পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক রাত্রে চাঁদা ফটফটে আলো দিচ্চে। আবার পাহাড়ের ধারে বেণ্ডিতে গিয়ে বসলাম। দারের সেই পাহাড়শ্রেণী, তার মাথার ওপরকার আকাশে অগণ্য তারা। কি মহিমা বিরাটের। তুমি আমাকে ভালবেসে এখানে এনেচ, তোমার এ বিরাট রপকে প্রত্যক্ষ করবার সহযোগ দিয়েচ। কিন্তু আমি তোমার এ রাপের সামনে দিশাহারা হয়ে যাই, দেবতা। আমার সেই তিৎপল্লা ফলের ঝোেপই ভালো। বনসিমতলা ঘাটের সেই মাকাল ফলই ভালো। তোমার এ রােপ দেখে আমি ভয় পাই। জ্যৈষ্ঠ মাসের বিকেল। নদীর ধারের ঘন নিবিড় বন সেকেলে প্রাচীন, আমগাছের তলায়। কুচিতলা বয়ে উঠেচে বদ্ধ আমগাছের ডাল। বাঁশগাছের আলগা থেকে নেমে এসেচে বড়-গোয়ালে লতার কচি ডগা, এবার বোশেখ মাসের শেষে দিনকয়েক বান্টি হওয়াতে লতা পাতা চারা গাছের এত বন্ধি। যেখানে কিছদিন আগে পরিস্কার তৃণলতাশন্য ভূমি দেখেছি —এখন সেখানে দশ বগা হাত জমিতে গজিয়ে উঠেচে বনো উচ্ছে, বনো করলা, বড় গোয়ালে লতা, করমচা লতা, বনো সােয্যমণি ফলের চারা, জামের চারা, তরমজের চারা, আরও কত কত জানা অজানা বনো গাছপালার চারা। এখন ব্যষ্টি নেই। আজ ক'দিন খােব গরম, খর সােয্য উঠেছে মেঘলেশশান্য নীল আকাশে, দিক দিগন্ত প্রখর রৌদ্রে জীবলে পড়ে যায়, অপরাহে কিন্তু গহন, ছায়া নেমে আসে মাঠে ঘাটে পথে, বনযাইয়ের সগন্ধে বাতাস হয়। সারাভিত, বাঁশ ঝাড়ের মগডাল দলিয়ে, আম্বন-শীর্ষ কাঁপিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ওঠে নদীর বাঁক থেকে, নদীর স্নিগ্ধ কালো জলে ঢেউ উঠে পানকলস শেওলার কুচো সাদা ফসলের সারিকে নড়িয়ে দেয় ডাঙার দিকে, পানকৌড়িকে উড়িয়ে দেয় সাঁইবাবলার ডাল থেকে, শেফালি ফলের হলদে পাপড়ি ঝরিয়ে দেয় নিবিড় বনের তলায়, বর্ষাপটে তৃণভূমির তলে কিংবা নবোদ্ধত চারা গাছের মাথায়। গোধলির রাঙা আলো বনে, মাঠে, চরে, জলে, নলখাগড়া আর কষাড় ঝোপে, উড়ন্ত বকের সারির পাখায়। এই নিস্তবন্ধ অপরাহ্রে ছায়াগহন প্রাচীন আমবাগানে ঢকে দেখছি বনের কোন কোণে তিনি পত্ৰিশয্যায় ঘামিয়ে আছেন। তাঁকে দেখেছিলাম। এই নিতজনে। আমি অবিশ্যি দীর থেকে দেখেছি, কাছে যাইনি। ছায়া-ঝোপের নিবিড় আশ্রয়ে তিনি শহয়ে ঘামিয়ে আছেন। নারীর মত সরকুমার কমনীয় মাখে এক অপার্থিব ভাব মাখা, দীঘ দীঘ চোখ দটি নিমীলিত দীঘ কালো জোড়া ভুরর তলায়। সন্দরী নারীর মত লাবণ্যভরা মাখ। মািখ ছাড়া আমি আর কিছই দেখতে পাচ্ছিনে ওঁর। ঝরে ঝর করে ঝরা পাপড়ি ঝরে পড়েচে সৌদালি ফলের ওঁর শয্যার ওপর। ডালে ডালে বনের পাখি নেচে নেচে উড়ে বেড়াচ্চে, কত কি বন্যলতার গাছ ওপরের ডাল থেকে নেমে এসে দলচে। ওঁর বকের কাছে, মাখের কাছে। তিৎপল্লা ফল ফটে আছে একটা দরে একটা ঝোপে, রঙিন প্রজাপতি উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সৌদালি ফলের ঝাড়ে ঝাড়ে, পিড়িং পিড়িং দ্যগাটিনটনি ডাকচে, উচু গাছের মগডালে ডাকচে কুল্লো, কি সন্দির গোধলির রাঙা রোদ সাজানো বনকুঞ্জ, कि शिश छाशान्दिछ वीथिऊब्न ! কিন্তু হঠাৎ মনে হলো তিৎপল্লা ফল তো এখন ফোটে না, ও ফোটে। শীতের প্রথম মাসে দােপর বেলা। এখন ও ফল কেন ?