পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তা না, মনে হোলো মহাশিল্পী, মহাকবি উনি, নিজের অনন্ত শয্যার অস্তনিদ্রার নটি নিজের ইচ্ছামত সাজিয়ে বসবেন আমি যেসব ফল ভালবাসি বা দেখেছি তাই দিয়ে। শািন্ধ কি ফল? কত কি সদর্শন, সরকুমারগ্র বন্যলতা, যা নিতান্ত এই বাংলার পল্লীপ্রান্তরে সপরিচিত। নেই। সেখানে অকৰ্ণ ও কোবিদার। নেই কুরবক, অশোক পন্নাগ ও চম্পক, বর্ষা-সাথী নীপও চোখে পড়ে না। হে পািব্বাচলের সবিতা, তোমার জবাকুসম-সৎকাশ রশিমর বিকীরণও এখানে তপস্যার অভাবে প্রবেশ লাভ করেনি। কি পণ্য করেছিল। এই প্রাচীন দিনের গাঙ্গালী বংশের আমবাগান, কি তপস্য করেছিল। ইছামতীর তীর-তরশ্রেণী ? ভালো করে চেয়ে দেখবার জন্যে" কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। সেই বনে। কি সন্দির অপরপ স্নিগ্ধ ছবিখানা আমার সামনে। বিপােল মহাসাগরে ইথারের মহাসমািদ্র, যেখানে কোটি তারা ডোবে জৰলে, তার মধ্যে ক্ষদ্র একটি সবজি খড়ের দাবীপ পথিবী। বিশেবর রাজাধিরাজ পরম সৌম্য, পরম প্ৰেমী অধিদেবতা, যাঁর তৈরী আব্রহ্মস্তম্ব এই জগৎ, এই মহাজগৎ, সেই পরম রহস্যময় দেবতা আজ কোন শায়িত এই আমবাগানে! সৌদালি ফােল ঝরচে। তাঁর সরকুমার লাবণ্য-মাখা মাখের ওপর, সে মািখ দেখে তক্ষীনি ভালবাসতে ইচ্ছা করে---বিশেষ করে যখন মনে হয় জগতে ক’জনই বা ওঁকে জানে ভালবাসে বা ওঁর কথা ভাবে। উনি সব চেয়ে বেশি অবহেলিত জগতের মধ্যে। কচি কচি লতা দলচে, একটা দরে রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, সৌদালি ফলের ঝাড়ে ঝাড়ে, আবার নীল বনকলমির ফলে ভত্তি একটা লতা উঠেছে। ষাঁড়াগাছের মাথায়, অকালে একটা শিমলের শাখায় রাঙা রাঙা ফল ফটে আছে, টকটকে মাকালফল ঝালচে, লেজ-ঝোলা হলদে পাখী বসে আছে, যে ফল কেউ দেখে না ও কেউ আদর করে না, তেমন ফল ফটে আছে তাঁর বনতলে, তাই দিয়ে রচিত হবে, তাঁর পত্ৰশয্যা। প্ৰণাম, হে খেয়ালী দেবতা, প্ৰণাম । ছোট একটা লতা উঠচে আমার রোয়াকের ঠেসা-দেওয়ালের পাশের নারিকেল গাছটা বেয়ে। আমার বাড়ীর ওদিকটাতে ঘন বনঝোপ। আগে যািগল কাকার ভিটে ছিল ওখানটাতে, ছেলেবেলায় তাঁর কাছে আমি কিছদিন অঙ্ক কষতাম, কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর ছেলেরা এ গ্রাম থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বাস করচে, এখন সেখানে ঘন ছোট এড়াঞি, গোয়ালে লতা, সৌদালি, গাঁধালে শাক, বনমোরি ও আদাড়ে কাশের জঙ্গল। আমি ঠেস দেওয়ালটাতে বসে বসে লিখি। হঠাৎ দেখলাম একদিন নারকেল গাছের গা বেয়ে একটা লতা উঠেচে। ভাল করে দেখলাম, বনো তিৎপল্লার লতা, যারা জানে না তারা বলে তেলাকুচো। কিন্তু তেলাকুচো লতা একটি অন্য রকমের। ফলের গড়ন তো সম্পৰ্ণে আলাদা। দিনে দিনে পাতাটি বেড়ে উঠে নারকোল গাছ বেয়ে ঠেলে উঠতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে রোজ রোজ চেয়ে দেখি। ক্ৰমে তার ফল হোল, যে ফলের কুড়ি এ সব অঞ্চলের দলে মেয়েরা নাকে নোলক করে পরে। আমরাও বাল্যে পরেছি। ফলের সময়টাতে রঙবেরঙের কত প্রজাপতির বাহার। সরকুমার লতাগ্রভাগ নারকোলগড়ি ছেড়ে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে পড়ে দলচে বাতাসে, তাদের গাঁটে গাঁটে সাদা সাদা ফল আর ফলে ফলে হলদেডানা নীলডানা প্রজাপতিকুলের মন্তপক্ষ-সঞ্চরণ। এরা C