পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনপাদপ, নটরাজের মত তাগডব নত্যের ভঙ্গীতে শাখাবাহ ছড়িয়ে কি একটা গাছ ‘বনের মধ্যে দাঁড়িয়ে শোভা আরও বাড়িয়ে দিয়েচে। প্ৰভাতের শিশিরন্সিন্ত নিস্তবধ বনস্থলীতে কতপ্রকার বনবিহঙ্গের অদ্ভুত কুজন। বারান্দায় চেয়ার পেতে শােনচি একটা পাখী টং টং টং টং করে ডাকচে, আর একটা পোষা টিয়ার মত যেন বলি বলচে, চোখ বজে কান পেতে শানচি ও পক্ষীকুলের কলতান। বাম দিকের খািব উচ্চ পাহাড়ের এক জায়গায় অনেকখানি অনাবত পাথর বেরিয়ে আছে। ঠান্ডা হাওয়া বইচে। ঈষৎ কুয়াশা লেগে আছে সামনের পব্বতগাত্ৰে-যেন মনে হচ্চে নীচেকার বনে বঝি কেউ আগন দিয়েচে, তারই ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে উঠচে পাহাড়ের গায়ে। বাঁদিকে পাহাড়ের নীচে কোইনা নদী বইচে পদে পদে সৌন্দৰ্য্যভূমি রচনা করে। ট্ৰলি করে লো যেতে যেতে ঘন বনের ডান দিকে দ্য জায়গায় এমন সন্দের চওড়া পাষাণময় নদীগভর্ণ বনের ফাঁকে চোখে পড়লো। তার ওপারে কমপ্রিটাম লতার ফলফোটা বিশাল শৈলসােনর অরণ্যানী। কি গম্ভীর শোভা ! সিং ভূমের ও সারেন্ডার বানান্তরালে কত স্থানে কত সৌন্দৰ্য্যভূমি ভগবান যে ছড়িয়ে রেখেচোন, কৃপণের মত দ্য একটাকে গানে গোথে রাখেননি—ধনী দাতার মত দহত পরে ছড়িয়েছেন হাজারে হাজারে। এই পথ দিয়ে ট্রলিতে সন্ধ্যার পকেবা ফিরবার সময় রাঙা রোদ মাখানো পন্বত ও বনানীশীর্ষে সামনের দইয়া লৌহ খনির অনাবািত রক্তবাণ লৌহ প্রস্তরের পবিতগাত্রে বহন উচ্চ শৈলশিখরে মোটা মোটা লতা দোলানো, অসংখ্য দেবকাঞ্চন ফােলফোটা, ময়র ও ধনেশ পাখীর ডাকে মােখর অরণ্যানী দেখতে দেখতে ওই কথাই বার বার মনে পড়ছিল। সন্ধ্যায় ফিরবার পথে ঘন ছায়া পড়েছে বনে বনে, চারিধারে পাহাড়ের ছায়া-কোনো অজানা বনপল্পের সবাস অপরাহের শীতল বাতাসে। আমি মিঃ সিনহাকে বল্লম কিসের বেশ গন্ধ পেয়েছেন : Range Officer সালেমান কারকাটা ছিল ট্রলিতে, সেও কিছ বৰ্ব্বতে পারলে না। আংকুয়া জংসন, থেকে চিড়িয়া মাইনস, পয্যন্ত একটা লাইন গিয়েচে, একটা গিয়েচে দইয়া মাইনসে। এ দটিই বেঙ্গল আয়রণ ও সন্টীল কোম্পানীর খনি। মনোহরপর থেকে এই পনেরো মাইল এরা ঘন বন পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ছোট লাইন পেতেচে। এ দই লৌহপ্রস্তরের পদবীত থেকে oিre নিয়ে যাবার জন্যে, মনোহরপর রেলওয়ে সাইডিং-এ। কলকাতার ক জন এই সন্দর রেলপথটির খবর রাখে ? আংকুয়া জংসনে একটা সেলনি পেলাম, তাতে চিড়িয়া মাইনসের বড় সাহেব মিঃ মেরিডিথ যাচ্ছে। তার সঙ্গে গলপ করতে গেলাম। সে বল্লেী, চিড়িয়াতে ফটবল আছে, টেনিস আছে, রেডিয়ো আছে। আবার চলেচি ছোট ট্রেনে বনপথে, বাঁদিকে হামশােডা নদী বনের পথে মন্মর শব্দে বয়ে গিয়ে কোইনাতে মিশেচে। চিড়িয়াতে পৌছে দেখি সামনের বহর উচ্চ পাহাড়ের গা বেয়ে খাড়া রেলপথ উঠেচে পৰ্ব্ববতশিখরে। Skip উঠেচে মোটা তারের বন্ধনে- রাঙা ধলোমাখা হো কুলী মেয়েরা সব্বত্র কাজ করচে। আমাদের Skip দিয়ে ওপরে উঠবার সময়ে বেশ লাগলো, কখনো উঠিনি।--কিন্তু ভয়ও করলো খব। কল্যাণী কখনো উঠতে পারতো না। এ পথে-ও যা ভীতু! ওপরের শিখরে উঠে নীচে চেয়ে সমতলভূমির অপব্ব দশ্য চোখে পড়লো। ১৪৩৩ ফন্ট ওপর থেকে নীচের দিকে দেখচি এমন ভাবে, ঠিক যেন একটা উচ্চ বাড়ীর ছাদের কানি সে ঝাঁকে আছি। এ সব দশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যায় না। এই লৌহ প্রস্তরের বিরাট শৈলমালা লেদাবরী, অজিতাবাের ও বন্ধাবর এই তিনটি নামে অভিহিত। এর সব্বোচ্চ শিখর হোল বাদ্ধাবর ২৭o o ফােট উচিত। অনাবত লৌহপ্রস্তরের বিরাট শৈলগাত্র সেদিন পনেরো মাইলদর মনোহরপর বাংলো GNS