পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি জানি হাওড়া স্টেশন থেকে দশো মাইলের মধ্যে কত সন্দর সস্থান আছে, সেখানে নিবিড় বন আছে, পাহাড়ী ঝর্ণা আছে, বনলতার সৌন্দয্য আছে, জলজ লিলির ভিড় আছে ছায়াবত বন্য নদীতটে। দেখে অনেক সময় নিজেরই অবিশবাস হয়েছে কলকাতার এত কাছে এমন সন্দের স্থান থাকতে পারে! রাত ভোর হয়ে গেল। একটা পরেই নাগপাের প্যাসেঞ্জার এল। আমরা তাতেই উঠে মনোহরপরের দিকে রওনা হলাম। চক্ৰধরপর ছাড়িয়ে তিনটি সেন্টশনের পরেই পোসাইতা সেন্টশনের কাছে ঘন বন। এখানে একটা টানেল আছে, তাতে ভুলক্রমে রেলওয়ে গাইড বইয়ে বলা হয় “সারেন্ডা-টানেল’। কিন্তু প্রকৃত সারেন্ডার সঙ্গে এই টানেলের পাহাড় ও বনভূমির কোনো সম্মািপকা নেই। এ স্থানটি কোলহান বিভাগের অরণ্যের অন্তভুক্ত। সারেন্ডা অরণ্য কোনো রেলপথের নিকটে নয়, ট্রেনে বসে এ লাইন থেকে সাধারণতঃ যে বনানী দেখা যায় তা হোল এই কোলহান অরণ্যভূমি, তারও খািব সামান্য অংশই রেলে চড়ে দেখা সম্পভব। আরও পশিচমে গিয়ে যে বন পৰবত দেখা যায় সেগলো হলো বামড়া, আনন্দগড় ও বোনাইগড় প্রভৃতি দেশীয় রাজাগলির অন্তভূক্ত। তার পরেই পড়ে সম্পবেলপার জেলার রিজােভ ফরেস্টের পক্ব-উত্তর অংশ। তার পরে এল বিলাসপাের। বিলাসপার ছাড়িয়ে নাগপরের পথে অনেক দীর পয্যন্ত রক্ষ, উষর, সমতল প্রান্তরের একঘেয়ে দশ্য চক্ষকে পীড়া দেয়। তার পরে আসে। দ্রােগ বা দগৰ্ব। এখান থেকে পানরায় বন পৰ্ব্বতের দশ্য শরা হলো, এই পথেই কিছু দর এগিয়ে গিয়ে বেঙ্গল নাগপাের রেলপথের বহ-বিজ্ঞাপিত সালকেশা অরণ্যভূমি। আমি একবার জ্যোৎস্যনাময়ী গভীর রাত্ৰিতে আর একবার অন্তসংয্যের বিলীয়মান আলোয় এই বন-প্রদেশ দশন করি। নিঃসন্দেহে বলা যায় ট্রেনে বসে যে কেউ দাগ ও ডোঙ্গলগড়ের মধ্যে একটা কন্ট করে চোখ মেলে। চেয়ে থাকবেন, তাঁর কািট সার্থক হবে। তবে এখানে একটা কথা, সকলে কি সব জিনিস ভালবাসে ! যার চোখ যে জন্যে. তৈরী হয়ে গিয়েছে! সে জন্যে দোষ কাউকে দেওয়া যায় মা। বনানী ও পাহাড়পব্বতের দশ্য, মক্ত space-এর দশ্য যাঁর ভালো লাগে না-তাঁর সঙ্গে কি তা বলে ঝগড়া করতে হবে। তাঁর হয়তো যা ভালো লাগে, আমার তা ভালো লাগে না, সতরাং তিনিও তো আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারেন তা নিয়ে। মনোহরপর নােমলাম বেলা দশটার সময়। একটা কুলীকে জিজ্ঞেস করলাম—ডাকবাংলো কোথায় ? —পাহাড়ের ওপরে। কিন্তু সে ডাকবাংলো নয়, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাংলো । —সে আমি জানি, তুমি পথ দেখিয়ে দিতে পারো ? —সোজা পশ্চিম দিকে চলে যান। পাহাড়ের ওপরে উঠতে গিয়ে ডানদিকে দেখি বনবিভাগের আপিস। ভাবলাম, চিড়িয়া পাহাড়ে যাবার একমাত্র উপায় হলো রেল। সে রেলে চড়তে হলে খনিওয়ালাদের অনািমতি দরকার। বনবিভাগের কম্পমচারীরা সে বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন ভেবে আমি আপিসের দিকেই গেলাম। তা ছাড়া বনবিভাগের অনমতি ব্যতীত তো পাহাড়ের ওপরের বাংলোতেও থাকা যাবে না। আপিসে জিজ্ঞেস করে জানা গোল শ্ৰীযক্ত রাসবিহারী গঞ্জ বক্তমানে এখানের ভারপ্রাপ্ত কৰ্ম্মচারী। রাসবিহারীবাবকে আমি জানতাম। খবই, ১৯৪৩ সালে সারেন্ডা বন পরিভ্রমণের সময়ে তিনি আমার সঙগী ছিলেন। বল্লাম-রাসবিহারীবাব আছেন ? একজন আরন্দালী বল্লে-নয় বাবাজী। তিনি বনের কোনো কাজে বেরিয়েস্ক ềề