পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল বাবডেরা ও বলিবা থেকে ফিরবার পথে এই নিজ জনতা আমার বকে এত বেশি যেন একটা গােরভারের মত চেপে ধরছিল। শােধই গাছ আর বন, আর লতা আর পাথর, আর পাহাড়। লোক নেই, জন নেই, লোকালয় নেই। আমি এখানে কতদিন একা থাকতে পারি? যদি ধরো বাবডেরার পথে সেই পাহাড়টার ওপরকার তৃণভূমিতে, যেখানে মাদর পেতে বসে আমি আর সিনহা দীঘণ্টা গলপ করলাম ও লিখলাম—সেখানে আমাকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় কিছদিন থাকতে হয়, একটিও মানষের মািখ না দেখে, একজনেব সঙ্গেও একটি কথা না বলে ? শােধ অন্ধকার বা আধজ্যোৎস্না রাত্রে মাথার ওপরকার আকাশে দেখবো পরিচিত কালপরিষ বা সপ্তর্ষি নক্ষত্রমন্ডল, তাদের চারি পাশে ছড়িয়ে আছে অগণ্য তারা, আর নিচে আমার সামনে, পিছনে অন্ধকারাচ্ছন্ন শৈলমালা, অরণ্যের সীমারেখা, কচিৎ বা শনৈবো বন্য হস্তির বংহিতধৰনি, বন্য কুকুরের ডাক, কখনো বা কোৎরার (barking deer) বিকট চীৎকার। ওপরে বিরাট নীচেও বিরাট। ওপরে, নীচে, তোমার চারিপাশে বিরাটের গভীর মাত্তি থম থম্য করছে। বাংলা দেশের মাঠে মাঠে এ সময়ে ফটেচে বনধধলের হলদে ফল, ছোট এড়া শিশুর সাদা সাদা থোকা থোকা ফল-সেগলো মিলিট, চমৎকার লিরিক কবিতা। মনকে মািন্ধ করে, আনন্দ দেয়। এখানে প্রকৃতি এপিক কাব্য লিখে রেখেচে গম্পভীর অরণ্যাবতে শৈলশিখরে, লৌহপ্রস্তর দিয়ে বাঁধানো নদীকালে, তারাভরা বিশাল আকাশপটে, বন্যজন্তু-অধ্যুষিত আরণ্য অন্ধকারে। সে গম্ভীর এপিক কাব্য সকলের জন্যে নয়-কাল রাত দটোর সময় বাংলোর বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে সামনের অন্ধকারাচ্ছন্ন নিস্তবধ বনানী ও শৈলমালার দিকে তাকিয়ে দেখেছি—সে দশ্য সহ্য করতে পারা যায় না-মনকে সন্তব্ধ করে, অভিভূত করে, ভয় এনে দেয়। বিরাটের উপাসনা সকলের জন্যে নয়, বাংলার পল্লীপ্রকৃতি যেখানে ঠংরি এখানে তা চৌতালের ধ্ৰুপদ--সকলের জন্যে নয়। এ সব। ওই বন ওদিকে পাথর বাৎনী, জেরাইকেলা থেকে আরম্ভ করে এদিকে ঝিনডুং, লোরো কোদালিবাদ, ধরমপকা পয্যন্ত বিস্তুত। কি ঘন বন, কত মোটা মোটা শাল গাছ কোথায় কোন শন্যে উঠেচে-কলের চিমনির মত। ১৫o ॥২oo বছরের প্রাচীন বনস্পতি। এসব অঞ্চলে যখন সভ্য মানষে পদাপণ করেনি, রেল হয়নি, মোটর ছিল না, পথঘাট তৈরি হয়নি—তখন এই সব বনস্পতি ঘন বনের মধ্যে ধীরে ধীরে বেড়ে রঙ্গনগাঢ়ার পথের ধারে যে বিশাল শালবক্ষেটি আজ সন্ধ্যায় দেখলাম। যার তলায় শাদরলা। আমার মায়ের যেদিন বিয়ে হয়েছিল সেদিনটিতে এই গাছ। এত বড়ই ছিল। এই সব ভেবে আমার মনে যে কি আনন্দ পাই, থলকোবাদ গ্রামের পাশে বোনাইগড় আর রঙগনাগাঢ়ার পথের ধারে যে বিশাল শালবক্ষেটি আজ সন্ধ্যায় দেখলাম যার তলায় শাদবেড়ার সেই গাড়োয়ান কাটি ভাত আর কচ দিয়ে কলাইয়ের ডাল রোধে খাচ্ছিল।-- দন্ডের পর দন্ড আমি ঐ গাছটির দিকে চেয়ে এই রকম চিন্তায় মশগল হয়ে আপনহারা আনন্দে বিভোর হয়ে থাকতে পারি। ইসমাইল।পরে দিবরার খড়ের কাছারিঘর থেকে বার হয়ে এমনি শীতের রাত্রে হঠাৎ বাইরে গিয়ে দাঁড়াতুম মনে পড়ে। সেখানেও ছিল সামনে পিছনে নিজজন বনভূমি আর ছিল সে কি ভীষণ শীত। হাতের আঙলগালো জমে ঠান্ডা হয়ে যেতো-এত কাল পরে আবার এই কদিন সেই হারানো অনভূতিগলো ফিরিয়ে পাই রোজ রাত্রে। সেই নিজািন, অন্ধকার আরণ্য-ভূমি, সেই ভীষণ শীত, সেই সীমাহীন বিরুটের মা-খো- মাখি হওয়া, সেই সন্তব্ধ ও মৌন বিস্ময়-ভরা আনন্দ। জয় হোক সে বিশ্ববিদেবতার যিনি আমাকে আবার এখানে এনেচোন! ԵՀ