পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই যে, বিপক্ষীয়েরা সকল রণাঙ্গণে পূর্ণব্যস্ত এবং তার ফলে আমরা ভারতীয় জনসাধারণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। মাঝে মাঝে আমাকে এমন সব প্রশ্ন করা হয়, যে আমি হাসি রোধ করতে পারিনে। যেমন ধরুন, সেদিন আমায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, রোম অধিকৃত হওয়ায় আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ভারতের যুদ্ধের উপর এর কিছু মাত্র প্রভাব নেই। বিপক্ষীয়েরা এমন গভীরভাবে ব্যস্ত যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ভারতে যে সব সাহায্য প্রেরণ করা হত সে সব সাহায্য সে ইউরোপের বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই অক্ষশক্তিরা কোন কোন রণাঙ্গণে পরাজয় স্বীকার করলেও, অদের দিক থেকে অন্ততঃ তাতে বিশ্বপরিস্থিতির অদল বদল হয় না। সেদিন আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—শত্রুরা শেরবুর্গ দখল করায় আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমি ঐ একই উত্তর দিয়েছিলাম। আমাদের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, ভারতে আমাদের বিরুদ্ধে যে সব ইঙ্গ-মার্কিণ সৈন্য নিয়োজিত হত, তারা এখন ইউরোপে যুদ্ধ করছে, এবং তারা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। আমি জার্ম্মাণশক্তি বেশ ভাল ভাবে জানি এবং আমার পূর্ণ বিশ্বাস, ইঙ্গ-মার্কিণরা ইউরোপ থেকে বিতাড়িত হবে। ব্যর্থ ইউরোপীয় অভিযানে ইঙ্গ-মার্কিণদের ভয়ঙ্কর ক্ষতি সহ্য করতে হবে।

 আমাদের আশাবাদিতার বৃদ্ধির পক্ষে আর একটি কারণও আছে—সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থা। এ পর্য্যন্ত কংগ্রেস ও বৃটিশ গবর্নমেটের মধ্যে কোন আপোষ রফা হয় নি। কিছুকাল পূর্ব্বে সহসা মহাত্মা গান্ধীকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন অনেকে জল্পনা করছিল— একি নিছক গান্ধীজির ভগ্নস্বাস্থ্যের দরুণ, না এ মুক্তি আপোষের ভূমিকা বিশেষ। এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, অসুস্থতার জন্যই মহাত্মা গান্ধীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে—এর পিছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। যতদিন

৪১