পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা মনে হচ্চে আজ সন্ধ্যায়। এই সময়ে সে মারা গিয়েছিল। আজ বিশ বৎসর আগে। ভগবান তার মঙ্গল করন। দদিকের বন সন্ধ্যার অন্ধকারে নিবিড়তর দেখাচ্চে, সেদিনকার সেই ছোট ঝর্ণাটি পার হলাম, যার ধারে লতাকুঞ্জে রাজা অভিরাম, টংয়ের ঢোল পড়ে আছে। অনেক রাত্রে একবার আমি বাইরে এলাম, আকাশের দিকে চেয়ে দেখি নক্ষত্রসমােহ ঠিক হীরকখন্ডের মত জবলচে, গায়ার পাহাড়ের মাথায় একটা নক্ষত্র দপ দপ করাচে, একবার নিবচে আবার জবলচে যেন। আকাশে নক্ষত্ৰসমহের এমন দীপ্তি বাংলা দেশে তো দেখিই নি, এমন কি মনে হয়। ঘাটশিলাতেও দেখিনি। একটা সারেন্ডা বা সিং ভূম দশ নেই। আমি মগধ, কিন্তু অনন্ত ব্ৰহ্মান্ডে। অমন কত অনন্ত কোটি beauty Spot ছড়ানো রয়েচে, ঐ সব নক্ষত্রে নক্ষত্রে কি বিচিত্র জীবনধারা, আত্মার অনন্ত গতিপথে ওদের নিয়েও তাঁর লীলা। বিসময়ে সন্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। বন পাহাড়ের মাথার ওপরে এই অনন্ত ব্ৰহ্মান্ডের লীলা, শােধ তাঁর কথাই মনে भge । সকালে উঠে দেখি খািব কুয়াশা হয়েছে, সাদা ধোঁয়ার মত কুয়াশার রাশি উপত্যকা থেকে উঠচে। ওপরে, গয়ার পাহাড় ঢেকে দিলে। বড় শীত। পাহাড়ের নীচে বনশ্রেণী কুয়াশায় ঢাকা, ধীরে ধীরে সােয্য উঠলো। সােয্যদেবকে প্ৰণাম করলাম। আজ এখান থেকে চলে যাবো। সারেন্ডা অরণ্যের কাছে বিদায় নিলাম, হে সপ্রাচীন অরণ্য, তোমায় প্ৰণাম করি। শত বিসময়ের সৌন্দৰ্য্যাভূমি তোমার মধ্যে হাজার বৎসর ধরে লকানো ছিল, কেউ আসেনি দেখতে- এতদিন দেখে। ধন্য হয়ে গেলাম। আজ ষোল দিন ধরে বনপক্ষেপ সবাস উপভোগ করেচি তোমার বনে বনে, তোমার বনবিহঙ্গের কলগীতি শনে কান জড়িয়েচি শহরের কলকোলাহলের পরে, তোমাকে প্ৰণাম করি। কত দেবকাঞ্চন ফল, কত লন্দাম, কত অপরিচিত নাম-না জানা ফল, কেকাধৰনি জলপ্রপাতের জলপতনধৰনি জনহীন গহন বনে, সেই গহা দটি, কত বনলতার অদভুত মনোরম ভঙ্গি, ধনেশ পাখীর ককােশ চীৎকার, ক্ষদ্র barking deter এর ঘেউ ঘেউ শব্দ, বন্য বানরের ডাক (যেমন কাল ডাকছিল আংকুয়া জলপ্রপাতের বনে), অপব্বদর্শন বনাব্যত শৈলমালা, লৌহপ্রস্তরের বিশালকায় খনি---এ সব দেখবার শনিবার, উপভোগ করবার অভিজ্ঞতা যে কত দিল্লভ তা আমি জানি। সেইজন্যে ভগবানকে ধন্যবাদ দিই, যিনি আমাকে এখানে এনেচেন। আজ সকালে চা খেয়ে মোটরে রওনা হই গয়াতে। গাড়ীর সিম্প্রং ভেঙে গিয়েচে বলে জিনিসপত্র কুলির মাথায় পাঠানো হোল গায়াতে। মোটর ছেড়ে আসচি, পথে ঝর্ণার পথে কিছদরে আমাদের পাচক বিরশা চলেচে হোটে। কাডিনাল উলসির কথা মনে হোল ওকে দেখে। আজ বনের পথে মোটর চলেচে, আমি ভাবচি প্ৰায় চারশো মাইল পথ অতিক্রম করে চাইবাসা গিয়ে ট্রেন ধরে আজই হয়তো রাত একটাদেড়টায় বাড়ী পৌছে যাবো। খাব আনন্দ হচ্চে আজ সারা পথটি। তেন তারি ঘাটে কোইনা নদী পার হলাম। এখানে সাত-আটজন কুলি আমাদের গাড়ী ঠেলিবার জন্যে, অপেক্ষা করচে । ঘন জঙ্গলের পথে যাবার দিনের সেই কুমডি রাস্তার মোড়ে এলাম। বরাইবার বলে যে গ্রামটি কারো নদীর ধারে সেটি ছাড়ালাম। গয়া এলাম মিঃ রাসবিহারী গঞ্জের বাড়ী, সেখানে মহিলা সমিতির সভানেত্রী। আশা দেবী ও আরও কয়েকটি মহিলা দেখা করতে এলেন আমার সঙ্গে। মিসেস গ্যািপ্ত পরিতোষ করে আমাদের 68