পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবারাত্ৰিয় কাব্য SVb তপস্যার অন্ধ-শক্তিতে পালে পলে হতাশাকে জয় করে চলে । তার কাছে হেরম্বকে প্ৰত্যেকটি মুহুৰ্ত্ত সাবধান হয়ে থাকতে হয়। ক্রমাগত সুপ্রিয়ার চিত্তকে ভিন্নাভিমুখী করার চেষ্টায় মাঝে মাঝে তার ভ্ৰান্তি জন্মে যায়, সুপ্রিয়ার প্ৰেমকে হত্যা করার বদলে সে বুঝি প্রশ্রয় দিয়েই চলেছে। হেরম্বের সব চেয়ে মুস্কিল হয়েছে এই যে, আনন্দের সংশ্রবে এসে তার মন এমন দুর্বল হয়ে উঠেছে কারো প্ৰতি কল্যাণকর নিষ্ঠুরতা দেখাবার শক্তি তার নেই। রূপাইকুড়ায় গভীর রাত্রে সুপ্রিয়া যেমন সোজাসুজি তার দাবী জানিয়েছিল, আজও যদি সে তেমনিভাবে স্পষ্টভাষায় তাকে প্রার্থনা করে, জীবন থেকে তাকে বরখাস্ত করে দেওয়া হেরম্বের পক্ষে হয়ত সহজ হয়। কিন্তু সুপ্রিয়া তাদের সেই ছ’মাসের চুক্তিকে আঁকড়ে ধরে আছে । এদিকে আজকাল কেবল নিজের এবং একান্ত নিজস্ব যে, তার সুখ-দুঃখের কথা ভাবার মত সঙ্গত স্বার্থপরতা হেরম্বের কাছে হয়ে উঠেছে লজ্জাকর। সুপ্রিয়া যদি দু’দণ্ড তার সঙ্গে কথা বলে শান্তি পায়, তার দীর্ঘকালব্যাপী জীবন-পাণ ভালবাসার কথা স্মরণ করে তাকে বঞ্চিত করার অধিকার নিজের আছে বলে হেরম্ব ভাবতে পারে না । এদিক দিয়ে বিচার করে হেরম্ব চিনতেও পারে না নিজেকে । সে ছিল কঠিন, মানুষের ছোট বড় সুখ-দুঃখের কোন মূল্য তার কাছে ছিল না, কারো হৃদয়কে সে কোনোদিন খাতির করে চলে নি। আজ শুধু কোমল হওয়া নয় গলিত বরফের মত সে তরল হয়ে গেছে, যে যেখানে তুষাৰ্ত্ত আছে তারই অঞ্জলিতে নিজেকে সে বিলিয়ে দিতে চায় । ঘরে বসে উদ্বেগ ও অশান্তিতে হেরম্ব কাতর হয়ে পড়ে। আবার তার পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় । জীবন যখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে গেছে