পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করবেন আপনারাই এবং একথা বলাই বাহুল্য যে, এই সাহায্য ছাড়া যদি আপনারা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে পারেন, তবে ভারতের পক্ষে, সেটাই হবে সর্ব্বোৎকৃষ্ট পন্থা। সেই সঙ্গে একথাও আমাকে বলতে হচ্ছে যে, সর্ব্বশক্তিমান বৃটিশ গবর্নমেণ্টই যদি ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে পৃথিবীর সর্ব্বত্র সাহায্য চেয়ে ঘুরতে পারে—পরাধীন ক্রীতদাসের অবস্থায় পর্য্যবসিত দারিদ্র্যে অভিভূত ভারতবাসীদের কাছে পর্য্যন্ত তারা যখন সাহায্য চায়—তা হলে অবস্থার চাপে আমরা যদি বাইরের সাহায্য নিই, সেটা নিশ্চয়ই দোষের হবে না।

 সময় সমুপস্থিত। দেশের স্বাধীনতা লাভের জন্যে আমরা কিরূপ উদ্যমে অবতীর্ণ হয়েছি সে বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে সমস্ত জগৎকে—এমন কি আমাদের বিরুদ্ধপক্ষকেও জানাতে পারি। ভারতের বাইরে যেসব ভারতবাসী আছেন, বিশেষ করে পূর্ব্ব-এশিয়ায় যাঁরা আছেন, তাঁরা একটি সেনাদল গঠনে প্রবৃত্ত হয়েছেন। এই সেনাদল ভারতে অবস্থিত বৃটিশ-বাহিনীকে আক্রমণ করার মতো শক্তিশালী হবে। যখন আমরা আক্রমণ করব, তখন বিদ্রোহের সূত্রপাত হবে। সে বিদ্রোহ শুধু ভারতের অসামরিক জনগণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বৃটিশ-পতাকার তলে যারা এখন সংগ্রাম করছে সেই ভারতীয় সেনাদের মধ্যেও এই বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে পড়বে। বৃটিশ গবর্নমেণ্ট তখন ভারতের ভিতর এবং বাহির দু-দিক থেকেই আক্রান্ত হবে। ফলে সে গবর্নমেণ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং তখন ভারতবাসীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাবে। সুতরাং আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে ভারতের সম্বন্ধে অক্ষশক্তিবর্গের মতিগতি কিরূপ তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হয় না। ভারতবাসী যদি ভারতের বাইরে থেকে এবং ভিতর থেকে তাদের কর্ত্তব্য পালন করে, তবে তারাই বৃটিশদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দিয়ে আটত্রিশ কোটি স্বদেশবাসীকে স্বাধীন করতে পারে।

১১