পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তীরের বনে বনে, তেমনি পাখি ডাকে, তেমনি সবাস বেরোয় নাটােকাঁটার হলদে রংয়ের ফলের থোকায় থোকায়। বিশেবর অধিদেবতা। যেমন সত্যি এরাও তেমনি সত্যি, শাশবত সন্দর। মরে না, ঋতুতে ঋতুতে পােনরাবত্তিত হয়, নবরাপে ফিরে আসে-যােগ যােগ ধরে চলেচে। ওদেরও লীলা । "The play is the thing..." ইচ্ছে আছে এবার একটা বইয়ে হাত দেবো।--নাম দেবো তার ইছামতী’ । বড় উপন্যাস। তাতে থাকবে ইছামতীর ধারের গ্রামগলির অপব্ব জীবন-প্রবাহের ইতিহাস-বননিকুঞ্জের মরাবাঁচার ইতিহাস, কত সায্যোদয়, কত সত্যব্যাস্তের নিষিকgন, শান্ত ইতিহাস। কালই জন্মান্টমীর ছটিতে কলকাতায় গিয়েছিলাম, অতুলকৃষ্ণ কুমার মহাশয়ের মোটরে কাল সারা সকাল ঘরে বেড়িয়েছি। বাণী রায়দের বাড়ী গেলাম, দেবেন ঘোষ রোডের মেস থেকে পত্র-শোকাতুর ভদ্রলোকটিকে নিয়ে মোটরে করে দ-এক জায়গায় ঘরলাম। কলকাতায় বেশিদিন আর থাকতে পারিনে—ভাল লাগে না। সজনী দাস এখানে নেই, ভাগলপরে গিয়েচে বেড়াতে। কাল সকুল থেকে ফিরলাম মাঠের পথ দিয়ে। কি কালো নিবিড়কৃষ্ণ মেঘ করেচে। সেই অপব্ব ঝোপটির পেছনে মচিপাড়ার দিকের আকাশে। একটা তেলাকুচা পাতার মস্ত বড় সবােজ ঝোপ আছে। এ মাঠে। মস্ত তেতুল গাছ বেয়ে ঝোপটা উঠে গাছের মাথা ঢেকে দিয়েচে ঘন সবজি। উত্তরচ্ছদে। আমি যখনই এপথে স্কুলে যাই, তখন দেখি এই ঝোপটা। মনে মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, তুমি একদিন এই ঝোপের মাথাটা সাদা সাদা ফলে ভরে দিও, আমি দী বেলা স্কুলে যাওয়া আসার পথে দেখতে দেখতে যাবো। কি সন্দির দেখাবে তখন, ভাবলেও আনন্দ হয়। কাল কোথায় যেন দেখলাম রেললাইনের ধারে কোন ঝোপে বনকলমী ফল ফটেচে। কিন্তু আমাদের গ্রামের মধ্যে যে যে ঝোপে। বনে বনকলমীর ফল ফোটে। সেখানে গিয়ে দেখোঁচি, কোথাও ফোটেনি। এই শ্রাবণের শেষের দিকেই কিন্তু ও ফল ফোটে। আজ দেখি একটা বনবিড়াল ঝোপের তলা দিয়ে কাল মোড়লের ধানক্ষেতের দিকে যাচ্চে। বেশ বড় বনবিড়াল, লেজের দিকটা ডোরা কাটা। আমি দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম, একদম্পেট দেখতে লাগলম, সাড়া পেলেই লেজ তলে এখনি দৌড় দেবে। মিনিট খানেক পরে দিলেও তাই, কি করে আমার উপস্থিতি অনভব করতে পেরেচে। এক দৌড়ে ঝোপের আড়ালে অদশ্য হোল। বাড়ী এসে চা খেয়ে মেঘলা বিকেলে বাঁশবনের দিকে বারান্দায় ইজি-চেয়ার পেতে আরাম করে বসে প্ৰিসন্টলির ‘Good Companions’ পড়ি। কয়েক পাতা পড়তে না। পড়তে বান্ডিট বলে আর কোথায় আছি। সেই যে ঝম ঝম করে বান্টি নামলো, চললো उद्दुङ । আজ খাব ভোরে কল্যাণী ও আমি বন্টির মধ্যে মাঠে বেড়াতে গিয়েছিলাম। শ্রাবণ মাসের ঘন বর্ষার প্রাতঃকাল, সে কি শোভা হয়েচে উত্তর মাঠে, কি কালো কালো মেঘ বড় শিমল গাছটার মাথায়, মাঠ ভরে গিয়েচে বলিটির জলে, মাঠের ধারের ঝোপে। ঝোপে নাকজোঁয়াল ফল (gladislasily) ফটে আলো করে আছে। এই বামা-ভেজা হাওয়ায় মাত্তির সবগ্নলোকে মন উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে.যে মন্তি মেলে এমনি মেঘকতজৰল শ্রাবণদিনে টপটপ জল-ঝরা ছাতিম বনে, নাটকান ফলের বনে, পাপিয়ার ডাকে ACA