পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেকদিন লিখিনি। কাল সন্ধ্যায় ইন্দবাবার গাড়ীতে ধলভূমগড় থেকে ফিরে এসেচি। ৫ই জানায়ারী তারিখেও একবার গিয়েছিলাম। বড় ভাল লাগে ও জায়গাটা। মন্ত প্ৰান্তরের মধ্যে এখানে ওখানে খড়ের ঘরের সারিা-এরোড্রোমের লোকদের বাসস্থান। শাল, মহল, হরীতকী ছাড়া বিদেশী কোন রোপিত ফল ফলের বক্ষ নেই, কোঠাবাড়ী এক-আধখানা বেশি নেই। বাঁদিকে দরে চারাচাকীর জঙ্গল দেখা যায়। শকিনো শালপাতার বেড়ার গন্ধ রোদ ঝাঁ-ঝাঁ দাপরে ইসমাইল।পরের কথা সমরণ করিয়ে দেয়। চারাচাকীর বনটি অতি চমৎকার, সেদিন যখন জ্যোৎসনা উঠলো। আর কোনো বাড়ী-ঘর দেখা যায় না-অত বড় বিরাট মন্ত space যেন মায়াময় হয়ে উঠলো। যে কোনো সময় ঘরে বা বারান্দাতে বসে সামনে চোখে পড়ে ভালকী পাহাড় ও তা পটভূমিতে ঋজ ঋজ সন্দীঘ শালতার শ্রেণী—কাল আবার মেঘ করাতে দশ্যটি এত সন্দের হয়েছিল। নীল হয়ে উঠেচে শৈলমালা। এখানে যদি কলকাতার শৌখিীন লোকেরা বাড়ী করে টাউন বানাতো, বাড়ীর নাম দিতো। ‘সন্ধ্যানিবাস’ ‘অলকা’, ‘বনবীথি’, ‘‘Hill view' “অক নিলয়’ 'Forest side’ ইত্যাদি, বালিগঞ্জ ফ্যাশানে সামনে ঢাকা টানা বারান্দা করতে কাঁচের প্যানেল বসানো, লক্ষবা জানালায় ফ্রেম বসানো, লতাপাতা আকারের লোহার রেলিং বসানো গোট বসাতো—তাহলেই এই শালবন ও শৈলশ্রেণী, লাল মাটি ও কাঁকারের উচ্চাবচ ঢিবির সঙ্গে, এই রৌদ্রস্নাত দর দিগন্তের সঙ্গে, এই লাল ধলো মাখা সাঁওতাল মেয়েদের সঙ্গে আর কোনো যোগ থাকতো না। সে হয়ে উঠতো একটা টাউন-বালিগঞ্জের অক্ষম ও সক্ষম অনাকরণে। যেমন নন্ট হয়েচে দেওঘর বা মধ্যপরে বা শিমলতলায়। এবং নন্ট হয়েছে খানিকটা ঝাড়গ্রামও। বারাকপাের গিয়েছিলাম ধান চাল গোছাতে। গেলাম সেদিন গটকের সঙ্গে রাঁচী প্যাসেঞ্জারে। যাবার পকেব। দ্বিজবাবার বাড়ীতে বেদান্ত ও ব্রহ্মবাদ সম্পবন্ধে কত আলোচনা করি।-ফিরে এসে আর দেখা হয়নি। কলকাতায় পৌছে—রমেশ ঘোষালের বাড়ী গিয়ে ‘তালনবমী" পাস্তকের contract হোল। সেখানে দেখলাম ‘Indian Arts and Letters’ বলে পত্রিকা, যাতে আমার কথা লিখেচে । সেদিনই তিনটার ট্রেনে বনগ্রামে গিয়ে বন্ধর বাসায় থাকি। টর আছে। এখানেই। ভীষণ শীত রাত্রে। লিচতলায় মনোজবাব, যতীনন্দা, মন্মথন্দার সঙ্গে জমাট আড্ডা। মিতে এসে বল্লে “স্বপ্ন বাসদেব বড় ভাল লেগেচে। অন্ধকারে মনোজবাব ও আমি মিতের সঙ্গে এলাম সরেনের বাড়ী। সন্তু এল অনেক রাত্রে। কত গলপ-বিশেষতঃ সারেন্ডা বনভ্রমণের। সকালে উঠে নন। কুর আনা কেক ও pastry চা দিয়ে খাই। মিতের বাড়ী দােপরে খেয়ে গৌরী ও মিতের সঙ্গে ভাগবদ প্রসঙ্গ আলোচনা করলাম। তারপর বারাকপরে গেলাম। সজনে ফলের সগন্ধ সব্বত্র। ইন্দ ও শ্যামাচরণদার বাড়ী বসে গলপ করি। পরদিন নদীতে সন্নান করে বড় তৃপ্তি হোল। ঘামিয়ে উঠে হারিকেন হাতে ইন্দ রায়ের সঙ্গে গলপ করতে করতে বাজারে বা ‘নগরে গেলাম—যেমন ছেলেবেলােয় দেখতুম অমতে কাকাকে করতে। যেন আমি এই বারাকপরের একজন চাষীবাসী গহস্থ, খাজনা আদায় করে বেড়াই। বারিকের বাড়ী থেকে ধান ও খাজনা আদায় করতে গিয়ে রস খাই ও বেগােন নিয়ে আসি তপলজবুলের বাড়ী থেকে কাপড়ে করে—ঠিক গ্রাম্য গহস্থের জীবন। এখনও ছোট এড়াড়ির ফল গাছে গাছে-একরকম কণ্টকলতার থোলা থোলা ফলের কি সবাস। সজনে ফলের গন্ধ পথের বাতাসে। বিকেলে মল্ল মাস্টারের বাড়ী গিয়ে বসলাম। মেলা স্কুলের ছেলেরা এল, ননী Sy