পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উদ্দেশ্য ছিল। তাই ফরাসী জনগণ ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের মনে উচ্চশ্রেণীর নৈতিক প্রেরণাও ছিল—যাকে বলা চলে “করব—নয় তো মরব”-মনোবৃত্তি। পক্ষান্তরে জার্ম্মান বাহিনী সুশিক্ষিত, সুসজ্জিত এবং কর্ম্মনিপুণ যন্ত্রের মতো হলেও তাদের মধ্যে অভাব ছিল ফরাসীবাহিনীসুলভ নৈতিক প্রেরণার। মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীর সর্ব্বাধিনায়ক মার্শাল-দলের স্মৃতিকথা পড়লেই এ সত্য বোঝা যায়। অপর কারণ ছিল, জার্ম্মানীর আভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে দুর্ব্বলতা; তারই ফলে জার্ম্মানী দীর্ঘ অবরোধ সইতে পারেনি। বর্ত্তমান যুদ্ধে কিন্তু অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। জার্ম্মানীর যা ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ ও দাবী, জার্ম্মানী তারই জন্যে যুদ্ধ করছে। যুদ্ধারম্ভের পূর্ব্বে সমস্ত জাতিকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যেকের মনে এ ধারণা দৃঢ়মূল করে দেয়া হয়েছিল যে, এ যুদ্ধে পরাজয়ের অর্থ জার্ম্মান জনগণের সামগ্রিক বিনাশ। কাজেই বিগত যুদ্ধে মিত্রপক্ষের—বিশেষ করে ফ্রান্সের যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রেরণা ছিল, বর্ত্তমান যুদ্ধে তা পাচ্ছে জার্ম্মানরা। তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি সম্বন্ধে বলতে হয়, বিগত যুদ্ধে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে জার্ম্মানী চতুর্বার্ষিক পরিকল্পনার সাহায্য তার সমরায়োজনের জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। তা ছাড়া, রাশিয়া ব্যতীত সমগ্র ইউরোপ দখল ও নিয়ন্ত্রণ করে জার্ম্মানী যুদ্ধকালেই তার অর্থনৈতিক অবস্থা দৃঢ়তর করেছে। ফলে বর্ত্তমানে সে দীর্ঘ যুদ্ধের এবং দীর্ঘস্থায়ী সামুদ্রিক অবরোধের ক্লেশ সহ্য করতে পারবে।

 বিগত যুদ্ধে ফরাসী এবং ইটালীয় জাতি জার্ম্মানীর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ফ্রান্স সম্বন্ধে বলা যায়, এই দেশটি খুব শক্তিশালী ছিল এবং সমগ্র যুদ্ধে নির্ভীক রণনৈপুণ্য দেখিয়েছিল। ফ্রান্স এবং ইটালী সহ ইউরোপের একটা বৃহৎ অঞ্চল ছিল জার্ম্মানীর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আজ পরিস্থিতি কত ভিন্ন! কার্যতঃ রাশিয়া ছাড়া সমগ্র

৭১