পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছদরে এসে এক জায়গায় দীঘা নামক বন্যগ্রাম। তার প্রান্তভাগে বিরহের’ নামক যাযাবর বন্য জাতির আবাস, নেমে দেখতে গেলাম। অনেক ছেলেমেয়ে ও পরিষ রোদে বসে চীহড়। লতার দড়ি পাকচ্চে। এই ওদের উপজীবিকা। গ্রামে গ্রামে ঘরে বেচে, দড়ি, শিকা—সব তৈরি করে চীহাড়ের বাকল থেকে। খােব শক্ত দড়ি হয়। এক গ্রামে সপ্তাহ দাই থাকে, তারপর অন্য গ্রামে চলে যায়। কোথাও নিদিলন্ট জায়গা নেই থাকবার। একটি র্যাপী বাঁদর নিয়ে এল বিক্রি করতে। আমরা নিলাম না। বেশ সন্দর পাথরে-কেন্দিা চেহারা ওদের। দীঘা ছেড়ে সামটা গ্রামের পথে আমরা চললাম। আবার জগুগল, পাশে একটা ঝর্ণা ও গভীর খাদ। এক এক সময় মনে হয়। সারা পথে গাড়ীগলি উলটে যাবে। তেমনি গভীর অরণ্য। এপথে অনেক বন্য বাঁশি দেখলাম পাহাড়ী ঢােলর জঙ্গলে, এক, জায়গায় বন্যকন্দলীও দেখা গেল। সামটা গ্রাম বনের বাইরে। খ্রীস্টান ও হিন্দর বাস, তবে হো-দের বাসই বেশী ! একটি ছেলে নাম বল্লেী, চন্দন তাঁতি। একটা সভ্য কাপড় পরা ওরই মধ্যে। বল্লাম—- তুমি খ্রীস্টান ? -- না, আমি হিন্দ। -কালী-দগা পজা কর, না বোঙ্গা পজা করা বোঙ্গা পজো করি। একটা গাছের নীচে এরা মরগী বলি দেয় ও আতপ চাউল নৈবেদ্য হিসেবে দেয় { সিংবোঙ্গা এদের পরম দেবতা-সন্যদেব। আরও বিভিন্ন বোঙ্গা আছে-এক এক, রোগের এক এক বোঙািগ । সামটা থেকে এলাম জেরাইকেলা। এখানে এক ছোকরার সঙ্গে আলাপ হোল Range আপিসে। বাড়ী খলনায়, এখন এখানেই দ-তিন বৎসর জঙ্গলে কাঠের ব্যবসা করে বাস করচে। রেঞ্জ আপিসে দেখা করতে এল-শািনলাম। এখানে বেশ ম্যালেরিয়া ! জেরাইকেলা থেকে রওনা হয়ে তিন মাইল যেতে গভীর অরণ্য শার হোল। একদিকে গভীর অরণ্যভরা নদীখাত, অন্যদিকে পাহাড়ের দেওয়াল। পোণ্ডগা পয্যন্ত সমােনই অরণ্য। এক্সপোর্ট নাকা নামাক বনবিভাগের কলমচারীর আবাসস্থানের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলাচি, একজন লোককে ডালি করে নিয়ে যাচ্চে, জঙ্গলে B, T., T. কোম্পানীর কাজ করছিল, ম্যালেরিয়া ধরেচে। আবার জঙ্গল। পোণ্ডগা এলাম বেলা আড়াইটাতে। আগে এখানে B., T., T. কোম্পানীর আপিস ছিল, এখন কিছ নেই। পোণ্ডগা থেকে মনোহরপরের পথে রওনা হই। মিঃ সিনহা। ১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে বনবিভাগের শিক্ষানবীশী করতে এই পথে একা সাইকেলে আসেন, অতি দরারোহ ও জঙ্গলাকীর্ণ পথ- এর আগে বনের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তাঁর। কি ভাবে একা এখানে এলেন, আজ তাঁর মখে শোনা পৰ্যন্ত এই পথ দেখবার বড় ইচ্ছা ছিল-এবার সে পথও দেখলাম এবং কোল বোংগা নামক গ্রামে যে কুটিরে তিনি রাত্ৰি কাটিয়েছিলেন, সেটাও দেখলাম। কুলির সন্ধ্যায়। এখানে পৌছে আর তাঁর জিনিস নিয়ে যেতে চাইল না। এখন সে কুটিরের অনেক পরিবত্তন হয়েচে, পাবে আঠারো বছর আগে বন এখানে ঘনতর ছিল। কোলবোংগার প্রান্তে এক পাহাড়ের ওপর একটি ছোট কুটিরে এক গোঁসাই জাতীয়: কৃষক বাস করে। বন্ধ গোঁসাই ধান ঝাড়াচে পাহাড়ের ওপরে খামারে। সেখান থেকে সন্দর দশ্য চারিদিকে এবং খািব কাছে উচ্চ পর্বতমালা ও শিখরদেশ। সভ্যতার চিহ্ন” কিছ কিছ দেখা গেল এর পরে, ঘিনডং নামক পথানে—এক্সপোর্ট নাকার আপিসের 80