পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলবিছানো নদীগভর্ণ। এইসব স্থানে প্রাচীন দিনে তপোবন ছিল। নইলে আর কোথায় থাকবে ? এরই কাছে ঘন বনের মধ্যে বনবিভাগের সংরক্ষিত অঞ্চলে (Preservation plot) ১৮o ॥২o১০ বছরের পরানো শালগাছ দেখলাম। আমার ঠাকুরদাদা যখন বালক, তার আগে থেকেও এ গাছ। এখানে রয়েচে। তবে তখন ছিল চারা মাত্র। বনস্পতিদের যারা দেখেনি, তারা উপনিষদের ঋষিদের মন্ত্ৰ ‘যো ওষধিষ, যো বনস্পতিষ’ এ কথার মৰ্ম্মম বনবাবে না। সন্ধ্যার আগে আমরা অপব্ব সন্দের বনপথে ছোটনাগরা এলাম। সামনে গায়ায় উচ্চ পাহাড়, আগে ভেবেছিলাম সলাইয়ের চিড়িয়া খনির। রাঙা পাথর বার করা জায়গাটা যেমন মনোহরপর বাংলোর পাহাড় থেকে দেখা যায় তেমনি। সন্দর জায়গাটি —-সেন্টশন থেকে কুড়ি-বাইশ মাইল দরে, চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা বনে ঘেরা সস্থানটিতবে একটা বন্য গ্রাম আছে, তারা বাজরা সরগাজা ইত্যাদি বনেচে ক্ষেতে। পোংগা থেকে ছোটা নাগরার এই রাস্তাটির অত্যন্ত সন্দের দশ), একদিকে বড় বড় পাথর ও নিজজন ঘন বনের মধ্যে দিয়ে পদে পদে সৌন্দৰ্য্যভূমি সন্টি করতে করতে ছটে চলেচে উসরিয়া নদীটি-বাঁদিকে ঘন বন, কমপ্রিটাম ডিকেনড্রামের মোটা মোটা লতা গাছের মাথায় ঠেলে উঠে এদিকে ওদিকে নিরালম্পিব অবস্থায় শন্যে দলচে, যেমন উসরিয়া নদীর দাধারে উচু মাসতুল-সমান বনস্পতিদের মাথায় এমনি লতা দলছিল, সাদা সাদা কচি পাতার সম্পভার নিয়ে, যেন সাদা ফল ফটেচে ঝোপের মাথায়। রোদ রাঙা হয়ে এসেচে। গহা পাহাড়ের মাথায়। আমরা ওদিক দিয়ে ঘরে আবার এদিকে এসে পড়েচি। এই পাহাড়ের ওপারে গয়া, steep রাস্তা দিয়ে উঠে বনের মধ্যের পথে সাড়ে ছ' মাইল মাত্র, কিন্তু মোটরের রোড দিয়ে বাইশ মাইল। আমি বললাম—তবে শশাংদাবরে এখান থেকে কেন দেখা যাবে না ? তিন হাজার ফন্ট উচ্চ পাহাড়—সেদিন শশাংদাবােরর মাথা থেকে আমরা ছোটনাগরা দেখেছিলাম—এখান থেকে কেন শশাংদাবরী দেখা যাবে না ? গয়ার সমশ্রেণীতে যে পাহাড় টানা চলে গিয়েচে-তারই এক জায়গায় শশাংদাবর খব উচ, আমরা ঠিক করলাম। সন্ধ্যায় একটি ঝর্ণার ধারে নিবিড় অন্ধকার বনে, গ্রাম থেকে কিছদরে বসি। সারেন্ডার সব স্থানই ভাল, কত সহস্ৰ beauty Spot যে এর মধ্যে ইতস্ততঃ ছড়ানো--- তা কে বলবে ? আমার আবার সব জায়গাই ভাল বলে মনে হয়, সতরাং চারিদিকেই beauty Spot-এর ভিড়ে দিশাহারা হয়ে আছি। নক্ষত্ৰ উঠেচে অন্ধকার আকাশে বনস্পতি-শীর্ষে। চলে এলাম। তাড়াতাড়ি, কি জানি হাতীটাতী আসতে পারে। বড় শীত। আগানের পাশে বসে। সারদানন্দের “রামকৃষ্ণদেবের জীবনী’ পড়ি। আজ সকালে উঠোঁচ খাব ভোরে। সায্য তখনও ওঠেনি। বেশ শীত। চা খেয়ে বসে লিখচি। তার পরে সালাইয়ের পথে পাঁচ মাইল গিয়ে ব্যদিকে জঙ্গলের গায়ে হেন্দেসিরি পাঠকজির saw-mil দেখতে গেলাম। কাছেই একটি ঝর্ণা বয়ে যাচ্চে, নিজজন বনে ঘেরা beauty Spot, তার মধ্যে ছোট কারখানাটি। একটা পাহাড়ের ওপর মালিকের জন্যে এক ছোট বাংলো করে রেখেচে, মাটির মেজে গোবর দিয়ে রেখেচে । এখানে বসে লেখাপড়ার কাজ বেশ চলে। বেলা একটার সময় ফিরে তেন তারি ঘাটে গিয়ে কেইনা নদীতে পার হওয়া যায়। কিনা দেখে এলাম। কোইনা নদীর সঙ্গে বার বার দেখা হচ্চে, প্রত্যেক বাংলোতে থাকতে। কেবল দেখা হয়নি। তিরিলপোসি থাকতে। অপব্ব শোভা এই বন্য নদীর, 8S দিনলিপি-৭/হে অরণ্য কথা কও-৪