পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ বিকেলেই দেখে এসোচি মাগড় গ্রামে লাখন মাঝি বলে একটা সাঁওতাল যাবকের একটা চোখ ভালকে একেবারে উপড়ে দিয়েচে-অবিশ্যি ঘটনাটা ঘটেছিল। মাগড় থেকে দািবলবেড়া যাবার পথে জগুগলের ধারে। লাখন টাঙি হাতে জাচ্ছিল দ্য বেলাবেড়া, ভালক মহলগাছ থেকে নেমে ওর ওপর এসে পড়ে, উভয়ে জড়ােজড়ি ও ধসন্তাধসিত হয়। তার ফলে লাখনকে একটা চক্ষর মায়া কাটাতে হয়েচে। পরশ রাত্ৰে বারোজ সাহেবের মরগীর ঘরে বাঘ এসেছিল, সকালে আবার দাগ দেখা গিয়েচে । এই সব শনে নিতজান পাহাড়ের ওপর গভীর রাত্রে আমরা তিনটি প্রাণী বসে থাকবার সময় যে খব নিরাপদ ভাবছিলাম নিজেদের এমন কথা বল্লে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু সব বিপদকে অগ্রাহ্য করা যায় সে অপািকব জ্যোৎস্নারাত্রির শোভা দেখবার জন্যে। পাহাড়ের ওপরে শকিনো শালগা, দোকা (Odina wodier), অজস্র বন্য শিউলি, শিববক্ষে, গোলাগোলি, পড়াশি ; বনতুলসী, ও করম (Adina cordifolia) গাছের জঙ্গলে নিশীথ রাত্রির জ্যোৎসনা পড়েচে, সামনের উপত্যকা ও ওপারের আটকুশি ও পোেটরা পাহাড়শ্রেণীতে বনে বনে সেই জোৎসনা এক মায়ালোকের সন্টি করেচে।--যেন এই জনহীন নিশীথে বনদেব ও দেবীরা এখানে নামেন নিঃশব্দ পদক্ষেপে, তাঁদের মখে মখে ধৰনিত হয় বিশেবর অধিদেবতার নীরব জয়গান। এই বনে (এ পাহাড়টি ছাড়া, এর ওপর বেশির ভাগ শােধই শেফালি গাছ) এ সব গাছ তো আছেই। আরও আছে তুন, লতা, পলাশ Butea Subcrpa, বোংগা, সজম লতা, শাল, আসান, পিয়াল, মহীয়া, অজ্ঞজনে : বট, কদম্ব, কুস্যাম, ধওড়া, রাজ জেহল, কুজারি, রোহান (Soymida Febrifuga) বাঁশ, পিয়াশাল, চীহড়লতা, বেল প্রভৃতি গাছ আছে। অবিশ্যি কোনো একটা জায়গায় এত রকমের ব্যক্ষ একসঙ্গে জড়াজাঁড় করে থাকে না বা নেইও, মানষের তৈরি বাগান ছাড়া। অরণ্যের প্রকৃতিই তেমন নয়, যেখানে যে গাছ আছে সেখানে সেটাই বেশি। শাল তো শালই, অজ্ঞজনেই -ANN K<SAN আজ সকালে তাঁব থেকে বার হয়ে দািবলবেড়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে উঠলাম। সন্দির বনপথে উঠলাম। ঘাটশিলা থেকে যোল মাইল হবে। দরে ভালকি পাহাড়শ্রেণী দেখা যাচ্চে। এখন বেলা সাড়ে পাঁচটা। এখানে বসে এই মাত্র চা ও খাবার খেয়েচি। দরে দরে শৈলশ্রেণী, সামনে সমতলভূমি নীল কুয়াসায় অস্পট । একটা শিলাখন্ডে বসে থাকবার সময় গাছপালার ছায়ায় বসে মনে হোল হিমালয়ের পবিতারণ্যে বসে আছি। পড়াশি বাঁশ, সোঁদাল প্রভৃতি গাছ। কাল সকালে আমাদের তাঁবার পেছনে পাহাড়টার বড় পাথরের চাতালটাতে কতক্ষণ কাটিয়েচি। আকাশ ছিল সনীল, তার তলায় শকিনো শালগাছ ও দোকা গাছের অাঁকাবাঁকা ডালপালার ভঙ্গি —সে একটা দেখবার জিনিস। একটা শিলাখন্ডে রৌদ্রে কতক্ষণ শায়ে রইলাম। রৌদ্রসনাত দিবপ্রহরে চারিদিকের সে বন্য সৌন্দৰ্য আমাকে অভিভূত করে তুললে। সত্যই এ সৌন্দয্য যেন সহ্য করা শক্ত। প্রাণভরে ভগবানের শিলপ রচনা দেখি। বিকেলে আমরা ঘাটদয়ার বলে একটি অতি চমৎকার স্থানে গেলাম, তাঁব থেকে ৪ মাইল দরে মসাবনীর পথে। ছাতনাকোটা ও রাঙামাটিয়া নামে দটি সাঁওতাল গ্রাম পথেই পড়ে —সাঁওতালদের মাটির ঘরগলি দেখবার জিনিস বটে, পরিভস্কারভাবে লেপা-মোছা, রাঙা ও কালো মাটি দিয়ে চিত্তির করা দেওয়ালের গায়ে আলপনার মত পাখি অধিকা, গাছপালা অাঁকা। ঘাটদয়ার জয়গাটাতে দদিক থেকে দটি শৈলমালা এসে ব্রুমনিশন হয়ে শেষ গিয়েছে—মধ্যে হােত পাঁচেক সমতলভূমি, এক পাশে একটা পাব্বিত্য নদী বড় বড় শিলাখন্ডের ওপর দিয়ে বয়ে চলেচে। ঘন বন দ পাশে, ঝর্ণার ওপরে অনাবতে Nტ ტ)