পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই বারাকপরের মেঘমোদর দিনগলি। বড় ভাল লাগে এরকম দিন। ঝোপে। ঝোপে। মটর লতার থোলো থোলো বনো আঙরের মত মটর ফলে ঝলচে। ওপাড়ার ঘাটে ঘোলা নদীজলে যেখানে তীরের ঘাসবন ছায়েচে, সেখানে এমনি এক ঝোপে। কি সন্দর সাদা সাদা ঈষৎ স্যগন্ধ ফল ফটে আছে, তার পাশেই সেই মটর ফল দলচে। কয়েকদিন ধরে সকালে ওপাড়ার ঘাটে বেড়াতে যাই খব ভোরে। রোজ সকালে সেই ফলে-ভত্তি ঝোপটির সামনে দাঁড়িয়ে ওপারের সবজি ধানের ক্ষেতের দিকে চেয়ে থাকি। ভগবানের আবিভােব এই নব প্ৰভাতের সজল বর্ষােশ্যামল বননিকুঞ্জে, ঐ দর বিস্তৃত বননীল দিগন্তের মেঘলা সকালে শাখায় শাখায় বনবিহঙ্গের কলকাকলীতে। কলকাতায় মেসে থেকে যখন চাকুরি করি স্কুলে, তখন সদেীঘ তেরো বছরের মধ্যে এই সব দিনে বারাকপরের বিষসিন্তু বনঝোপের বিরহ আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠতো। বাল্যে কত খেলা করেছি। আমি, কালী, ভরত, কাচা এই বনাতলে ঝোপের ছায়ায় ছায়ায়। কত কি পাখীর গান শানেছি। কত পাকা মাকালফল তুলে এনেছি উত্তর মাঠের বন থেকে,--শাঁখারিপাকুরের ধারের গাছপালায় ওপরে-ওঠা মাকাললত থেকে—মনে হোত সেই রহস্যময় বিচিত্র বাল্য মনোভাব, সেই ঝোপের তলায় বেড়ানো, তখন বোধ হয় বনপরীরা সঙ্গে নিয়ে খেলে বেড়াতো।--বাঝেতাম না। সংসারের কিছ, বাঝতাম। শােধ তেলাকুচোর ফল, বনকলমীর ফলের বাহার হয়েচে কোন ঝোপে, কোথায় টকটকে মাকাল ফল ঝলচে কোন গাছে-—এই সব। বনপরীদের সঙ্গী ছিলাম। তখন। মনে এতটকু ধলো মাটি লাগেনি সংসারের। কি অপব্ব আনন্দে মন মেতে উঠতো যখন দেখতাম গাছে থোলো থোলো পটপটির ফল। ফলে আছে। এ সব ফল খাওয়া যায় না, পাখীরও অখাদ্য কোনো কোনো ফল। সতরাং রসনা তৃপ্তির লোভ নয়- এ সব ফলে খেলা হয়। এইটেই ছিল তখন বড় কথা। দেখতে ভাল লাগে এইটেই ছিল বড় আনন্দের উৎস। খেলা আর আনন্দ । লীলাই সবচেয়ে বড় কথা । Ceir5.JPîrg r.C3î2CGiR, ISÈ KIGGICDF, “The play is the thing.” play ! GÂZİT, খেলা। সংসারে শাশবত মানবাত্মার লীলাভূমি। এখানে তারা আসেনি। ঘরবাড়ী বানাতে, আসেনি। ব্যাণ্ডেক অৰ্থ জমাতে, আসেনি রায়বাহাদর হয়ে, ‘স্যার' হয়ে মোটর চড়ে বড় ইনসিওরেন্স কোম্পানীর ডিরেকটর হতে। ওসব তাদের মনের ভুল, মায়া অথবা মোহ। নিজের রপটি ভুলে যায়। তাই ওসব করে। তারপর যা বলছিলাম। ওই সব বাল্যসঙ্গী, বননিকুঞ্জ, ফলাফল, নদীতীরের সাঁইবাবলা ও কৃচলতার ঝোপ, সয্যাস্তের আভা-পড়া বেলেডাঙার মরগ্যাঙ, বিলের টলটলে জল-এদের ছেড়ে কলকাতার অপকৃলট এদো-পড়া মেসবাড়ীর নোংরা ঘরে বিদ্যাডজািন ও চাকুরির জন্যে বাস করে কি কষ্টই না পেতুম । মনপ্রাণ হাঁপিয়ে উঠতো। ভাবতাম, এমন দিন কি কখনো আসবে না। যখন আবার দেশে ফিরে যাবো ? গ্রামে বর্ষাকাল কখনো কাটাইনি। বাল্যদিনের পরে চিরকালই স্কুল বোডিংয়ে, কলেজ হোসেন্টলে ও মেসে কাটচে। ১৯১২ সালের পর থেকে। কখনো কি আবার ঢল-নামা বিষয় ইছামতীর ধারে কালো বনসিমলতার ঝোপের ছায়ায় পা ছড়িয়ে বসবো না মনের আনন্দে, আর কি কখনো শানবো না কুঞ্জে কুঞ্জে পত্ৰমৰ্ম্মমরি, গাঙশালিক ও কুকো পাখীর ডাক, বাঁশঝাড়ে জড়াপট্টি পাকানো বাঁশের কটকট শব্দ ? এতকাল পরে সে সর্বপ্ন আবার সার্থক হয়েচে, ফিরে পেয়েছি বাল্যকালের সেই বসাসজল, শ্যামল দিনরাতের সর্বপ্ন...স্বপ্ন... ! আজিও তেমনি মটরলতা ঝোলে ইছামতীর fy