পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—পনেরো টাকা-আর হেডমাস্টারবাব এসে আমায় দিয়ে স্কুলের খাতপত্র লেখার কাজ কিছ কিছ করিয়ে নিয়ে সঙ্কুল থেকে তিন টাকা মাসে দেওয়ান। বড় উচ, মন ওঁর। -বাড়িতে কে কে আছে। আপনার ? -বাবা মা, দই বোন, আর আমার স্ত্রী, আমার একটি ছোট ছেলে। -মাইনে তো খাব বেশি না। অন্য স্কুলে যান না কেন ? —কে দেবে বাবা ? আজকাল চাকরির বাজার যা, বি-এ পাস করে বেকার বসে আছে আর আমি তো মোটে নম্পমাল ত্রৈবাষিক পাস। আমাদের কি চাকরি। হঠাৎ জোটে বােব। -জমিজমা আছে বাড়িতে ? --সামান্য ধানজমি আছে, তাতে ছ-মাসের খোরাকী চালটা ঘরে আসে। বাকি ছ-মাস টানাটানি করে সংসার চলে। কি করবো বাব, যখন এর বেশি রোজগারের ক্ষমতা নেই-এতেই সন্তুষ্পট থাকতে হয়। নম্পমাল পাস করা একজন পন্ডিত আজ সাত বছর পনেরো টাকায় ঘষচে, কোনোখানে উন্নতির আশা নেই। শেয়ালদা সেন্টশনের একজন কুলিও মাসে অন্তত পনেরো টাকার দেড়গণ থেকে তিন-চারগণ রোজগার করে। এদের দিকে চাইলে কন্ট হয়, এরা আমাদের ছেলেপলেকে মানষ করে দেবার ভার নিয়েচে, পরম নিশিচন্তে সে ভার এদের ওপর চাপিয়ে আমরা বসে আছি। একথা কি কখনো ভাবি যে এরা কি খেয়ে আমাদের সন্তানদের মানষ করে দেবে ? হাওয়া খেয়ে তো মানষ বাঁচে না। আবার সকাল হতে না হতে এরা ফিরে এসে জটলো হেডমাস্টারের ঘরে। সকালের চা এরাই করে দিলে, বোঝা গেল। এ কাজ ওরা রোজই করে। আসবার সময় এরা আবার একটা কাঁচকলা ও গোটাকতক ডিম এনেছে। ওদের ওপরওয়ালা হেডমাস্টারকে খশী রাখবার জন্যে কত না আয়োজন ওদের। আমার বন্ধটি আগের মতো পড়ােশানো করেন না। এখানকার এই সব অন্ধশিক্ষিত লোকদের ওপর সন্দারি করে বেশ আনন্দেই দিন কাটাচ্চেন। ইনি এক সময় নিজেকে সচল এনসাইক্লোপিডিয়া করবার দরহে প্রচেষ্টায় অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন, বন্ধ বান্ধব মহলে বাজি রেখে পরের ভুল ধরে ছাত্রাবস্থায় BLBD D DBLDS একে জিজ্ঞেস করলাম-কি হে, এখানে পড়াশনো কি রকম কারচো ? --না ভাই, এখানে কিছর বই নেই, নিজেরও অত পয়সা নেই যে বই আনাই। —তা হলে কলেট আছো বলো ? --তা নয়, আমার মত বদলাচ্ছে ক্রমশ । —কি রকম, শনি ? —কতকগলো ইনফরমেশনের বোঝা মাথার মধ্যে চাপিয়ে নিয়ে আগে ভাবতুম খব বিদ্যে হয়েচে আমার। যাদের মাথার মধ্যে এসব থাকতো না, তাদের ভাবতুম মখ, কিছ জানে না।. এখন দেখচি জীবনে সব কিছ জানিবার প্রয়োজন নেইকয়েকটি বিষয় বেছে নিয়ে শােধ তাদের সম্পবন্ধে জানলেই সারা জীবন কেটে যেতে পারে। অন্য বিষয় সম্পবন্ধে কিছ জানিবার দরকার হয়-রেফারেন্সের বই খোলো, দেখ। মানষের মস্তিকের ওপর অনাবশ্যক বোঝা চাপিয়ে লাভ নেই। --সত্যিই তোমার অনেক বদলেচে দেখাচি