পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিখরা—কেউই টিপু সুলতানের উদ্ধারের জন্য অগ্রসর হয়নি। এমন কি বাংলার পতনের পরেও দক্ষিণ-ভারতের টিপুসুলতান, মধ্য-ভারতের মারাঠাগণ ও উত্তর-ভারতের শিখরা সম্মিলিত হলে বৃটিশকে বিতাড়িত করা সম্ভব হত। আমাদের দুর্ভাগ্য, তা করা হয় নি। সুতরাং ভারতের এক এক অংশে এক একবার আক্রমণ করা এবং ক্রমান্বয়ে সমগ্র দেশে বৃটিশের প্রভুত্ব বিস্তার করা সম্ভবপর হয়েছিল। ভারতীয় ইতিহাসের এই বেদনাময় অধ্যায় থেকে আমরা শিক্ষালাভ করেছি যে, যদি শত্রুর সম্মুখে ভারতবাসীরা সম্মিলিতভাবে দণ্ডায়মান না হয়, তবে তারা কখনও স্বাধীনতা অর্জ্জন করতে পারবে না; স্বাধীনতা অর্জ্জন করলেও তারা তা রক্ষা করতে পারবে না।

 ভারতীয় জনগণের চোখ ফুটতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। শেষ পর্য্যন্ত, ১৮৫৭ অব্দে ভারতের নানা অংশে তারা একযোগে বৃটিশকে আক্রমণ করল। সংগ্রাম আরম্ভের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজ অনায়াসে পরাজিত হল। এই সংগ্রামকে ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা “সিপাহী বিদ্রোহ” নামে অভিহিত করে; কিন্তু আমরা একে “প্রথম স্বাধীনতা-সংগ্রাম” বলে থাকি। দু’টি কারণে শেষ পর্য্যন্ত আমাদের পরাজয় ঘটে। ভারতের সমস্ত অংশ এই সংগ্রামে যোগদান করেনি, আর তা ছাড়া আমাদের সৈন্যাধ্যক্ষদের সামরিক দক্ষতা শত্রুর সেনাবাহিনীর অধিনায়কদের চেয়ে নিকৃষ্ট ছিল।

 জালিয়ানওয়ালাবাগের শোচনীয় ঘটনার পর ভারতের জনগণ সাময়িকভাবে হতবুদ্ধি ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ল। স্বাধীনতা-অর্জ্জনের সমস্ত চেষ্টা ইংরেজ তার সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্যে নির্ম্মমভাবে চূর্ণ করেছে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন, বৃটিশ পণ্য-বর্জ্জন, সশস্ত্র বিপ্লব—এর কোনটির দ্বারাই স্বাধীনতা-অর্জ্জন সম্ভবপর হয়নি। আশার আর একটি আলোক-রশ্মিও অবশিষ্ট ছিল না। হৃদয়ে অবরুদ্ধ রোষ প্রজ্বলিত থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় জনগণ নূতন পদ্ধতি—স্বাধীনতা-সংগ্রামের

১৬