পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“সামনে কয়েকটি বালক স্কুল থেকে আসচে। তাদের কাছে ডাকলাম, ওরা মনোহর* পরে ইউ. পি. স্কুলে পড়ে, ছ’ মাইল দরবত্তী কোলবোংগা গ্রাম থেকে রোজ মনোহর* পরে পড়তে যায়। মনোহরপর এলাম-দর থেকে রেলের ধোঁয়া দেখে মনে আনন্দ হোল। কোইনা নদী পার হয়ে মনোহরপর বাজারে এলোম-চায়ের দোকান, খাবারের দোকান-কি আশচয্য জিনিস যেন। চোখে চশমা ভদ্রলোক ছড়ি হাতে বেড়াচ্ছে, এ যেন এক নতুন দশ্য আজ আট-নাদিনের জঙ্গলের গভীর নিজজনতার পরে। দোকান, বলে জিনিস আছে দনিয়ায়, সেখানে পয়সা দিলে তুমি সিগারেট, খাবার, চা কিনে খেতে পারো--- ডাকঘর আছে, ইচ্ছামত চিঠি লিখে ফেলতে পারো, এ যেন নতুন অভিজ্ঞতা। মনোহরপর বাংলো সেন্টশনের কাছে একটি পাহাড়ের ওপরে। বেলা পাঁচটায় সেখানে পৌছে গেলাম। চারিদিকের দশ্য ও দারের শৈলশ্রেণী দেখা যায় এই পাহাড়ের ওপরে বসে। সায্য অস্ত যাচ্চে, আমি বাংলার কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে ভাবচি ঐ ঘন শৈলারণ্য থেকে এসেচি, ওরই মধ্যে কোথায় সেই শিশিরদা জলভূমি, গাঁহা, ওরই দগম প্রদেশে সেই অপব্ব-সন্দর টোয়েব। জলপ্রপাত, জাতিসিরাং, বাঘের থাবা অাঁকা সেগান বন । বনের দেবতা মারাং বোঙগাকে প্ৰণাম । আজ সকালে উঠে একটা বেড়াতে গেলাম। বাঙালীর মখ অনেকদিন দেখিনি। মনোহরপর বাজারের পথে সন্ধীর ঘোষ বলে এক ভদ্রলোকের বাড়ী গিয়ে উঠলাম। তাঁর বাড়ী খলনায়। আনন্দ হওয়াতে তিনি চা খাওয়ালেন, ভাত খেতে বল্লেন। বড় ভদ্রলোক। সেখানে বসে সারেন্ডা ফরেস্টের গলপ করলাম। এসে চা খেয়ে ‘দেবযান” লিখতে বসি। মিঃ সিনহা আফিস তদারক করতে গেলেন। রেনজ অফিসারের নাম সালেমান কারকাট্টা, হো খ্ৰীষ্টান। রোদ পিঠে দিয়ে বসে লিখলাম অনেকক্ষণ। তারপর তেল মািখলম রোদে বসে। মনে পড়াচে নদীর ধারের কথা বারাকপরের, হয়তো ছোট এড়াঞ্চির ফল ফটেচে এতদিন। ফণিকাকা তামাক খেতে খেতে গলপ করেচে বারিকের সঙ্গে। সামান্য বিশ্রাম করলাম খাওয়ার পরে, তারপর ঘােম ভেঙে গেল । সেদিন শ্যামাচরণদা'র বোন পদটি দিদিকে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেন মায়ের মত যত্ন ধন্যবচে। কল্যাণীর কথা ভাবচি, এতক্ষণে সে কি করচে ? বাইরে চেয়ে দেখচি, রোদ পড়েচে পাহাড়ের শালগাছের গায়ে। বিকেলের রোদ, হঠাৎ মনে পড়লে বাসান গাঁয়ে মোহিনীকাকার চন্ডীমন্ডপের কথা। কে আছে সেখানে এখন ? কি করাচে তারা ? মারাতিপরে আমার মামার বাড়ীর সেই ছাদটি, সেই শৈশবের লীলাভূমি কলামোচা আমতলা— এত সস্থানে বেড়ালম, এখনও যেন মামার বাড়ীর পিছনের বাঁশবন রহস্যময় মনে হচ্ছে। শৈশবের মতই বারাকপরের তেতুলগাছটার তলায় আমাদের বাড়ীর পাঁচিলের পিছনে কখনো যাইনি, বাগানে, পাড়ার বহরস্থানে কখনো যাইনি আমাদের গাঁয়ে। উঠে পাহাড়ের ওপরে রোদে একটা পাথরে বসলাম। বাংলোর ঠিক পিছনেই পাহাড়ের সব্বোচ্চ অংশ। তার একটি নীচের অংশে আমাদের বাংলো । এক মিনিটেই পাহাড়ের মাথায় গিয়ে বসলাম। আমার সামনে বিস্তৃত সারেন্ডা ও কোলহান শৈলমালা আংকুয়া লৌহখনি লাল দেখাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে পাহাড়ে মাথায়। সারেন্ডা পৰ্ব্ববতমালা ও ছোটনাগপাের মালভূমির সংযোগস্থলে সারে"ডা টানেলের মধ্যে দিয়ে বেঙ্গল নাগপাের রেলপথ চলে গিয়েচে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পািকব দিকে ? ঐ পব্বতমালার ওপারে বহন্দরে ঘাটশিলা, যেখানে কল্যাণী রয়েচে । তারও বহন্দরে 8S