পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন, সমাচ্ছন্ন উপত্যকায় ঘেরা, সেখানে মকুলবাবার কম্পমকত্তা শিরীশ বেশ চমৎকার একটি ঘর বানিয়েচে দেখলাম, দেখলে থাকতে লোভ হয়। এই নিজন বনাবত উপত্যকায়। এই ঘরের সামনে দিয়ে মকুলবাবার তৈরি রাস্তা পাহাড়ের ওপর চলে গিয়েচে, নিশ্চয়ই জ্যোৎস্নারাত্রে বা ছায়াস্নিগ্ধ বৈকালে এই পথের বনা। আমলকী, আম, পিয়াল ও তেতুলতলায় বেড়ানো বড় মনোরম হবে। একদিন যাবো। ওখানে ও রাত কাটাবো রমাপ্রসন্ন ও গৌরী এখানে এলে । আমরা ঘাট অর্থাৎ পাস পার হয়ে গেলাম। পদব্রজে। সবাইকে গররগাড়ী থেকে নামতে বাধ্য করলাম। এই রাসােতাটার একটা নিবিড় বন্য সৌন্দয্য আছে, বাঁদিকে খাড়া পাহাড়ের দেওয়াল উঠেচে, ডাইনে ৬oo ॥৭oo ফন্ট গভীর খাদ, তার তলা দিয়ে খরস্রোতা (নদীর নাম, বিশেষণ নয়) নদী উপলাস্তৃত বন্ধর পথে বয়ে চলেচে, চারিধারে কত রকমের গাছপালা, কত মোটা মোটা লতা, বনফলের মধ্যে এক রকমের কুচো কুচো নীল ফল আর হট বা (Indigolfera Pulchera) ফটেচে। বাঁদিকের পাথরের দেওয়ালের গায়ে-বনবিহঙ্গের কাকলী বনের শাখায় শাখায়, ঘাট অতিক্রম করে বাসাডেরা উপত্যকায় এসেই মকুল চক্কত্তি কনট্রাকটরের ওই ছোট খড়ের ঘরটা দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। এমন সন্দের শান্ত, নিভৃত শৈলমালা ও বনানী বেন্টিত উপতাকায় থাকে। কিনা মকুল চক্কত্তির কলমচারী শিরীশ ? শিরীশকে আমি জানি, সে কি বঝবে এই বনভূমির সৌন্দয্য ? সে সকালে উঠে বনের মধ্যে চলে যায় কাঠ কাটানোর জন্যে, কাঠ চেরাই করবার জনো--তারপর গাড়ী বোঝাই দিয়ে শাল-বল্লা পাঠায় ঘাটশিলা সেন্টশনে।--যে বনের গাছ কেটে ব্যবসা করে, বনলক্ষী কি তার সামনে মখাবগন্ঠেন অপসারিত করেন ? বেলা দেড়টার সময় আমরা ধারাগিরি পৌছে গেলাম। সঙ্গে এতগলো মেয়েমানষি ছিল, সবাই বড়লোকের বাড়ীর বৌ-ঝি, একবার কি কেউ বল্লে— জায়গাটা বেশ ভালো, কি বেশ, কি চমৎকার! কিছ না, পয়সাই আছে, কিন্তু চোখ নেই। মেয়েমানষিগলোর হাতে এক গোছা করে সোনার চড়ি, কানে কানপাশা, কত বকমের সেজেছে ।--কিন্তু এসেই "ওরে, অমক ওদিকে যাসীন, আমাক তোর ঠান্ডা লাগবে – হৈ চৈ চীৎকার, গোলমাল, ‘বকা কোথায় গেল দ্যাখ্যা দ্যাখ্য' (কুকুরের নাম) এই সব ব্যাপার। অমন চমৎকার বনপাহাড়ের সৌন্দয্যের দিকে কেউ চেয়েও দেখলে না, কেবল আমি আর প্রভাত দিজনে মন্ধে হয়ে বসে রইলাম। কতক্ষণ। তারপর খিচড়ি রান্না হোল, বটতলায় বসে ডাক্তার রক্ষিত, আমি ও প্রভাত কিরণ-তিনজনে খিচড়ি খাওয়া গেল, তাস খেলা গেল, গলপগজব করা গেল। তারপর বেলা পড়লে ছায়া ভরা বিকেলে সবাই পাহাড় থেকে ফিরলাম। কাল বিকেলে দািবলবেড়া এলাম হলদপ কুর থেকে। রাত্রে টাটানগরে ছিলাম, মিঃ ভক্ষমার বাড়ীতে। অনেকে দেখা করতে এল। রাত দেড়টা পয্যন্ত 'দেবযান” সম্পবন্ধে গল্প। সশীলবাবর মোটরে স্টেশনে এলাম ভোর ছ'টাতে। হালদপ কুর সেন্টশনে নেমে এক মাড়োয়াড়ির দোকানে চা ও খাবার খেয়ে বারোজ সাহেবের মোটরালরির জন্যে অপেক্ষা করলাম। বারোজ সাহেবের লোক বল্লে--রাত্রে যা ব্যটি হয়েচে, ওরাস্তায় গাড়ী আসা মশকিল। শোনা গেল দািবলবেড়া এখান থেকে যোল মাইল । দিনটি মেঘাচ্ছন্ন ও ঠান্ডা। হেটে বেরিয়ে পড়ি আমি ও মিঃ ভক্ষমা। কেমন কাঁকারের পথটি একে-বোঁকে আমাদের সামনে দীর থেকে বহন্দরে সদর নীল শৈলমালা ও বনপ্রান্তরের দিকে চলে গিয়েচে। ঐ হোল রাইরক্ষপরের পথ-এ পথ চলে গেল বারিপদ (ka