পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কদিন থেকে বন্যহস্তীর উপদ্রবে। এখানকার আরাকুসি অর্থাৎ কাঠাচেরাইয়ের কুলীরা বড় বিব্রত হয়ে পড়েচে। কাল সন্ধ্যায় বনতুলসীর শকিনো জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের ওপরের একটা কণা পার হয়ে বোনাইগড়ের পথে এদের কাছে গিয়েছিলাম। একটা বিশাল শাল গাছের তলায় এরা বসে ডাল রান্না করছিল ঘাঁটতে। ভাত আগেই রান্না হয়ে গিয়েছিল। চারিধারে নিজজন জঙ্গল। ভীষণ শীত। জিজ্ঞেস করলাম-কি নাম ? কোথা থেকে আসচো ? ওরা বাংলা বোঝে না। হো ভাষার সঙ্গে উড়িয়া ভাষার ব্রুিয়াপদ মিলিয়ে এদের কথ্য ভাষা। যা বল্লে, তার মানে এই যে তারা গাড়োয়ান, কাঠ বইবার জন্যে যদি গাড়ীর দরকার হয়, সেজন্যে জগুগলে কাজ খাঁজতে এসেচে। সঙ্গে ওদের দেখলাম শােধ একখানা করে খেজর পাতার বোনা চোঁটাই, একখানা পাতলা রেজাই, একটা হাঁড়ি আর একটা ঘটি। জিজ্ঞেস করলাম- কোথায় শোবে রাত্ৰে ? —এইখানে। গাছতলায়। --হাতীর ভয় আছে। এখানে জানো ? কাল রাত্রে আরাকুসিদের বড় বিব্রত করেচে। । , —আগন আছে বাবা। —আগন তো আরাকুসিদেরও ছিল, বনো হাতী আগন মানেনি। দাঁত দিয়ে ও-বছর একটা লোককে গিথে ফেলেছিল মাটির সঙ্গে। সাবধানে থাকাই ভালো। —না বাব, হাতীর ভয় করলে আমাদের চলবে না। কোথায় যাবো বাবা ? -- এই ভীষণ শীতে শোবে এই গাছতলায় ! - আমরা চিরকালই তাই করি। আগানের ধারে শালে শীত লাগবে না। এরা কিছই গ্রাহ্য করে না, না বনো হাতী, না। এই দন্দান্ত শীত, না। এই অন্ধকারে আরণ্যরজনীর নিজজনতা। এই সব বনা অঞ্চলে এরা মানষে, আজন্ম যাতায়াত করচে এই বনপথে, বােক্ষতলে নিশিযাপন এদের দৈনন্দিন অভ্যোস। ওদের ডাল নামলো। শািন্ধ ডাল আর ভাত শালপাতায় ঢেলে খেতে লাগলো। ডালের মধ্যে সাদা সাদা কি ভাসচে দেখে বল্লাম-ওগ্যুলো কি ডালে ? --পেকাচি। —সেটা কি ? 一夺T可7T1 —ऊाग्ने वा कि ? বাঝলাম না জিনিসটা। মনে হোল কোনো জংলী ফলটল হবে। পরে বনবিভাগের হিন্দি-জানা কম্পমচারী নিকোডিম হো-কে জিজ্ঞেস করতে জানলাম, জিনিসটা হোল বনকচ। এই হোল ভারতবর্ষ। ভারতবর্ষকে বঝতে হোলে এই সব লোকের সঙ্গে মিশতে হবে। কি সামান্য এদের খাওয়া, কত তুচ্ছ এদের শোওয়া, শীতকে এরা শীত জ্ঞান করে না, বনো হাতী মানে না, বাঘ মানে না—যদি দটিাকা কি দেড় টাকা গাড়ীর ভাড়া মেলে, তবও খায় বনকচ সিন্ধ আর ভাত। গাছের মাথায় সন্ধ্যা নামলো ফিরবার পথে। একফালি চাঁদ উঠেছে শালগাছের মাথায়। বনতুলসীর জঙ্গলের গন্ধ ভেসে আসচে। ঠান্ডা বাতাসে। নিকটে পাহাড়ী উমরিয়া নালার মৰ্ম্মর শব্দ। বোনাই গড়ের পথ ঘন বাঁকে যেখানে অদশ্য হয়েছে, সেখান থেকে ধোঁয়া উঠচে। বোধ হয়। ওখানেও আরাকুসি বা গাড়োয়ানেরা রাত্রিযাপন bf○