পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রস্তরময় অংশ, চীহড়। লতা, রামদাঁতনের কাঁটা লতা, শানে ঝোলা একটি কি গাছ আমাদের সামনে-এক ধরনের লডজাবতী। ফলের মত বনফল-পৰ্ব্ববতসানিতে, যেন এক বিরাট চিত্রকারের বিরাট ছবি। কি অপব্ব দশ্য চোখের সামনে মক্ত হল! না। দেখলে এ দশ্যের বিরাট মহনীয়তা, গাম্পভীৰ্য্য, ভয়, বিস্ময়, সৌন্দয্য কিছই বোঝানোয় যাবে না। আমাদের কত নীচে বাশবনে পাখী উড়ছে একদল। ন’মাইল এ সম্প্রথান মনোহরপর থেকে। তারপর অতি কন্টে বহ দগম কাঁটাবন ভেঙে আবার মোটরের কাছে এসে পৌঁছলাম। পথ-প্ৰদশক না থাকলে অসম্পভব নামা পনরায় পথে। ফরেসটি রেন জার পথ হারিয়ে গেল। আমরা অন্যদল অন্যপথে ভুলে চলে গেলাম। নামচি, নামচি-রাসােতা আর আসে না। তেমনি রামদাঁতনের কাঁটালতা সব্বাত্র-পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। কাঁটায়। এই সস্থানে কখনো কেউ আসেনি। আমি বলতে পারি। মিঃ সিনহা। এ পথে এসেছিলেন। ১৯২৫ সালে নভেম্বর মাসে—ঠিক এমনি সময় কোল বোংগা থেকে সাইকেলে। যতই অগ্রসর হই বোংগার দিকে, সেই ঘোর জঙ্গলের মাত্তি দেখে মনে হয় এ দেখচি ট্রপিক্যাল ফরেস্ট। এই পথে একটি তরণ যােবক একা কি ভাবে এসেছিল। তাই ভাবি। তিনি তখন নব বিবাহিত, পথের চেহারা দেখে ভয়ে উইল করতে চাইলেন, এক এক সন্থানে এমন জঙ্গল যে চারিধার থেকে চেপে ধরচে ঘোর জঙ্গলে। কণার জল খেতে খেতে অগ্রসর হয়ে এই পোংগায় এসে পৌছেন । এক দিকে একটা ঝর্ণা, বড় বড় পাথর-অবশেষে আমরা পৌছে গোলােম একটা খোলা জায়গায়। সারগন্জার ক্ষেতে ফল ফটে আছে দেখে মনে হোল লোকের বাস দেখাঁচ রয়েচে এখানে। এইখানে B.T.T. কোম্পানীর করাতের কারখানা ছিল আগে। জায়গাটার নাম হোল পোংগা। এই ব্রিটিশ কোম্পানী সিং ভূমের এ অঞ্চলের বনভূমির যাবতীয় কাঠ কেটে চালান দিচ্চে আজ চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে। এদের শেয়ার-হোলডারদের মধ্যে পালিয়ামেণ্টের মেশবার পয্যন্ত আছে। একটা খাব বড় চালাঘরে এদের ফরেস্ট ম্যানেজার মিঃ লকনার থাকে। কেরানীদের থাকবার জন্য একটা ধাওড়া ঘর আছে। দ-একজন বাঙালী মেয়েকে যেন দেখলাম, তবে ঠিক বলতে পারি না! তারপর মাইল খানেক এগিয়ে এসে আমরা উসরিয়া বলে একটা জায়গায়, মিঃ সিনহা যে ঘরে থাকতেন। ১৯২৫ সালে, তাই দেখতে গিয়ে দেখি সেখানে বসবাস নেই। কিন্তু অপব্ব সন্দর সস্থান। উসরিয়া বলে একটি পাহাড়ী নদী বয়ে যাচ্ছে খাব শব্দ করে, বেশ চওড়া নদী-অসংখ্য পাথর ছড়ানো। একদিকে কি সন্দির বনের বড় বড় গাছ ও পাষাণময় উচ্চ তীর। অপরাহের ছায়া পড়ে এসেচে, রোদ হলদে হয়েচে— পানিতরের তেতলা বাড়ীর ছোট্ট ঘরটা যেন এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। অনেকক্ষণ নদীর ধারে বসে রইলাম, কুলকিল শব্দ যেন এই বনশ্ৰীর অনন্ত সঙ্গীত। যেদিন ভারতে প্রথম বেদগাথার উদাত্ত সার ধবনিত হয়। উসরিয়া ঝর্ণা তখন বহন বহন প্রাচীন। বেদপারগ। ও রচয়িতা ঋষিদের অতি আতি বদ্ধ প্রপিতামহের শৈশবেও এ এমনি বয়ে চলতো ঘনতাঁর বনানীর মধ্যে, আপনাতে আপনি মত্ত, চপল খাঁশিতে ভরা বন্য মেয়ের মত প্ৰাণোচ্ছল না।তাচ্ছন্দে ছটে ছ ডট, আজকার দিনের মত তখনও তার দাধারে ফটতো দেবকাণ8নের ফল, বন্য শেফালী, পাষাণের তটে কত শরৎ ও হেমন্ত সকালে ঝরা ফলের রাশি ছড়িয়ে দিত। আজও যেমন দেয়, কত চাঁদ উঠেচে, কত পাখী গেয়েচে ওর দাধারের শৈলারণো। সে কি প্ৰাণ-মাতানো কুহকুহ ধবনি, বাঁদিকের বাঁকে বড় বড় গাছের মাথায় কম প্রিটাম ডিকেনড্রাম লতার কাঁচিপাতায় হলদে রোদমাখা সে কি সৌন্দৰ্য্য, কি শান্তি, কি নিস্তব্ধতা—কাদা নেই, ধলো নেই—শধ পাষাণময় তীর, 8ኪዖ