পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সতরাং মনে হল জায়গাটি নিতান্ত কাছে নয়। কাছাকাছি হলে এরা নিশ্চয়ই জানতো। তবে সামনের ওই পাহাড়শ্রেণীর মধ্যে ছাড়া আর গােহা কোথায় থাকতে পারে ? নিকটে আর কোথাও তেমন বড় পাহাড় নেই। স্টেশন থেকে একটা রাস্তা বেরিয়ে দরের পাহাড়ের দিকে চলেচে, আমরা দরজনে সেই পথেই চললাম। মাঝে মাঝে বিহারী পল্লীগ্রাম, খোলার ঘর, ফণিমনসার ঝোপ, মহিষের দল মাঠে চরচে, দড়ির চারপাই পেতে গ্রাম্য লোকেরা জটলা করচে ঘরের উঠোনে, অত্যন্ত ময়লা ছাপা-শাড়ি পরনে গহস্থ-বধরা ইদারা থেকে জল তুলচে। আবার ফাঁকা মাঠ, জনহীন পথ, মাঝে মাঝে গমের ক্ষেত। পাহাড়শ্রেণীর কাছে আসবার নামও নেই, সেন্টশন থেকে যতদর দেখাচ্ছিল এখনও ঠিক ততদরেই মনে <05छ । হেমেন বললে, পাহাড় বোধ হচ্চে অনেক দারে। —চলো, যখন বেরিয়েচি, যেতেই হবে। --সন্ধ্যার ট্রেনে ফিরতে হবে মনে আছে ? —যদি ট্রেন না ধরতে পারি, কোথাও থাকা যাবে। এই সব গ্রামে জায়গা মিলবেই একটা রাতের জন্যে। বেলা বেশ চড়েচে। একটা ইদারার পাড়ে আমরা দাঁড়ালম জল খাবার জন্যে। একটি মেয়ে আমাদের হাতে জল ঢেলে দিলে। আমরা তাকে পয়সা দিতে গেলাম, সে নিলে না। আরও একখানা গ্রাম ছাড়লাম। বিহার অঞ্চলের গ্রামে বা মাঠে কোথাও তেমন গাছপালা নেই। গ্রামের কাছে তালগাছ, দ-একটা আমবাগান আছে বটে। কিন্তু তার তলায় কোনো আগাছা নেই, শকিনো পাতা পৰ্যন্ত পড়ে নেই, এদেশে জবালানি কাঠের অভাব, মেয়েরা ঝুড়ি ভরে জবালানির জন্যে শকানো পাতা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের শ্যামল বনশোভা এখানে একান্ত দলভ। আছে। কেবল বিহারের সেই একঘেয়ে সীসমৰ গাছের সারি। পথের দাধারে কোথাও ছায়াতর নেই, খররৌদ্রে পথ হাঁটতে কেবলই তৃষ্ণা পায়। দনুজনে ঠিক করলাম বস্তির ইদারা থেকে জল পান করা স্বাস্থ্যসম্মত হবে না, এসব সময়ে বিহারের পল্লীতে কলেরা প্লেগ ইত্যাদির প্রাদাভােব ঘটে। সাবধান থাকাই ভালো। এবার পথের পাশে ছোট ছোট গাছপালা দেখা গেল। একটা কথা বলি, বাংলাদেশে যাকে ঝোপ” বলা হয়, সে ধরনের বাক্ষলতার নিবিড় সমাবেশ বিহারে ক্কচিৎ দেখা যায়, দক্ষিণ-বিহারে তো একেবারেই নেই, বরং উত্তর-বিহারের বড় নদীর ধারে বাংলাদেশের মতো ঝোপ অনেক দেখোঁচ। বাংলাদেশের ঝোপের একটা নিজস্ব সৌন্দয্য আছে, এমনটি আর কোথাও দেখিনি। আমাদের জেলায় আমি জানি এমন অদ্ভুত ধরনের সন্দর ঝোপ আছে, যার মধ্যকার নিবিড় ছায়ায় গ্রীল্ডেমর দিন সারাবেলা বসে কাটানো যায় নানা অলস স্বপেন। প্রধানত ঝোপ খাব ভালো হয় কেয়োকাঁকা ও ষাঁড়া গাছের। কেয়োঝাঁকা মোটা কাঠের গড়িযক্ত গাছ হলেও লতার মতো একেবেকে ওঠে ও বিস্তৃত হয়ে পড়ে, এর পাতাগালো মখমলের মতো নরম, মসণ শাঁসালো এবং অত্যন্ত সবজি। কেয়োঝাঁকার স্বভাবই ঝোপ সন্টি করা, যেখানে যে অবস্থাতেই থাকা জঙ্গলে—কারণ কেয়োঝাঁকা বনের গাছ, যত্ন করে বাড়িতে কেউ কখনো পোঁতে না-একেবেকে উঠে ঝোপ সন্টি করবেই। আর কি সে ঝোপের নিবিড়, শান্ত আশ্রয়! ষাঁড়া গাছও এ রকম ঝোপ তৈরি করে, কিন্তু সে আরও উচু ছাদওয়ালা বড় ঝোপের সন্টি করে ; ষাঁড়া গাছ C8