পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দোয়েলের ডাকে। (আজ ভোরে যখন শায়ে আছি বিছানায়, কি চমৎকার পাপিয়া ডাকছিল!)৷ সেই বান্টির এক হাঁট জলে আকাশ-ভরা কালো মেঘের তলে দাঁড়িয়ে মনে হোল ঋষিদের সেই পবিত্র গাথাঃ সাজিয়া বিশব করিয়া পালন প্রলয়ে নাশেন যিনি শোভনা বন্ধি আমা সবাকার প্রদান করন তিনি। ছটির দিনটা। সারাদিন বাল্টি হয়নি। হাজারী জেলেনী সকালে টাটকা রিটে মাছ দিয়ে গেল। গাঙের। এখন ঘোলা জলে অনেক মাছ পাওয়া যায়, তার মধ্যে বেলে মাছ আর চিংড়িই বেশি। রিটে মাছ খাব তেলালো সস্বাদ মাছ, ইছামতী ছাড়া অন্য কোন নদীতে বড় একটা পাওয়া যায় না। দেড় টাকা সের। যন্ধের আগে যে মাছ ছিল পচি আনা সের, এখন তাই দেড় টাকায় পাওয়া ভার। কল্যাণী কাঁচা মাছ তেলঝোল করে বড় চমৎকার। আজও তাই করলে, আর ঢেড়সা ভাতে। সাড়ে বারোটার সময়ে কল্যাণী ও আমি নদীতে সন্নান করতে নােমলাম। কি সন্দির। মাকালি লতার ঝোপটা জলের ধারে। নাটােকাঁটার একটা সগন্ধি ফল তুলে কল্যাণীর হাতে দিলাম, ও খোঁপায় গজলে। বিকেলে হাব ও ফচকে নিয়ে অপব্ব রঙীন আকাশের তলায় বাঁওড়ের ধারের বট অশথ গাছের ছায়ায় ছায়ার চলে গেলাম মরগাঙে। অনেকদিন, এদিকে আসিনি। পথে পথে সবােজ ঝোপঝাপের কি ভরপর সৌন্দৰ্য্য। বাঁওড়ে জল বেড়েচে অনেক, ডাঙার কাছে জলি ধানের ক্ষেতে বকের দল চরচে, ওপারের অস্তদিগন্তের পটভূমিতে পাটক্ষেতে চাষারা পাট কাটাচে, কোথাও কোথাও জলিধান কাটাচে, মাড়ল গাজিপরের কাওরারা শাওয়ের পাল চরিয়ে বেড়াচ্চে বাঁওড়ের কাঁদায় কাঁদায় (কাঁদা = তীর) শওরের পাল মাটি খড়ে মাথো ঘাস তুলে খাচ্চে, টাটকা মাথো ঘাসের শেকড়ের সগন্ধ বেরুচ্চে। মরগাঙের ধারে গিয়ে দেখি ফণিকাকা ইন্দ রায় মাছ ধরে ফিরচে। আমরা বল্লাম, "কি পেলে ? ওরা ভাঁড় দেখালে। কিছই পায়নি। কাঠের বড় কণ্ট হয়েচে, আমি এক বোঝা শকনো কাঠ কুড়িয়ে কুড়িয়ে জড়ো করলাম। শকানো বটের ডাল, ষাঁড়ার ডাল, তিত্তিরাজের ডাল। কুঠির মাঠের পথে এসে নিবারণের বেগােন ক্ষেতের নীচে নদীতে স্নান করতে নামলিম। মাধবপরের চরের ওপর আকাশের কি অদ্ভুত ইন্দ্ৰনীল রং, ! তারই পটভূমিতে বড় একটা শিমল গাছ, কাশবন, আউশ ধানের ক্ষেত মায়াময় দেখাচ্চে। নদীজলে সেই অদ্ভুত নীল রংয়ের প্রতিচ্ছায়া। চাটগাঁ থেকে রেণ্যর পত্র পেয়েছি। কাল। ওর সঙ্গে যোগ এতদিন পরেও ঠিক বজায় আছে। কোথায় চলে গিয়েচে খকু, কোথায় সপ্রভা। দদিন মোটে বান্টি নেই। খরতর রোদে পড়েছি। কাল বহনকাল পরে নদীর ধারে পরনো পটপটি তলায় বেড়াতে গিয়ে জলে নেবে কলমীশাক তুলে আনলাম। আমার বাল্যকালে এখানে সায়ের ছিল, আইনন্দি কয়াল ধান মাপতো। তারপর বহদিন মন রায় এ জমি বন্দোবস্ত নিয়ে পটলের ক্ষেত করে। নদীর বাঁকের এ জমির সে অপব্ব শোভা নষ্ট করেচে, বাল্যের সে মটরলতা দোলানো শোভাময় ঝোপঝাপ, সে নিভৃত সর্বপ্নভরা লতাবিতান কুড়ালের মখে অন্তহিত হয়েচে বহকাল, কেন ? না, মন রায় বা তার পত্রপরিবার পটল ভাজা খাবে। এখন আর সে পটলের ক্ষেত নেই। তাই বেড়াতে গিয়েছিলাম। নদীর ধারে (একটা ছোট বিছে যাচ্চে, দেওয়াল বেয়ে a ty