পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাষড়া গাছগালো ঈষৎ অস্পষ্ট জ্যোৎস্নায় কি সন্দির দেখাচ্চে-মায়াময়, অপরােপ। এই সর সংকীর্ণ উপত্যকার সবটা চাঁদের আলোতে আলো হয়ে উঠেচে। কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে রইলাম। বাইরে, কখনও চাই তারা-ভরা আকাশের দিকে, কখনও চাই জ্যোৎস্নার্সনাত দোকা ও শালগা গাছগলির দিকে। আজ সকালে চা খেয়ে সন্নান করে তাঁবার সামনে পাহাড়টিতে উঠে সেই শিলাখন্ডে বসলাম-এখনি আজ চলে যাচ্ছি। এই সন্দর বনভূমি ছেড়ে। আবার কবে আসবো কে জানে ? একট, রোদ উঠেচে, এ পাহাড়ের মাথায় সব শকিনো গাছ, শিউলি বন জঙ্গল, নিম্পপত্র শিববক্ষে, নির্ভপত্র গাছে হলদেরঙের গোলগোলি ফল ফটে আছে, কালো পাথরের ফাঁকে ফাঁকে শকিনো খড় বন। কি একটা শকিনো কাঁটা গাছ অজস্রসব শকিনো গাছ। এখানে, ভারি চমৎকার লাগে কালো পাথরের ওপর নিম্ৰপত্ৰ শকিনো গাছের বন। ভগবানের আশ্চৰ্য্য শিলপ কি সন্দির ভাবে এখানে ফটেচে! বেলা এগারোটাতে মোটর ছেড়ে প্রথমে পৌছলাম মহাদেব শাল। বননিকুঞ্জের অন্তরালে পাপিয়া ও কত বনপাখীর কলকাকলি। বহকালের পরোনো পাথরের কালী প্রতিমা। একটা খড়ের চালাঘরে শিবলিঙগ পোঁতা আছে-গত্তের মধ্যে মাথাটকু মাত্র দেখা যায়। বড় একটা বট গাছ, অনেক আসান ও পলাশ গাছ, কোথা থেকে আম্রমকুলের সৌরভ ভেসে আসছে, প্রাচীন দিনের মানি ঋষিদের তপোবন যেন। মেঘমোদর প্রভাতের স্নিগ্ধ আকাশের তলে কি মনোরম ছবিই এরা রচনা করেছে! মনে হোল আরও অনেকক্ষণ বসে থাকি এখানে—কিন্তু সময় ছিল না। মহাদেব শাল থেকে বার হয়েই দেখি বারোজ সাহেব ওর মোটরে ফিরচে । আমাদের দেখে নামলো। ও বল্লে, মহাদেব শাল খাব পরোনো স্থান। বারোজ এ অঞ্চলের অনেক সংবাদ রাখে। ওকে বিদায় দিয়ে আমরা আবার গাড়ীতে উঠলামকোয়ালি গ্রামে সেদিনকার সেই বাড়ীটা দেখলাম, সেদিন যেখানে বসে মড়ি খেয়েছিলাম। হালদপ কুর পার হই। কালিকাপর রেন জন্ম আপিসে মিসেস ভস্মার সঙ্গে দেখা হোল। কাপড়গাদি ঘাটের কাছে দশ্য বড় সন্দের-দধারে পাহাড় ও জঙ্গল, বাঁদিক দিয়ে একটা পাব্বিত্য ঝর্ণা বয়ে চলেচে। সামনের পাহাড়ে আর বছর একদল হাতী দেখেছিলেন--মিঃ সিনহা বল্লেন। মিঃ সইয়ারের বাংলোটা পড়ে আছে রাখা মাইনসে-ভূতের বাড়ী হয়ে। একটা কুল গাছ থেকে পাকা কুল পেড়ে খেলািম ভাঙা ক্লাব-বাড়ীটার পেছনে। বাড়ী পৌছে চা খেয়ে নাটক, উমা ও বৌমাকে নিয়ে বারডি ও বাসাডেরা ঘাটের (hill pass) বনের মধ্যে মোটরে গেলাম বেড়াতে। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসচে বনে, গম্ভীর দশ্য চারিদিকে। খাদের গভীরতা প্ৰায় ৫oo ॥৬oo ফন্ট-সেখানে বহা নিচে দিয়ে খরস্রোতা নদী (খরসতি নদী, এখানকার ভাষায়) বয়ে চলেচে, আমি, নট, বৌমা খরস্রোতার ওপরে দাঁড়িয়ে আছি—ওপারের পক্বতারণ্যে ময়র ডাকচে। সন্ধ্যা হোল, আমরা পাহাড় থেকে নেমে শালবনের মধ্যে দিয়ে চলে এলাম, নাটকে গান গাইতে বল্লেন মিঃ সিনহা। আমরা সবাই সেই অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলাম ও গান শােনলাম। তারপর ডাকবাংলোতে এসে চা খাই বৌমা, নট ও আমি। পরদিন সন্ধ্যায় বঙ্কিমবাবার সঙ্গে দেখা রাজবাড়ীতে। আমি বল্লাম, হরিয়ানা গ্রামের গভীর বনের মধ্যে যে মহাদেব শাল আছে, সেখানটা বড় সন্দর তপোবনের মত। কিন্তু যাত্রীদের বসবার জায়গা নেই, ভাঙা মন্দিরেরও সংস্কার দরকার। আপনি রাজসরকার থেকে ওটা করে দিন। Vy V