পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফরেস্ট গাড, দটি খড়কুটাে জৰালিয়ে চা করলে। মহিষের দধের মাখন জমে গিয়েচে শীতে, মাখন-চা হোল। খেয়ে সেই বনের পথে আবার ফিরলাম। কি ভীষণ নিস্তব্ধ জনহীন wilderness!! যে এসব না দেখেচে, তাকে এর গাম্পভীয্য কিছই বোঝানো যাবে না। সারেন্ডা অরণ্যের অন্তরালে হাজারো সৌন্দৰ্য্যভূমি ছড়ানো-আমি আফ্রিকায় যেতে চেয়েছিলাম বন দেখতে! আবার সেই কাঁটাওয়ালা ফল—এদেশী নাম “মিনডো জোটে, কাপড়ে জামায় লেগে ভারি হয়ে গেল। উঠাঁচ, উঠাঁচি-চড়াইয়ের দাগম পাব্বিত্যপথ । অতি কন্টে চলেচি, ঘন ঘন হাঁপাচ্চি। কক কক, শব্দ করে বিচিত্র বর্ণের বন-মোরগ পালিয়ে গেল। খনিতে এলাম, বেলা পড়েচে, কি সন্দির সমতলের দশ্য। অনাবত লৌহ প্রস্তরের শৈলিগাত্রেরই বা কি ভীমদৰ্শন চেহারা। এক জায়গায় অনেকখানি কোয়াটাজাইট পাথর বেরিয়ে আছে অনেক ওপরে—যেমন নিচের ঝর্ণার দাধারে অনেক জায়গায় অতি অদভুতভাবে ছিল। Skip দিয়ে একটি তরণী হো মেয়ে উঠে এল বেশ শান্তভাবে। যারা কখনো Skip-এ ওঠেনি। তাদের মােচ্ছা যাওয়ার কথা। আমরা নামচি, অনেকগলি ধালিমাখা কুলি মেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে দেখচে, এঞ্জিন ড্রাইভারকে বলচে- -ঠারো, 3 নামবার সময়ে ঢােলর দিকে চেয়ে ভয় করলো—যেন কোন নরকে নেমে চলেচি। যদি শেকল ছিড়ে যায়, তবে চণ-বিচােৰ্ণ হয়ে যেতে হবে। ট্রেনে এলাম। আংকুয়া জংসন-ট্রলিতে সেই অপব্ব বনপথে এলাম। সবাই। বড় ঠান্ডা বাতাস লাগচে সামনে থেকে ট্রলির বেগে, বনপল্পের সবাস বাতাসে, দােপাশে বনে বনে অজস্র দেবকাঞ্চন (bohinia) purpuria) ফল ফটে। ধনেশ পাখী ডাকচে বনে। বাঁদিকে কোইনা নদীর ওপারে পািব্বত-শীষে ও বনস্পতি-শীষে রাঙা রোদ। সলাই বাংলো তিন মাইল, ওখানে আমাদের মোটর আছে। ওই সামনে দাইয়া খনির শিখরদেশ দেখা যাচ্চে রাঙা দগদগে ঘার মত সবজি শৈলগাত্ৰে—ঠিক সবজি নয়, ধন্সর শৈলিগাত্রে। এ বনে, যজ্ঞডমর ও শিমল, আম ও পানজন গাছ অনেক, আলোকলতা ও চাঁটজাতের মত ফল বিশিষ্ট সেই গাছটাও যথোিট। শেষোক্ত গাছটা আমাদের বারাকপরের ভিটেতে আছে। মনেও পড়লো বারাকপরের কথা-কুঠির মাঠে শীতের অপরাহু নেমেচে, আলকুশীর লতা দলচে বনে ঝোপে, ইন্দ রায় তার বাড়ীতে বসে ফণিকাকার সঙ্গে গলপ করচে-বেশ দেখতে পাচ্চি। সলাই থেকে তখনি মোটর ছাড়া হোল। সালেমান কারকাটাকে আমরা মোটর উঠিয়ে নিলাম--নিতুবা সাইকেলে এই সন্ধ্যায় সলাই থেকে ছোটনাগড়া সাড়ে সাত মাইল ভীষণ বনের পথে যেতে হবে। হাতীর বড় ভয় এ সময়। বাঁদিকে সেই সউচ্চ প্রায় ২০oo ফািট উচ্চ পৰ্ব্ববতমালার দিকে চেয়ে আছি। মোটর ছটিচে বেগে, কখনো ঘন বনে ঢকচে কমপ্রিটাম লতার শাদা কচি পাতা দোলানো ঝোপের মধ্য দিয়ে, কখনো উঠচে, কখনো নেমে পাব্বিত্য নদী পার হচ্চে। আমি দেখচি বদিকের পাহাড়ে কোথাও খানিকটা অনাবািত পব্বতগাত্র, কোথাও একটা গাছ। এই সন্ধ্যায় কল্যাণীর কথা বড় মনে হচ্চে, ওকে হয়তো কাল দেখবো। অনেক দরে ইছামতীর পারে একটি তেতলা বাড়ীর ওপরের ঘরটিতে—সেখানে এখন কেউ থাকে না-যে ছিল, অনেক কাল আগে সে কোথায় গিয়েচে। গৌরী-তার &○