পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনাস্তিস্থলী একটি অপব্ব সৌন্দয্যে মােখরিত করে রাখে সারা সকালবেলাটা ; আমি লেখা ছেড়ে মাঝে মাঝে সেদিকে একদলেট চেয়ে থাকি। একদিন ওর ফলের জালি পড়লো। জালি পল্ট হয়ে তেলাকুচো আকারের ফলে পরিণত হোল। ক্ৰমে একদিন ফল পেকে টকটকে লাল দেখালো। ছোট্ট একটা দাগটনাটনি পাখি এক শ্রাবণ অন্ধকারের মেঘমোদর শ্যামলতা ও অতলািপশ শান্তির মধ্যে দেখি ফলটার পাশের লতার ডগায় বসে মহা আনন্দে রাঙা ফলটি ভোজন করচে। কি অপব্ব আনন্দই বা সেটকু পাচকে পাখির খাওয়ার ভঙ্গির মধ্যে। তখনও দলচে উপরের দিকের লতাগ্রভাগে কত সাদা কুচো কুচো ফল নোলকের মত, কত সবজ কাঁচ ফলের জালি। ওর পিছনে বিশাল, প্রাচীন বকুল গাছটা। বর্ষার দিনে মেঘের ঘন ছায়ায় অন্ধকার হয়ে আছে। ওর তলা। আদ্র লতাকোণে কি সাগন্ধ ফল ফটেছে—জলভর বাতাসে তার সবাস। এই শ্যামল বনানীর নিবিড় পটভূমিতে সেই তিৎপল্লার লতাটা কি সন্দির দেখায়। ঠেস দেওয়ালে বসে বসে চেয়ে দেখতে দেখতে এক-একদিন কি আনন্দ যে পাই। শােধ ঐ ক্ষদ্র তিৎপল্লার লতা আর তার ফল নয়, এক অদ্ভুত ও আশচয্য জিনিস দেখি ওর মধ্যে। ও সামান্য বন্যলতা নয়। গভীর নিঃশব্দতার মধ্যে সন্ধ্যায় এক মনে ওর দিকে চেয়ে থেকে দেখো। অসীমের মহিমময় বাণী এসে পৌছবে তোমার মনে । কি বিপল সমারোহ করতে হয়েচে ওই বনোলতাকে বাঁচিয়ে রাখতে, ওর ফল ফোটাতে, ওর ফল পাকাতে! সয্যের বিশাল অগ্নিকুন্ডটা আকাশের দর প্রান্তে বসাতে হয়েচে ওর জন্যে, কত কি গ্যাস, কত রাসায়নিক পদার্থ সম্মিট করতে হয়েছে ওর জন্যে, কোটি কোটি মাইল ইথারের সমদ্র ভেদ করে সােয্যরশিমকে পথিবীতে ছটে আসতে হয়েচে ওকে বাঁচিয়ে রাখবার ব্যগ্র আগ্রহে। তবে আজ ওর ফল ফটেচে, ওর ফল পেকে লাল টকটকে করাচে। ক্ষর-ব্রিহ্মের প্রাণময়ী বাত্তা বহন করে এনেচে ওই বন্য লতা লোকলোকান্তরের অসীমতা থেকে। যে মহাশিলপীর হাতের ও অতি সরকুমার শিলপ, সেই শিলপীর স্বাক্ষর আছে। ওর পাতায়, ফলে, লাবণ্যময় দলনিতে। ওর মধ্যে দিয়েই তাঁকে প্রত্যক্ষ কর । ঘাটশিলা থেকে আমি মনোহরপর রওনা হই বেলা দটোর ট্রেনে। গত পাজের ছটিতে দেশ থেকে ঘাটশিলায় এসেছিলাম বেড়াতে। বন্ধবের অমর মিত্রের বাসার সামনে মাঠে একদিন জ্যোৎস্না রাত্রে বসে গলপসলপি করছি, এমন সময়ে খবর পেলাম আমাদের দেশের স্কুল থেকে একটি ছেলে বেড়াতে এসে আমাদের বাসায় উঠেছে। রাত্রে ছেলেটির সঙ্গে কথা হোল, সে এসেচে বন ও পাহাড় দেখতে । কখনো দেখেনি একটা বড় রকমের বন, বড় একটা পাহাড়। সেই রাত্রেই ভাবলাম ওকে সিংস্কৃভূমের সব চেয়ে বড় বনের অর্থাৎ সারেন্ডা অরণ্যের একটা অংশ দেখিয়ে দেবো। অনেকে হয়তো জানে না, সিং ভুমের অর্থাৎ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ছোটনাগপরের মধ্যে দটি বহৎ অরণ্যানী বৰ্ত্তমান। প্রথমে একথা বলা উচিত, ছোটনাগপরের এ অংশকে প্রাচীন বাংলা পথিতে ঝাড়খন্ড বা ঝারিখন্ড বলা হোেত অর্থাৎ বনময় দেশ। এখন সভ্যতা বা রেলপথের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পািব্ব সিং ভূমের বন প্রায় নিঃশেষ হয়ে সেই জায়গায় হয়েছে সর্বাস্থ্যন্বেষী বাঙালীদের উপনিবেশ, কলকারখানা (যেমন টাটা, মৌভান্ডার) বা ফসলের ক্ষেত। বন যা এখনো পািব্ব সিং ভুমে koyo