এই ঘোর জঙ্গলের মধ্যে বনাহসতীর পদতলে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মাখে প্রাণ হারাতে হবে। অথচ কি সৌন্দৰ্য-ভূমিই লকিয়ে রেখেচে তদেবী মানবচক্ষর অন্তরালে। হলদে রোদ রাঙা হয়ে আসচে, আর থাকা ঠিক নয়। সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। নিবিড় পথে চার মাইল গিয়ে মোটরে উঠতে হবে। এই পড়লন্ত বেলাতে হাতী বাঘ বেরিয়ে থাকে সাধারণত । রওনা হয়ে ঝর্ণার ওপারের দিকটাতে চওড়া পাথরের ওপর অনেকটা বসলাম। কতদার লৌহ প্রস্তরের তৈরী ঢাল, পৰ্ব্ববতগাত্র বেয়ে বাণােটা নীচে নেমে ওই জলপ্রপাতের ও ঝণার সলিট করচে। এ আর একটি অপব্ব স্থান। কিন্ত আর বসা চলে না। আবার সেই দগম পথে রওনা হলাম। পথে সেই ঘাসের কুটিরগালির স্থানে এসে মনে হোল বািড় চমৎকার, এখানেই থেকে যাই। সেগনের জঙ্গলের মধ্যে নরম মাটিতে আমি একটা নরম পায়ের দাগ দেখিয়ে বল্লাম-দেখােন আর একটা। মিঃ সিনহা বল্লেন—বহৎ বড় পায়ের দাগ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার - তখন সন্ধ্যার আর দেরি নেই। বনানী অন্ধকার হয়ে এসেচে। -- হঠাৎ মানে পড়লো আজ আমাদের দেশে গোপালনগরের হাট, পঞ্চামাসটার বেগােন বিক্লিক করাচে, মনো খড়ো পানের দোকানে পান বিক্রি করচে। ওরা সেই ক্ষ-দ্র সস্থানে জন্মে চিরকাল ওখানেই আনন্দে আছে, জগতের কি ই বা দেখলে ? এক জায়গায় বড় বড় আমগাছ, কি ফলের সগন্ধ বাতাসে, ঠান্ডা সন্ধাবাতাসে। বনানী থেকে বারাকপরের পল্লীপ্রান্তে এ সময় যেমন সগন্ধি ওঠে তেমনি পাচ্চি। রাধালতার ফলে এখানেও দেখলাম ঝোপের মাথায়। ঝন্দী কাঁটালের কালো পাতার রাশি অন্ধকার আরও কুষ্ণতর করে তুলেচে। ওই ফটেন্ত বনস্পতি-শীর্ষে কমপ্রিটাম ডিকেনড্রাম লতার ফলে শোভা পাচ্ছে। ঘন গম্ভীর দশ্য বনানীর। সন্ধ্যায় সারেন্ডা ফরেসেন্টর নিভৃত বনপথ দিয়ে যাওয়া এ অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। SY