পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তো ঝামেলা মিটে যায়-সে লোকটা রাত্রে আবার পেট ভরে খেলে না খেলে তার জন্যে মাথাব্যথা করার কার কি গরজ ? জগতে নিঃসবাৰ্থ স্নেহ ও সেবা খাব বেশি দেখা যায় না বলেই অনেক বৎসর পকেবর সেই সন্ধ্যায়। সেই অজানা গহলক্ষীদের স্নেহের সমিতি আমার মন থেকে আজও মছে যায়নি। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পািল পার হয়ে আবার ট্ৰেন এসে থামলো ঘোড়াশাল সেন্টশনে। ঘোড়াশাল ঢাকা জেলায়-এখান থেকে কিছদরে নরসিংদি গ্রামের হাই-স্কুলে আমার এক বন্ধ হেডমাস্টার, অনেকদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি, বিদেশ-ভ্রমণের সময় পরিচিত বন্ধজনের দেখাসাক্ষাৎ বড় আনন্দদান করে, সেজন্যে ঠিক করেছিলাম ঢাকা যাবার পথে বন্ধটির ওখানে একবার যাবো। নরসিংদি বেশ বড় গ্রাম, তবে স্কুলের জায়গাটি কিছ দরে, গ্রামের বাইরে মাঠের মধ্যে স্কুল। আমি যখন গিয়ে সেখানে পৌছলাম--তখন বেলা প্রায় এগারোটা। একটি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করতে বললে, হেডমাস্টারবাব এখন ক্লাসে আছেন। ছেলেটিকে বললাম, আমি এখানে অপেক্ষা করচি, তুমি হেডমাস্টারবাবকে গিয়ে বল তাঁর একজন বন্ধ দেখা করতে এসেচে। কিছশক্ষণ পরে দেখি আমার বন্ধ ছেলেটির পিছৰ পিছ আসচেন। এ ভাবে এই দরে প্রবাসে আমাকে হঠাৎ দেখে তিনি খব খাশী। বললেন, তারপর, কোথা থেকে এলে হে ? আমি কি ভাবে ঘরতে ঘরতে এখানে এসে পড়েচি, তা সব খালে বললাম। বন্ধ বললেন—বেশ ভালো, ভালো। এখানে যখন এসে পড়েচ, কিছুদিন থাকে। কলকাতা থেকে এসে একেবারে হাঁপিয়ে পড়েচি হে—আজি দ্য বছর এই “গডফরসেক নিঃ জায়গায় যে কি কন্টে আছি তা আর কি বলবো! একটা লোকের মািখ দেখতে পাইনে —সন্দরবনে বাস করচো নাকি ? এত লোকের মধ্যে থেকেও লোকের মািখ দেখতে পাও না কি রকম ? অজ পাড়াগাঁয়ের স্কুল। পৰববঙ্গের একটি ক্ষদ্র গ্রাম-স্কুলের শিক্ষক যাঁরা সকলেরই বাড়ি এখানে, হেডমাস্টার আর হেডপণ্ডিত এই দজন মাত্র বিদেশী। আমার বন্ধ ছাত্রজীবনে পড়াশনোয় ভালো ছিলেন, খাব সমার্ট, ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড়, চেহারাও খাব সন্দির। এহেন সন্টাইলবাজ, সপরিষ, ইংরেজিতে উচ, সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া ছেলে মাত্র ষাট টাকা মাইনেতে এই সদর ঢাকা জেলার এক পাড়াগাঁয়ে এসে আজ তিন বছর পড়ে আছে! চাকুরির বাজার এমনি বটে ! এই সব কথা মনে মনে ভাবছিলাম। সারা পথ আসবার সময়ে। কিন্তু এখানে এসে মনে হল বন্ধটি যে জায়গায় আছে, আর কিছ না হোক, অন্তত প্রাকৃতিক দশ্য হিসেবে জায়গাটা ভালো। গ্রামের বাইরে দিগন্ত-বিস্তীর্ণ মাঠ মেঘনার তীর ছায়েচে, তারি মাঝে মাঝে ছোট ছোট বেতঝোপ, মাঝে মাঝে বনো শটির গাছ। এদিকে একটা ছোট খাল। সিকুলের বাড়িটি এই ছোট খালের ধারে, বড় বড় ঘাসের বনের আড়ালে। নিকটে O